• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

চীনের বাজারে শতভাগ শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা চায় বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৩২, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
চীনের বাজারে শতভাগ শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা চায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্প্রসারণে চীনের সহায়তা চেয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চীনের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি বুঝতে পেরেছিলেন এবং দ্রুত বর্ধনশীল দেশের সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশ চীনের বাজারে ৯৯ শতাংশ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা উপভোগ করছে। তবে এই সুবিধা শতভাগ করা দরকার। আমাদের দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) প্রয়োজন। বাংলাদেশ চায় চীন থেকে আরও বেশি প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ আসুক। এজন্য ইতোমধ্যে আমরা চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য ডেডিকেটেড বিশেষ অর্থনৈতিক জোন তৈরি করেছি।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘চায়না-বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজেস কো-অপারেশন ফোরাম ২০২২’ শীর্ষক বিজনেস নেটওয়ার্কিং প্রোগ্রামে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) এবং চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিইএবি)-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট গাজী গোলাম মুরতজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, চীনে নিযুক্ত সদ্য বিদায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান, সিইএবি সভাপতি কে চাংলিয়ান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিসিসিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল আল মামুন মৃধা।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকে চীনের প্রবৃদ্ধি অনুসরণ করতে হবে। চীন বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করছে, বিশেষ করে অবকাঠামো নির্মাণ, দেশের অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনার বিষয়ে উল্লেখ করে শামসুল চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সফর, সাংস্কৃতিক সফর, জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার করার আহ্বান জানান।’
 
চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, ‘চীন-বাংলাদেশ দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক শক্তিশালী, পরিপূরক এবং ক্রমবর্ধমান। আমাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক সুবিশাল এবং মজবুত। গত শতাব্দীর ৭০-এর দশকের মাঝামাঝি চীন ও বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে দুই পক্ষ কৃষি, বাণিজ্য, সামুদ্রিক বিষয়, জলবায়ু পরিবর্তন, অবকাঠামো, নগর ব্যবস্থাপনা এবং দারিদ্র্যের মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য ব্যাপক সাফল্য অর্জন করছে। 

বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে, চীন ১৪৯টি দেশ এবং ৩২টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে ২০০টিরও বেশি সহযোগিতার নথিতে স্বাক্ষর করেছে। এই বছরের প্রথমার্ধে, বিআরআই-এর সঙ্গে জড়িত দেশগুলির সঙ্গে চীনের পণ্যের বাণিজ্য মোট ১১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন এবং এই দেশগুলিতে এর অ-আর্থিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ১৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। 

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সম্পদ বৃদ্ধি এবং জনগণের জীবন-জীবিকা সহজ করা বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য। সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বস্ত বন্ধুদের একজন হিসেবে, চীন অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উপায়ে বাংলাদেশকে ক্রমাগত সমর্থন করে, যার মধ্যে রয়েছে রেয়াতি ঋণ, বিনিয়োগ সহযোগিতা, প্রকল্প চুক্তি এবং চীন-সহায়তা প্রকল্প।  

বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আরও চীনা বাজারমুখী বিনিয়োগ প্রয়োজন। রফতানি বাড়াতে চীনের বাজারে যা প্রয়োজন তা বাংলাদেশকে উৎপাদন করতে হবে বলেও মনে করেনি লি জিমিং। প্রথম শিল্প পার্ক হিসাবে, শীঘ্রই চট্টগ্রামে নির্মিত হবে, চীনা অর্থনৈতিক জোন, যা যুগান্তকারী তাৎপর্যপূর্ণ বলে জানান তিনি।

গাজী গোলাম মুরতজা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিশ্বব্যাপী মহামারীর কারণে, মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। যেহেতু বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে গড়ে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বার্ষিক বাস্কেট বাণিজ্য হয়। শুধুমাত্র মার্কিন ডলারের উপর নির্ভরশীলতা বাংলাদেশ ও চীন উভয়ের জন্যই বিপজ্জনক ক্ষতিকর।

বিসিসিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল আল মামুন মৃধা বলেন, ‘বিসিসিসিআই বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রচার এবং সুবিধার্থে অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে।’ 

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিগত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে চীনে পণ্য রফতানি হয়েছে ৬৮০ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেখানে ওই বছর আমদানি হয়েছে প্রায় ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য।

বক্তারা বলেন, এ বিশাল বাণিজ্য ব্যবধান কমিয়ে আনার জন্য আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। চায়না আমাদের প্রায় ৯৮ ভাগ পণ্য রফতানির উপর শুল্ক মুক্ত সুবিধা প্রদান করছে। বাংলাদেশ আগামী ২০২৬ সাল থেকে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করছে। চীন আরও তিন বছর বাড়িয়ে আগামী ২০২৯ সাল পর্যন্ত এ বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখবে বলে আশা বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের।

চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও বেসরকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে বাংলাদেশের সরবরাহকারীসহ সকল স্টেক হোল্ডারকে একত্রিত করা উক্ত আয়োজনের প্রধান লক্ষ্য বলে জানান আয়োজকরা। 
 

বিভি/এমএ/এইচএস

মন্তব্য করুন: