• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

‘মিনিকেট ধান’ নিয়ে যা বলছে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট 

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৩৭, ৬ অক্টোবর ২০২২

আপডেট: ১৭:৪৩, ৬ অক্টোবর ২০২২

ফন্ট সাইজ
‘মিনিকেট ধান’ নিয়ে যা বলছে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট 

মোটা চালকে মেশিনের সাহায্যে ছেঁটে পলিশ করে বাজারে ছাড়া হয় চিকন চাল হিসেবে, যার নাম দেওয়া হয়েছে মিনিকেট। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আইনগত নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিনিকেট নামে ধানের জাত থেকেই বাংলাদেশে মিনিকেট চাল উৎপাদিত হচ্ছে। এখানে কৃত্রিমতা নাই। মিনিকেট চাল বিক্রির অভিযোগে ব্যবসায়ীদের শাস্তি দেওয়া হবে অন্যায়। 

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলাভিশনকে বলেন, ‘মিনিকেট নামে কোনো ধান নেই। তাই চাল থাকার প্রশ্নই উঠে না।’ মোটা চালকে চিকন করে বেশি দামে বিক্রি করা ক্রেতাদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা। এর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজারে মিনিকেট নামে কোনও চাল বিক্রি করা যাবে না। বস্তায় লিখতে হবে ধানের জাত। 

গত ৫ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গাজীপুরের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করছেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘মিনিকেট’ নামে কোনও চাল বিক্রি করা যাবে না। মিলে থেকে চাল বস্তাজাত করার সময় বস্তার ওপরে ধানের জাতের নাম লিখে দিতে হবে। এর ব্যতিক্রম করলেই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, মিনিকেট নামে ভারতীয় ধানের জাত থেকেই বাংলাদেশে মিনিকেট চাল উৎপাদিত হচ্ছে। এখানে কৃত্রিমতা নাই। মেশিনে চাল ভেঙে চিকন করা যায় না। কাজেই অভিযোগ ভিত্তিহীন। মিনিকেট চাল বিক্রির অভিযোগে ব্যবসায়ীদের শাস্তি দেওয়া হবে অন্যায়। তাদের দাবি, যে মেশিনে মোটা চাল চিকন করে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে সেই মেশিনটি কোথায় কোথায় আছে? কারা বসিয়েছেন? সরকার নিশ্চয়ই তা জানে। কেন সেই মেশিনগুলো জব্দ করা হচ্ছে না? আর যারা মেশিন বসিয়েছেন তাদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না? 

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহম্মদ শফিকুজ্জামান বলেছেন, ‘জনবলের অভাবে এটি করা যাচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতে পাইকারি ও খুচরা বাজারেও মিনিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’ এখন যেকোনো ধরণের চাল বিক্রি করতে লিখতে হবে ধানের জাত। 

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর মিনিকেট চাল বিক্রির অভিযোগে বিভিন্ন সুপার শপে অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করছে। কিন্তু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাইকারি ও খুচরা বাজারে হাজার হাজার বস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হলেও সেখানে অভিযান পরিচালনা করছে না।

খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে মিনিকেট ও নাজিরশাইল বলে কোনও ধান নেই। তাই এসব নামে চাল বিক্রি অবৈধ। কেবল বাংলাদেশেই নয়, ভারতসহ উপমহাদেশের কোথাও মিনিকেট নামে কোনও ধানের জাত নেই। অর্থাৎ যে জাতের ধানটি বিপুল পরিমাণে চাষ হচ্ছে তা মূলত ভারতীয় শতাব্দী জাত। কিছু ক্ষেত্রে জিরাশাইল ধানকেও মিনিকেট হিসেবে ডাকা হয়। মিনিকেট, নাজিরশাইল, কাজললতা চাল আছে কিন্তু ধান নেই।

জানা গেছে, নব্বইয়ের দশকে ভারত থেকে অবৈধভাবে ‘মিনিকেট’ নামের ধানের বীজের আগমন ঘটে বাংলাদেশে। এখন পাঞ্জাব থেকেও এই ধানের বীজ কৃষকরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে সংগ্রহ করছেন। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকেও নানা জাতের ‘মিনিকেট’ আসছে। আর এর ধাক্কায় দেশি ধানবীজ হেরে যাচ্ছে।

যশোর অঞ্চলে মিনিকেট’ নামের ধানের ছড়াছড়ি দেখা যায়। ‘ন্যাড়া মিনিকেট’, ‘জিরা মিনিকেট’, ‘সুপার মিনিকেট’, ‘পাঞ্জাব মিনিকেট’, ‘বাসমতি মিনিকেট’ নামেও ধানের জাত আছে এই এলাকায়। যশোর অঞ্চলের মাঠজুড়ে ‘মিনিকেটেরই’ ছড়াছড়ি। বোরো মৌসুমে শুধু যশোর নয়, বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার কৃষকরাও ঝাঁপিয়ে পড়ে এই ধানের চাষ করেছে। 

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এবং খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানিয়েছেন, ভালো ফলনের আশায় কৃষকরা অনুমোদনহীন ভারতীয় এই ধানের চাষ করছে। কিন্তু এই ‘মিনিকেট’ ধানের কোনও বৈধ অনুমোদন নেই। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, চলতি বছরে যশোর সদর উপজেলায় ২৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। কিন্তু এরমধ্যে ‘মিনিকেট’ নামধারী ধানেরই চাষ হয়েছে ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। বাকি জমিতে দেশি জাতের ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সুবর্ণলতা, বিআর-২৮ ও বিআর-৬৩ অন্যতম।

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2