ডলার সংকটে রোজার পণ্য আমদানি ব্যাহতের শঙ্কা
 
								
													রোজা শুরু হতে দুই মাসের কম সময় বাকি। প্রতিবছরই রোজায় ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, খেজুর ও পেঁয়াজে চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। পণ্যগুলোর বেশিরভাগই আমদানি নির্ভর হওয়ায় ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা ঋণপত্র বা এলসি খুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন।
তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে চাচ্ছে না। এতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিদেশি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না। সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে রোজার পণ্য আমদানির চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডলার সংস্থান রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকে ব্যবসায়ীদের প্রয়োজন অনুযায়ী এলসি খোলার নির্দেশনা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
রোজায়ে ভোজ্যতেল চিনিসহ নিত্যপণ্য আমদানির জন্য ডলারের সংস্থান রাখার এবং এলসি খোলার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দেয়। কিন্তু মাঠপর্যায়ে অনেক ব্যাংক ডলার সংকট দেখিয়ে এলসি খুলতে অনীহা প্রকাশ করে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা কয়েক দফা বাণিজ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি ও রোজার এক মাসের চাহিদা অনুযায়ী ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মসুর ডাল, পেঁয়াজ ও খেজুর আমদানিতে সম্ভাব্য ১৫৩ কোটি মার্কিন ডলারের প্রয়োজন হবে। আর শুধু রোজার এক মাসের চাহিদা পূরণে এসব পণ্য আমদানিতে প্রয়োজন ৫৬ কোটি মার্কিন ডলার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপনকান্তি ঘোষ জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বছরে যে ডলার ব্যয় হয় তার ১০ থেকে ২০ শতাংশ রমজানের পণ্য আমদানির চাহিদা পূরণে আলাদাভাবে রাখতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে কত শতাংশ ডলার রাখবে, সেটি নির্ধারণ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ এখানে অনেক হিসাবনিকাশের বিষয় রয়েছে। তিনি আরও বলেন, সাধারণ নিত্যপণ্য, মেশিনারিজসহ অনেক কিছু বিদেশ থেকে আনা হয়। গত কয়েক বছর নিত্যপণ্য আমদানিতে এলসি খোলা এবং বিপরীতে ডলার ব্যয়ের গড় হিসাব বের করে দেখতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ রোজার জন্য বেশি ডলার সংস্থান রাখা হলে সেটি আবার অন্যদিকে ঘাটতি পড়তে পরে।
আগামী মার্চের শেষ সপ্তাহ রোজা শুরু হচ্ছে। ডিসেম্বর থেকেই শুরু হয়েছে রমজানকেন্দ্রিক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির এলসি খোলা। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার অপ্রতুলতার কারণে নিত্যপণ্য আমদানি বিল পরিশোধ বিলম্ব ও এলসি খোলা জটিলতা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) অপরিশোধিত চিনির ঋণপত্র খোলার পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে ২৮ শতাংশ কমেছে। এছাড়া অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের ৪৭ শতাংশ, সয়াবিন বীজ ৮৩ শতাংশ, অপরিশোধিত পাম তেল ৯৯ শতাংশ, ছোলা ৪৭ শতাংশ ও খেজুর আমদানির ঋণপত্র খোলা কমেছে ৩০ শতাংশ।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার এনে আমদানিকারকদের দিচ্ছে। আমদানিকারকরা ১০৭ টাকা মূল্য দিয়েও ডলার পাচ্ছেন না। ফলে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কও খারাপ হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অতিপ্রয়োজনীয় ৬টি নিত্যপণ্য আমদানির জন্য যে পরিমাণ ডলারের প্রয়োজন, তা আলাদাভাবে রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে।
চলতি জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৭ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল, ৬ লাখ মেট্রিক টন চিনি, ২ লাখ মেট্রিক টন মসুর ডাল, ৬ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ, ১ লাখ মেট্রিক টন ছোলা ও ৭৫ হাজার টন খেজুর আমদানি করতে হবে। আর এসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ব্যয় হবে ১৩৮ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ভোজ্যতেল আমদানিতে সম্ভাব্য ডলার প্রয়োজন ৭৭ কোটি মার্কিন ডলার। বর্তমান বিশ্ববাজারে এক মেট্রিক টন সয়াবিনের মূল্য ১ হাজার ২১৭ মার্কিন ডলার এবং পাম অয়েল ৯৮০ ডলার। যেহেতু দেশে সয়াবিন ও পাম উভয় ধরনের ভোজ্যতেল আমদানি হয়, সে হিসাবে ভোজ্যতেল আমদানির গড় মূল্য ধরা হয় প্রতি টন ১ হাজার ৯৯ ডলার। একইভাবে চিনিতে ২৭ কোটি, মসুর ডালে ১০ কোটি, পেঁয়াজে ১২ কোটি, ছোলায় ৭ কোটি এবং খেজুর আমদানিতে প্রয়োজন ৫ কোটি মার্কিন ডলার। শুধুমাত্র রোজার মাসের জন্য প্রয়োজন হয় ভোজ্যতেল ৩ লাখ, চিনি ৩ লাখ, পেঁয়াজ ৪ লাখ, মসুর ডাল ১ লাখ, ছোলা ১ লাখ এবং খেজুর ৫০ হাজার মেট্রিক টন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জবাবে বলছে, শিশুখাদ্য, নিত্যপণ্য, ওষুধ ও সরঞ্জাম এবং চিকিৎসা কাজে ব্যবহার সরঞ্জামে এলসি খোলার ক্ষেত্রে কোনো মার্জিন আরোপ করা হয়নি। পাশাপাশি এলসি খুলতে নিরুৎসাহিত করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নিত্যপণ্য আমদানি যাতে ব্যাহত না হয়, সেটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোজার এক সপ্তাহ আগে বাজারে পণ্য সরবরাহ করতে হলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই এলসি খোলা জরুরি। কারণ এলসি খোলার পরও বিভিন্ন পণ্য দেশে আসতে ১৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগে। পাম তেল আমদানির পর বাজারজাত করতে প্রায় ২০ দিন এবং ক্রুড সয়াবিন তেল পরিশোধন করে বাজারজাত করতে ৪৫ থেকে ৬০ দিন সময় লাগে। অপরিশোধিত চিনি আমদানির পর পরিশোধন শেষে বাজারজাত করতেও প্রায় দুই মাস সময় লাগে।
বিভি/এইচএস
 
						





 
							
							 
						 
 
										 
							 
							 
							 
							 
							 
							 
							 
							 
							 
							
 
											 
											 
											 
											
মন্তব্য করুন: