• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

‘জুলাই আন্দোলনের শহীদ পরিবারের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে’

মো. ওবায়দুল্লাহ, ঢাকা কলেজ 

প্রকাশিত: ২১:২৮, ১৩ মে ২০২৫

ফন্ট সাইজ
‘জুলাই আন্দোলনের শহীদ পরিবারের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে’

ছবি: জাহিদুল ইসলাম

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, জুলাই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি এবং শহীদ পরিবারের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। 

মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকালে ঢাকা কলেজ কেন্দ্রীয় মাঠে ঐতিহাসিক কুরআন দিবস উপলক্ষ্যে কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের ‘অর্থসহ কুরআন উপহার’ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্টে যারা জীবন দিলেন, শহীদ হলেন এই জুলাই স্পিরিটের মূল তত্ত্বই হল কোনো বৈষম্য থাকবে না,কোনো জুলুম থাকবে না, কোনো অন্যায় থাকবে না, কেউ কারো উপরে কোনোকিছু জোর করে চাপিয়ে দিতে পারবে না সবাই মুক্তভাবে তার চিন্তার স্বাধীনতা, আদর্শের স্বাধীনতা সব কিছুর ভোগ করার সুযোগ থাকবে। কিন্তু আমরা দেখেছি ৫ আগস্ট গণঅভ্যুথানের পরও ফ্যাসিবাদের শিকড় গুলো এ জমিনে রয়ে গেছে। তারা বিভিন্ন ভাবে আবার ফ্যাসিবাদকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা ছাত্রসমাজের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, জুলাইয়ে যারা জীবন দিয়েছে তাদের প্রতি এবং শহীদ পরিবারের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমরা সেটার জন্যই চেষ্টা করবো।

তিনি আরও বলেন, ট্যাগিং রাজনীতি বাদ দিয়ে আদর্শিক লড়াইয়ে আসুন, সিদ্ধান্ত ছাত্রসমাজ নেবে। যখন আমাদের সাথে আদর্শিকভাবে লড়াই করতে ব্যর্থ হয় তখন আমাদের নামে গুজব ছড়ানো হয়। আমরা তো বলেছি আসুন আমাদের সাথে আদর্শিক প্রতিযোগিতা হোক। কিন্তু তা না এসে সেই অতীত ইতিহাস আমাদেরকে ‘রাজাকার’ ট্যাগিং যেটা দিয়ে আবু লাহাব,আবু জেহেলরা ধ্বংস হয়েছিলো, যেটা দিয়ে ৫ আগস্টে শেখ হাসিনার পতন যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্বৈরাচার সে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে, এখনও পর্যন্ত এ প্রজন্মের যারা আমাদেরকে আদর্শিক জায়গা থেকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা ঠিক আগের ধারার রাজনীতি আবার শুরু করছে। আমরা বিনয়ের সাথে বলতে চাই, পৃথিবী কারো জন্য চিরস্থায়ী নয়। একদিন সবাইকে চলে যেতে হবে সব মিথ্যার জবাব একদিন আখিরাতে দিতে হবে।

ভারতের মুসলিম নিধন ও হত্যার বিষয় উল্লেখ করে জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বয়ান আমাদের কাছে হাজির করে। অথচ ব্রিটিশ ইতিহাস থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত তারা বারবার মুসলিম বিদ্বেষ এবং কুরআন বিদ্বেষের নজির স্থাপন করে আসছে। ব্রিটিশ আমলে তারা জমিদারি প্রথার নামে এই ভূখণ্ডের মুসলিম কৃষকদের উপর শোষণ নিপীড়ন চালিয়েছে। আমরা দেখেছি করনাটকে হিজাবের উপর তারা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বিভিন্ন সময়ে গুজরাটসহ অনেকগুলো প্রদেশে মুসলিম এবং হিন্দুদের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দাঙ্গা বাঁধিয়ে মুসলিম নিধন ও মুসলমানদের হত্যা করে আসছে। তারা বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির তৈরি করেছে। সর্বশেষ তারা মুসলিম শরীয়ার অয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইন পাশ করেছে। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র কুরআন এবং ইসলামের বিরুদ্ধে বারবার অবস্থান নিয়ে বিদ্বেষ ছড়িয়ে এই ভূখণ্ডে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করেছে। বাংলাদেশের সকল ধর্ম, বর্ণ ও গোষ্ঠীর মধ্যে অসাধারণ সম্প্রীতি বিরাজমান। এই সম্প্রীতিকে তারা বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দাঙ্গা বাধানোর ষড়যন্ত্র করছে। আদম (আ.) থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যারাই কুরআন এবং ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তাদের ভয়াবহ পরিণতি হয়েছে।

কুরআনের আলোকে জীবন গড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি যে মানুষগুলো জাহিলিয়াতের যুগে ধর্ষণ,চুরি ছিনতায়সহ বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত ছিলো তারা কুরআনের ছোঁয়াতে আসার পরে নারীর দিকে তাকানোর সময়েও আল্লাহর বিধি বিধান মেনে চলত এবং সমাজের উতকৃষ্ট মানুষে পরিণত হয়। আমরা যদি সমাজ রাষ্ট্র ও আল্লাহর জমিনে জুলুম ও নির্যাতনের মুলচ্ছেদ করতে চাই তাহলে কুরআনের আলোকে আমাদের জীবন, পরিবার ও সমাজ পরিচালনা করে পারি তাহলেই এই সমাজে ভালো পরিবর্তন সম্ভব। 

তিনি আরও বলেন, আজ পৃথিবীতে যারা শান্তি এবং মানবতা প্রতিষ্ঠার কথা বলেন, তারাই সবচেয়ে বেশি মানবতা বিরোধী কাজ করে থাকে। আজ তাদের চক্রান্তের কারনেই পৃথিবীতে এতো অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ইসরাইল ফিলিস্তিনে নারী শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করছে। হাসপাতালেও তারা হামলা করছে। যখন ফিলিস্তিনিরা হামলার প্রতিক্রিয়া দেখায়, তখন পশ্চিমারা তাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়া হয়। সেই পশ্চিমারাই আজ আমাদের মানবতা শেখায়। 

ঐতিহাসিক কুরআন দিবসের ইতিহাস তুলে ধরে শিবির সভাপতি বলেন, ১৯৮৫ সালের ১০ এপ্রিল কুরআনকে বাজেয়াপ্ত করার জন্য ভারতে একটি রিট করা হয়েছিলো। সূরা বাকারার ১৯১ ও তাওবার ৩১ নম্বর আয়াতকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হিসেবে আখ্যায়িত করে ভারতের আদালতে রিট দায়ের করা হয়েছিলো। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত সহ সারা পৃথিবীতে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৫ সালের ১০ মে বায়তুল মোকাররমে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিলের আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন স্বৈরাশাসক এরশাদ, তাওহীদি জনতা কুরআন প্রেমিকদের উপর তার পুলিশ বাহিনী হামলা করে। সেই ধারাবাহিকতায় ১১ই মে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঈদগাহ মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছিলো। দুঃখজনকভাবে সেখানে পুলিশ সুপার আওলাদ হোসেন ও ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লার নেতৃত্বে ১১ই মে কুরআন প্রেমি জনতার উপর গুলি বর্ষণ করা হয়েছিলো। সে হামলায় ঘটনাস্থলে সাধারণ শিক্ষার্থী ও শ্রমিক সহ ৮ থেকে ১০ জন শাহাদাত বরণ করেন। মূলত সেই ১১ই মে ঘটনাকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঐতিহাসিক কোরআন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

উল্লেখ্য, অর্থসহ কুরআন উপহার কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মুফাসসির ও ইসলামিক চিন্তাবিদ শায়েখ জামাল উদ্দিন। এসময় ঢাকা কলেজ শিবিরের সভাপতি মোস্তাকিম আহমেদের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি আবদুর রহমান আফনানের সঞ্চালনায় পাঁচশত শিক্ষার্থীর হাতে কুরআন তুলে দেওয়া হয়। 


 

মন্তব্য করুন: