বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: ১০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ১১টি বাস!

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বাসের চরম সংকট।
চরম বাস সংকটে ভুগছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন শহর ও আশপাশের এলাকা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের যাতায়াত হয়ে উঠেছে ভীষণ দুর্বিষহ। বাসে জায়গা না পেয়ে অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরজায় ঝুলে বা গাদাগাদি করে ক্যাম্পাসে পৌঁছাচ্ছেন।
২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৫টি বিভাগে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছেন। তবে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য পরিবহন সেবার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২২ সালের মধ্যে মোট ৩৫টি গাড়ি কেনার কথা ছিল উন্নয়ন পরিকল্পনায়। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে গাড়ি সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২২টি। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য নির্ধারিত বাস রয়েছে মাত্র ১১টি বাস।
এই ১১টি বাসের মধ্যে নতুন বাজার ও বরিশাল ক্লাব রুটে ৪টি এবং ৭টি বাস চলাচল করে নথুল্লাবাদ রুটে। নথুল্লাবাদ রুটে চলাচলকারী বাসগুলো বিআরটিসি থেকে ভাড়া নেওয়া হলেও বেশিরভাগই ফিটনেসবিহীন এবং যাতায়াতের জন্য অনুপযুক্ত।
বাংলা বাজার রুটে সকাল ও বিকেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবহনের জন্য শিক্ষার্থীদের ৪টি বাসের মধ্য থেকে ২টি ব্যবহার করা হয়। ফলে নতুন বাজার রুটে শিক্ষার্থীদের জন্য সকাল ও বিকেলে মাত্র ২টি বাস চালানো হয়। অথচ এই রুটে যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় এক হাজার। বিপরীতে বাসে আসন সংখ্যা মাত্র ৭০টি।
শুধু আসন সংকটই নয়, পুরনো বাসগুলোতে প্রায়ই দেখা দেয় যান্ত্রিক ত্রুটি। কখনো চালক থাকে না, কখনো বাস নষ্ট থাকে। নতুন বাজার রুটে নিয়মিত যাতায়াতকারী এক শিক্ষার্থী ডালিয়া হালদার বলেন, সন্ধ্যা বাসটি ১০ দিন নষ্ট ছিল। আমরা মাত্র একটি বাসে করে যাতায়াত করেছি। অথচ আমরা পরিবহন ফি দিলেও সঠিক সেবা পাচ্ছি না।
নথুল্লাবাদ রুটের চলাচলকারী শিক্ষার্থী অনিমেষ সমাদ্দার বলেন, এই রুটে চলা বিআরটিসি বাসগুলো ধীরগতির, নোংরা এবং ভেতরে বসার পরিবেশ নেই। বৃষ্টির সময় ছাদ থেকে পানি পড়ে। আমরা গাদাগাদি করে যাতায়াত করি, কিন্তু তারপরও ভিজে যেতে হয়।
আরেকজন বলেন, বাস নষ্ট হলেও ঠিক করা হয় না। জানালার কাঁচ ভেঙে গেলেও তা মেরামত হয় না। অভিযোগ করলেও বলা হয় বাজেট নেই। অথচ আমরা প্রতিবছর পরিবহন ফি দিই , তবুও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুল ম্যানেজার মো. উজ্জ্বল হোসেন বলেন, লোকবল সংকট, বাজেট ঘাটতি এবং অদক্ষ জনবলই পরিবহন সংকটের মূল কারণ। আমাদের ড্রাইভার আছে ১১ জন, অথচ গাড়ি ২২টি। হেলপারদের দিয়েই চালকের কাজ করানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে পরিবহন পুলের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ হোসেন বলেন, জনবল ও বাজেট সংকট আমাদের প্রধান সমস্যা। সন্ধ্যার বাসটি গত ৫ মাসে ৩ বার নষ্ট হয়েছে। শেষবার যান্ত্রিক যন্ত্রাংশ বাইরে থেকে আনতে হয়েছে বলে সময় লেগেছে।
উপাচার্য ড. মোঃ তৌফিক আলম বলেন, “বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, যেসব বাসে সমস্যা রয়েছে, সেগুলোর সমাধান ঈদের ছুটির মধ্যেই করে ফেলা হবে। এছাড়াও, একটি বাস পরিবর্তন করে উন্নত মানের একটি বাস সরবরাহ করা হবে।”
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবহন সেবা নিশ্চিত করতে দ্রুত নতুন বাস সংযোজন, ফিটনেসবিহীন বাস বাদ দিয়ে আধুনিক বাস চালু এবং পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: