দেশে সাড়ে ৪ কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত, কারণ কী?

ফ্যাটি লিভার বিশ্বব্যাপী একটি উদ্বেগজনক জনস্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এমনকি দীর্ঘমেয়াদি লিভার প্রদাহের কারণ হিসেবে ভাইরাসকে অতিক্রম করে ইদানিং ফ্যাটি লিভার প্রাধান্য বিস্তার করছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে প্রতি তিনজনে একজনের ফ্যাটি লিভার আছে। প্রায় ৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষ ফ্যাটি লিভারে ভুগছে এবং এর মধ্যে প্রায় এক কোটি মানুষ সিরোসিস বা লিভার ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিএমইউ সুপার-স্পেশালাইজড হাসপাতালে হেপাটোলজি সোসাইটি আয়োজিত ‘কম খাই হাঁটি বেশি, ফ্যাটি লিভার দূরে রাখি’ শীর্ষক জনসচেতনতামূলক আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, লিভার রোগজনিত মৃত্যু বিশ্বব্যাপী মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে পরিগণিত। লিভার সিরোসিস ও ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ হলো লিভারে চর্বি জমাজনিত প্রদাহ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে স্টিয়াটো-হেপাটাইটিস। অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়ার কারণে যকৃতে যে প্রদাহ সৃষ্টি হয় তাকেই স্টিয়াটো-হেপাটাইটিস বলা হয়। ফ্যাটি লিভারের বিপদজনক পরিণতি হচ্ছে ন্যাশ। নির্ণয়হীন ও নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় ফ্যাটি লিভার বিপদজনকভাবে ন্যাশের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করা ছাড়াও যকৃতে চর্বি জমার আরও বেশকিছু খারাপ দিক রয়েছে। এই রোগটি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও শরীরে ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও এ রোগের প্রাদুর্ভাব আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। অবশ্য শুধু খাদ্যাভ্যাস, হাঁটার অভ্যাস ও জীবনযাত্রার ধরণ পরিবর্তন এবং ওজন কমানোর মাধ্যমে ফ্যাটি লিভার ও ন্যাশ প্রতিরোধ করা যায়।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার বিশেষত ভাত বেশি খাচ্ছে এবং সেই তুলনায় শারীরিক পরিশ্রম বা হাঁটা-চলাফেরা কম করছে, তাদের ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। বাইরের খাবার গ্রহণ, দিনে পাঁচ ঘণ্টার বেশি যাদের বসে থাকতে হয় এবং একইসঙ্গে কায়িক পরিশ্রম কম তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আলোচকরা খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী খাদ্য তৈরিতে বাধ্য করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক (ডা.) এ এস এম মতিউর রহমান (অব.) বলেন, ফ্যাটি লিভারকে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি এপ্রোচ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে মাল্টি সেক্টরকে যুক্ত করে সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে। এই রোগ প্রতিরোধে জাতীয় পর্যায়ে বিশেষ করে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে যেমন কাজ করতে হবে একইসঙ্গে কমিউনিটিকেও যুক্ত করে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি নিতে হবে। ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে শৈশব থেকেই।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধই প্রধান চিকিৎসা। মাত্র একটি পরীক্ষা করেই এই রোগ চিহ্নিত করা সম্ভব। ফ্যাটি লিভারের ধরন অনুযায়ী রোগীদের স্বার্থে বিজ্ঞান সম্মতভাবে চিকিৎসা দিতে হবে। রোগটি প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এলজিইডিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যেতে হবে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও হেপাটোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ও ফেলো বাংলাদেশ একাডেমি অব সাইন্স মেজর জেনারেল অধ্যাপক (ডা.) এ এস এম মতিউর রহমান (অব.) এবং প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন বারডেম হাসপাতালের লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. মো. গোলাম আযম।
আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএমইউর সহযোগী অধ্যাপক ও হেপাটোলজি সোসাইটির বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম এলিন। ভিডিও বার্তায় বক্তব্য রাখেন এশিয়ান প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভার (এপিএএসএল) সভাপতি নেকাটি ওরমেসি, গ্লোবাল লিভার ইনস্টিটিউটের সিইও ল্যারি আর হোল্ডেন। সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার প্রমুখ।
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: