স্বাস্থ্য অধিদফতরে লাগাতার অবস্থান স্বাস্থ্য সহকারীদের
নিয়োগবিধি সংশোধন, বেতন বৈষম্য দূরীকরণ ও টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানের দাবিতে টানা নবম দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা।
এ সময় দীর্ঘদিনের না পাওয়ার বঞ্চনায় কর্মসূচিতে বিক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য সহাকারীরা কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগানে উত্তাল করে তোলেন পুরো স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রাঙ্গণ।
তারা স্লোগান দেন, 'লাগা লাগা তালা লাগা, ডিজি অফিসে তালা লাগা', জিও জিও জিও চাই।
রবিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদফতরের সামনে দিনভর এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এর আগে বৃহস্পতিবার চলমান অবস্থান কর্মসূচি থেকে সারাদেশের স্বাস্থ্য সহকারীরা ঢাকায় সমবেত হলে লাগাতার এ কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন, বাংলাদেশ হেলথ্ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুল হক চৌধুরী।
তবে তাদের প্রস্তাবিত দাবি বাস্তরায়নের জিও (প্রজ্ঞাপন) আকারে প্রকাশ না করা পর্যন্ত এ অবস্থান কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত শনিবার (২৯ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতি প্রথম তিন দিন চলেছিল শহীদ মিনারে। পরে তারা অবস্থান নেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সামনে।
বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে এ কর্মবিরতিতে অংশ নিয়েছেন দেশের ৬৪ জেলার স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকরা।
এই কর্মসূচির কারণে কয়েক দিন ধরে সারাদেশে ১ লাখ ২০ হাজার অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে টিকা নিতে এসে অনেক মা ও শিশু ফিরে যেতে হচ্ছেন।
এদিকে স্বাস্থ্য সহকারীদের এ কর্মবিরতির কারণে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। তবে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা না করা হলে সংক্রামণ রোগের চরম ঝুকির মুখে পরতে পারে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য।
স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করে কর্মবিরতিতে যেতে তারা চাননি। কিন্তু দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে তারা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে বারবার প্রতিশ্রুতির আশ্বাস মিললেও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
হেলথ্ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জানান, আমরা যখনই দাবির বিষয় আবেদন জানায়, তখনই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা চিঠি চালাচালি শুরু করেন। এ স্বাস্থ্য অধিদফতরই আমাদের দাবি আদায়ের অন্তরায়। তারা বার বার ভুল তথ্য দিয়ে আমাদের প্রস্তাবিত দাবির ফাইল মন্ত্রণালয়ে পাঠায়, মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষা করে ফেরত পাঠায়, এভারে কোয়ারি কোয়ারি খেলায় মেতে উঠেন। এ ধরনের সান্ত্বনার খেলা বন্ধ করতে হবে।
তারা বলেন, ১৯৮৫ সালে স্বাস্থ্য সহকারী পদ সৃষ্টির যে সরকারি জিও (প্রজ্ঞাপন) জারি হয়েছিল, আমরা জানতে পেরেছি স্বাস্থ্য অধিদফতরে থেকে সেটিই গায়েব হয়ে গেছে। এ স্বাস্থ্য অধিদফতর হলো আমাদের অভিভাবক তারাই দ্রুত মন্ত্রণালয়ের কাজ করে দাবি বাস্তরায়নের জিও (প্রজ্ঞাপন) প্রকাশের সকল দায়িত্ব নিতে হবে। জিও (প্রজ্ঞাপন) প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতর ছেড়ে কর্মস্থলে ফিরে যাবেন না। এখন আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, প্রযোজনে আমরা আরো কঠোর হতে বাধ্য হবো।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া স্বাস্থ্য সহকারীরা জানান, আমরা যে কত বৈষম্যের শিকার তা বলা ভাষা নেই। টিকাদানের আগে মাসজুড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা, জন্ম-মৃত্যুনবন্ধন, নবজাতক ও গর্ভবতী মায়ের রেজিস্ট্রেশন,যক্ষ্মা রোগী শনাক্তকরণ, ডটস পদ্ধতিতে ওষুধ খাওয়ানো, উঠান বৈঠক, মা সমাবেশসহ বিভিন্ন সেবা তারা দিয়ে থাকেন। সপ্তাহে তিন দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত সেবা দেওয়ার পরও তাদের মাসিক ভ্রমণভাতা মাত্র ৬০০ টাকা। আর বেতন ৯ হাজার ৭০০ টাকা।
অথচ আমাদের থেকে যারা নিচের গ্রেডে চাকরি করতেন, তারা আজ অনেক উপরে চলে গেছে, আর আমরা বৈষম্যের শিকার একই গ্রেডে পরে আছি বছরে পর বছর।
ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) কোর্স সম্পন্নকরা স্বাস্থ্য সহকারীরা বলেন, স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজ থেকে কিছুটা নিজের পরিবর্তনের জন্য পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সালে প্রায় ২ হাজার ২০০ স্বাস্থ্য সহকারী স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্পূর্ণ নিয়ম অনুসারে ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) কোর্স সম্পন্ন করেন। কিন্তু তাদের কারও যোগ্যতাতে সমমান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আমাদের জানা মতে, আমাদের মতো এমন বৈষম্যের শিকার দেশে অন্য কোনো বিভাগ আছে বলে মনে হয় না।
স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবির মধ্যে রয়েছে, নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতা যুক্ত করে ১৪তম গ্রেড প্রদান, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমাধারীদের ১১তম গ্রেডসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দেওয়া, ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেডে পদোন্নতি নিশ্চিত করা, প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা, বেতনস্কেল পুনর্নির্ধারণের সময় টাইম স্কেল বা উচ্চতর স্কেল সংযুক্ত করা এবং ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) সম্পন্নকারীদের সমমান স্বীকৃতি প্রদান।
বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রস্তাবিত দাবির ফাইল এরইমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করছি, তারা দেশের তৃণমূল পর্যায়ের জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত বৈষম্য শিকার স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবিগুলো গুরুত্বসহ বিবেচনা করবেন। দ্রুত জিও (প্রজ্ঞাপন) জারি হলেই আমরা এ অবস্থান কর্মবিরতি থেকে কর্মস্থলে ফিরে যাব।
বিভি/টিটি




মন্তব্য করুন: