• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বাংলাদেশে এখনো মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত রোগী ধরা পড়েনি: বিএসএমএমইউ

প্রকাশিত: ১৯:২২, ২৪ মে ২০২২

আপডেট: ২১:০০, ২৪ মে ২০২২

ফন্ট সাইজ
বাংলাদেশে এখনো মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত রোগী ধরা পড়েনি: বিএসএমএমইউ

বাংলাদেশে এখনো মাঙ্কিপক্স রোগের কোনো রোগী ধরা পড়েনি। বিএসএমএমইউয়ে এখন পর্যন্ত মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। এসব কথা বললেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

মঙ্গলবার (২৪ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনা মহামারিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা যেভাবে মোকাবিলা করেছি, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে যেমনভাবে বাংলাদেশে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে দেইনি, সেভাবে আমরা মাস্কিপক্স ভাইরাসের জন্যও প্রস্তুত আছি। দেশের মানুষকে যেকোনো ধরনের গুজব বা আতঙ্ক এড়িয়ে চলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতো এই রোগ থেকেও আমরা জাতিকে নিরাপদ রাখতে পারবো। করোনাভাইরাস মহামারির রেশ কাটার মধ্যে মাঙ্কিপক্স যখন উদ্বেগের নতুন কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে, তখন ভবিষতে যেকোনো মহামারি মোকাবেলায় বিশ্ববাসীকে একসঙ্গে কাজ করার উপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন:

বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি বিশ্ব থেকে এখনো শেষ হয়নি। এর মধ্যেই বিশ্বে আরও একটি ভাইরাস জেঁকে বসবার উপক্রম করছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ ১৪টি দেশে একটি ফুসকুড়িসহ জ্বরের ঘটনা ঘটেছে। যা মাঙ্কিপক্স হিসেবে নির্ণয় করা হয়।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাঙ্কিপক্সকে শনাক্তযোগ্য ও বর্ধনশীল ব্যাধি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ইতিমধ্যে সংক্রামক রোগ ‘মাঙ্কিপক্স’ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশের প্রতিটি স্থল, নৌ এবং বিমান বন্দরে বাড়তি সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মাঙ্কিপক্স একটি ডিএনএ ভাইরাস। কাউপক্স, ভ্যাক্সিনিয়া এবং ভ্যারিওলা (স্ম্যালপক্স) এই গ্রুপের ভাইরাস। এটি একটি জুনোটিক ভাইরাস, যার প্রাথমিক সংক্রমণ সংক্রমিত প্রাণীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে বা সম্ভবত তাদের অপর্যাপ্তভাবে রান্না করা মাংস খাওয়ার মাধ্যমে ঘটে বলে বিশ্বাস করা হয়। উদাহরণ-জংলী কুকুর, ইঁদুর, খরগোশ, কাঠবিড়ালি, বানর, সজারু ইত্যাদি। ১৯৫৮ সালে ল্যাবরেটরিতে প্রথম বানরের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছিলো বলে ১৯৭০ সালে এর নামকরণ হয় মাঙ্কিপক্স।

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, এই ভাইরাসের ২টা স্ট্রেইন আছে। কঙ্গো বেসিন স্ট্রেন পশ্চিম আফ্রিকার স্ট্রেইনের চেয়ে বেশি মারাত্মক। এই ভাইরাস পশু থেকে প্রাণী এবং পশু থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণই সবচেয়ে ভয়ংকর মাধ্যম বলে বিবেচিত। ৯০ শতাংশ রোগী ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু। গুটিবসন্তের টিকা বন্ধ করা এর একটি কারণ হতে পারে। আফ্রিকাতে ১-১০ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যুর হার রিপোর্ট করা হয়েছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালে প্রাদুর্ভাবে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। জটিলতার মধ্যে রয়েছে স্থায়ী ক্ষত, বিকৃত দাগ, সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, ব্রঙ্কোপনিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, কেরাটাইটিস, কর্নিয়ার আলসারেশন, অন্ধত্ব, সেপ্টিসেমিয়া এবং এনসেফালাইটিস। গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্স থেকে ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা প্রদান করে। ২ সপ্তাহের মধ্যে সম্ভব হলে ৪ দিনের মধ্যে এটি ব্যবহার করতে হবে। ইনকিউবেশন পিরিয়ড গড়ে ১২ দিন, ৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত। প্রড্রোম ১ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হয়। জ্বরজনিত অসুখের সঙ্গে ঠান্ডা লাগা, ঘাম, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, ফ্যারিঞ্জাইটিস, শ্বাসকষ্ট এবং কাশি হয়ে থাকে।

তিনি আরও বলেন, লিম্ফ্যাডেনোপ্যাথি জ্বরের পরে ২-৩ দিনের মধ্যে ঘাড়ের চারদিকে দেখা যায়। ১ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ফুসকুড়ি তৈরি হয়। ফুসকুড়ি প্রায়ই মুখে শুরু হয় এবং তারপর শরীরের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ২ থেকে ৪ সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে। এগুলো মুখমন্ডল, শরীর, হাত-পা এবং মাথার ত্বকের সঙ্গে জড়িত। হাতের তালু এবং পায়ের পাতায় ক্ষত দেখা যেতে পারে। তবে ব্যথাহীন হয়।  যদি ব্যথা থাকে তাহলে এটি সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হতে পারে। চুলকানি থাকতে পারে। হেমোরেজিক এবং ফ্ল্যাট ফর্ম, যা গুটিবসন্তের সঙ্গে দেখা যায়। তবে মাঙ্কিপক্সের রোগীদের ক্ষেত্রে এটা দেখা যায় না।

সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররাফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন,  ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগড় মোরল, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. স্বপন কুমার তপাদার উপস্থিত ছিলেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা.  আফজালুন নেসা, এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আঞ্জুমান বানু সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

বিভি/এএন

মন্তব্য করুন: