হাসিনাকে আশ্রয় দিচ্ছে না নয়াদিল্লি, রাজি নয় ব্রিটেনও (ভিডিও)
শত শহীদের রক্ত মাড়িয়ে তিনি গেলেন ঠিকই, কিন্তু যাবার কালে আর কারও কথাই ভাবলেন না। অনিরাপদ অবস্থায় রেখে গেলেন আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা কর্মীকে।
অভূতপূর্ব ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতনের পর বোন রেহানাকে সাথে নিয়ে দেশ ছেড়ে পালালেন বাংলাদেশের সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একদিকে বিজয়ের উল্লাসে মাতোয়ারা দেশের সাধারণ মানুষ, অন্যদিকে গা ঢাকা দিতে ব্যস্ত সব এম-পি মন্ত্রীরা। এরই মধ্যে দেশ ছেড়েছেন অনেক আওয়ামী লীগ নেতা। দেশ ছাড়লেন হাসিনাও। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে হাসিনা এখন যাবেন কোথায়?
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর গতকাল দুপুরে একটি সামরিক উড়োজাহাজে করে দিল্লি পৌছান হাসিনা। তবে জানা গেছে হাসিনাকে আশ্রয় দিতে রাজি হচ্ছে না মোদি সরকার। নয়া দিল্লির ধারনা এতে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভারত বিরোধী হাওয়া আরও জোড়ে বইতে পারে। হাসিনাকে এই কথা এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদির নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। দোভালের সঙ্গে বৈঠকে বসে শেখ হাসিনা একবার মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চেয়েছিলেন; কিন্তু সেই আবেদন মঞ্জুর হয়নি।
বাংলাদেশে হাসিনার ইস্তফা ও সেনাবাহিনীর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে সোমবার রাতে দীর্ঘ বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি,পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর সহ ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিরা। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আপাতত বাংলাদেশের কাউকেই ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হবে না। শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দেওয়ার অন্যতম আরেকটি কারণ হলো, প্রায় ৬ হাজার ভারতীয় এখনও বাংলাদেশে আটকে আছেন। হাসিনা ভারতে আশ্রয় পেলে তাদের জীবনও নিরাপত্তার শঙ্কায় পড়তে পারে।
তবে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, শেখ হাসিনাকে আপাতত সাময়িকভাবে ভারতে থাকার অনুমোদন দিয়েছে নয়াদিল্লি। বাংলাদেশ ঘিরে থাকা পুরো সীমান্ত ও সব চেকপোস্টে নজরদারি বাড়াতে বিএসএফ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারে দেশেটির বিএসএফের ডিজিকে কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নয়াদিল্লি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র থেকে জানা গেছে, মোদি সরকারের কাছে আশ্রয় না পেয়ে বোন রেহানাকে নিয়ে তৃতীয় কোনো দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন শেখ হাসিনা। তবে যে হাসিনা মাদার অফ হিউম্যানিটি ও বিশ্ব নেত্রী হিসেবে নিজের পরিচয় দিতেন তার বিশ্ব এখন ছোট হয়ে এসেছে। কেউই হয়ত তাকে হিউম্যানিটি দেখাতে এগিয়ে আসছে না। কারণ, ব্রিটেন ও শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকার করেছে।
শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব রয়েছে। পাশাপাশি রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সংসদ সদস্য। প্রথমে শোনা গিয়েছিল, সোমবার রাতেই তিনি লন্ডনের ফ্লাইট ধরতে পারেন। পরে জানা যায়, হাসিনার রাজনৈতিক আশ্রয়ের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাজ্য। যদিও সরকারি সূত্রে এর কোনো সমর্থন মেলেনি।
গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত শেখ হাসিনাকে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে না বলেও ধারনা করা হচ্ছে। তিনি আরেক স্বৈরশাসক আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কার দেশ বেলারুশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন বলেও জানা গেছে। তবে শেষমেশ তিনি কী করবেন এবং জীবনের শেষ দিনগুলো কোথায় কাটাবেন তা সময়ই বলে দেবে।
বিভি/এমএফআর




মন্তব্য করুন: