গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে সুইজারল্যান্ডে হিমবাহ ধস, চাপা পড়লো গ্রাম
ছবি: সংগৃহীত
সুইজারল্যান্ডের আল্পসের বার্চ হিমবাহের একটি বড় অংশ ধসে পড়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৮ মে-এর এই ধসে বরফ, কাদা, পানি ও পাথরের ঢল নেমে আসে ব্লাটেন গ্রামে। বার্চ হিমবাহে ফাটল ধরায় ধসের আশঙ্কায় আগেই সতর্কতা জারি করেছিল কর্তৃপক্ষ। মে মাসের শুরুতে ব্লাটেন গ্রাম থেকে প্রায় ৩০০ জন বাসিন্দা ও তাদের গবাদি পশুও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।
২৮ মে ড্রোনে ধারণ করা একটি ছবিতে দেখা যায়, হিমবাহ ধসে পড়ার কারণে আকাশে বিশাল ধুলোর মেঘ ছড়িয়ে পড়ে। কাদা ও পাথরের প্রবল ঢল পুরো পাহাড়ি উপত্যকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ব্লাটেন গ্রামের প্রায় সবটুকুই ঢেকে যায়।
ভ্যালেইস ক্যান্টনের সরকারি কর্মকর্তা স্টেফান গ্যানজার সুইস গনমাধ্যমকে জানান, ব্লাটেন গ্রামের প্রায় ৯০ শতাংশ ভূমিধসে ঢেকে গেছে। এদিকে ব্লাটেন গ্রামের অনেক ভবন ও অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্মকর্তারা। হিমবাহ ধসের কারণে ৩.১ মাত্রার একটি ভূমিকম্পও অনুভূত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। যদিও একজন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ধসের কারণে শুধু গ্রাম নয়, আশেপাশের বনভূমিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে লনজা নদীর প্রবাহ। ফলে বন্যার আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে।
ফেডারেল কাউন্সিলর আলবার্ট রোস্তি বলেন, পাহাড়ের মানুষ জানে প্রকৃতির মানুষের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। তারা এমন একটি ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন, যা তাদের স্তব্ধ করে দিয়েছে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে আল্পস অঞ্চলের বরফস্তরগুলো ধীরে ধীরে সংকুচিত ও দুর্বল হয়ে পড়ছে। সুইজারল্যান্ডের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ওই অঞ্চলের হিমবাহের আয়তন প্রায় ১০ শতাংশ কমে গেছে।
গলতে থাকা হিমবাহ থেকে পাহাড় ধস, বরফ ও পাথরের ধস ও কাদামাটির প্রবাহ সৃষ্টি হতে পারে। গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আল্পস অঞ্চলে ছোটখাটো ধসের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে, ব্লাটেনে ঠিক কী ঘটেছিল তা বোঝার জন্য আরও গভীর তদন্তের প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি জুরিখের গবেষক মাইলিন জ্যাকেমার্ট। তিনি বলেন, এটি একটি জটিল পরিস্থিতি। হিমবাহ ধস, ভূমিধস বা প্রবাহের সঠিক কারণ নির্ণয় করা খুবই কঠিন। এত বড় ঘটনা সাধারণত বিরল।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেমন বরফ গলার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, তুষারপাত কমে যাওয়া, বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, এসব পরিবর্তন পাহাড়ি এলাকায় শিলাস্তরের স্থায়িত্ব কমিয়ে দিচ্ছে। তবে, শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এসব ঘটনা ঘটছে এমন নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, এই ধরনের ধসের ঘটনা কি আগে থেকে বেশি ঘটছে? এখনও পর্যন্ত এটি স্পষ্ট নয়।
বিভি/আইজে




মন্তব্য করুন: