গাজার উদ্দেশে ত্রাণের জাহাজ নিয়ে রওনা দিলেন গ্রেটা থানবার্গ (ভিডিও)

২০০৭ সালে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকেই ইসরাইল গাজা উপত্যকার ওপর কঠোর অবরোধ আরোপ করে। এই অবরোধ স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—তিন দিক থেকেই কার্যকর করা হয়েছে, যার মধ্যে সামুদ্রিক অবরোধ অন্যতম। ইসরাইলের দাবি, এই অবরোধের লক্ষ্য হলো হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পৌঁছানো ঠেকানো।

ইসরাইলি আগ্রাসন ও দীর্ঘমেয়াদি অবরোধে বিপর্যস্ত গাজা উপত্যকায় মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। ইসরাইল গাজার উপকূলে কোনো পণ্যবাহী বা ত্রাণবাহী জাহাজ প্রবেশ করতে দেয় না। অবরোধের কারণে ফিলিস্তিনি জেলেরাও নির্দিষ্ট সীমার বাইরে যেতে পারেন না। ফলে খাদ্য, ওষুধ ও ন্যূনতম জীবনধারণের উপকরণ সংকটে সেখানে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য নিরীহ মানুষ। 

এমন সংকটময় মুহূর্তে সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থানবার্গ মানবিক সহায়তা ও প্রতিবাদের বার্তা নিয়ে গাজা উপত্যকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন। ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় সিসিলির কাতানিয়া বন্দর থেকে ‘ম্যাডলিন’ নামের একটি ত্রাণবাহী জাহাজে গ্রেটা ছাড়াও আরও ১১ জন আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মী রওনা দিয়েছেন। গ্রেটার সঙ্গে রয়েছেন ‘গেম অব থ্রোনস’ খ্যাত অভিনেতা লিয়াম কানিংহ্যাম ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসানের মত মানবাধিকারকর্মীরা। এই অভিযানের মূল লক্ষ্য গাজার উপকূলে পৌঁছে জরুরি ত্রাণ বিতরণ এবং বর্তমান মানবিক বিপর্যয় নিয়ে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা তৈরি করা।

যাত্রার আগে সংবাদ সম্মেলনে আবেগঘন কণ্ঠে বক্তব্য দেন গ্রেটা। এই মিশন বিপজ্জনক হলেও চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। তিনি বলেন ''গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্যই আমাদের এই অভিযান। আমরা সেখানে একটি মানবিক করিডোর খোলার চেষ্টা করছি। মানবতা রক্ষার জন্য আপনার কণ্ঠস্বর, প্ল্যাটফর্ম বা হাতে যা কিছু আছে, সেটিই ব্যবহার করুন। আমরা আপনাদের ওপরই নির্ভর করছি।'' 

এই মিশন পরিচালনা করছে আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’। যারা দীর্ঘদিন ধরে গাজা উপকূলে ইসরাইলের আরোপিত সামুদ্রিক অবরোধ ভাঙার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সংগঠকরা আশা করছেন, বড় কোনো বাধা না এলে ‘ম্যাডলিন’ আগামী সাত দিনের মধ্যে গাজার উপকূলে পৌঁছাতে পারবে। এর আগে ২০১১ সালে ফ্লোটিলার আরেকটি মিশন ড্রোন হামলায় ব্যর্থ হয়েছিল। যে ঘটনার জন্য ইসরাইলকে সরাসরি দায়ি করেছে সংগঠনটি। 

মাত্র ১৫ বছর বয়সে স্কুল ফাঁকি দিয়ে সুইডেনের সংসদের সামনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেন গ্রেটা থানবার্গ। যা বিশ্বজুড়ে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। তিনি সরাসরি ও স্পষ্ট ভাষায় রাজনীতিবিদ ও বিশ্ব নেতাদের সমালোচনা করেন। সাহসী বক্তব্য ও কার্যক্রমের জন্য ২০১৯ সালে টাইম ম্যাগাজিনের ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হন গ্রেটা।

বিমানে যাতায়াত না করে রেসিং ইয়টে করে নিউ ইয়র্ক যাত্রা, আমিষ খাদ্য পরিহার ইত্যাদি দিয়ে গ্রেটা নিজেও পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা দেখিয়েছেন। দৃঢ় সংকল্প নিয়ে পরিবেশ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় বিশ্বব্যাপী তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছেন গ্রেটা থানবার্গ।