বাংলাদেশকে সরিয়ে মার্কিন বাজার দখলে এগিয়ে যেসব দেশ (ভিডিও)
গত এপ্রিলে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেন তিনি। তবে বিশ্ব অর্থনীতিতে টালমাটাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে এসব শুল্ক ৩ মাসের জন্য স্থগিত করেন তিনি। সেই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের বেঁধে দেয়া সময় শেষ হওয়ায় এবার বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের সরকার প্রধানদের চিঠি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেখানে বাংলাদেশি রফতানি পণ্যের ওপর নতুন করে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যা কার্যকর হবে আগামী ১ আগস্ট থেকে। ট্রাম্পের সেই চিঠিতে বাংলাদেশ কীভাবে নতুন এই শুল্ক হার থেকে রক্ষা পেতে পারে তাও উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, যদি বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদন বা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না। ফলে ট্রাম্পের এই শুল্কনীতির জেরে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।
ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি কার্যকর হলে হুমকির মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। শুধু গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড Walmart, GAP ও H&M এর মতো ক্রেতা রয়েছে বাংলাদেশের।
শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারে বড় পরিবর্তন হলে বাংলাদেশে উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় বড় ধরনের ধাক্কা খেতে পারে। বাংলাদেশের পোশাক খাতে বর্তমানে ৪০ লাখেরও বেশি শ্রমিক কাজ করছেন যাদের ৮০ শতাংশই নারী। মার্কিন অর্ডার কমে গেলে বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানায় উৎপাদন কমে যেতে পারে। এবং এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে শ্রমিকদের ওপর। এছাড়া বাংলাদেশের পোশাক খাতের প্রায় ৭০% কাঁচামালই চীন থেকে আসে। ফলে ট্রাম্পের চীনবিরোধী নীতির কারণে পরোক্ষভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশ।
২০১৮ সালে ডোনল্ড ট্রাম্প চীনের গার্মেন্টস ও ইলেকট্রনিক্সে ট্যারিফ বসালে মার্কিন কোম্পানিগুলো বিকল্প উৎস খুঁজতে শুরু করে। ফলে লাভবান হয় ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের মতো দেশ। একইভাবে এখন যদি বাংলাদেশ টার্গেট হয়, তাহলে সেই অবস্থানে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া বা আফ্রিকার দেশ ঢুকে যেতে পারে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সই করেছে ভিয়েতনাম।
গত এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসন ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও পরে তা কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামের মধ্যে সরাসরি দ্বিপাক্ষিক ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট না থাকলেও ভিয়েতনাম অনেক বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির সদস্য। এসব চুক্তির কারণে ভিয়েতনামের পণ্য সরবরাহ চেইন সহজ হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক ব্র্যান্ড ভিয়েতনামে ফ্যাক্টরি বা সোর্সিং হাবও খুলে ফেলেছে।
বাংলাদেশের শুল্ক বাড়লে মার্কিন আমদানিকারকরা সস্তা ও বিকল্প উৎস হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার দিকেও ঝুঁকতে পারে। তুলনামূলক কম রাজনৈতিক ঝুঁকি থাকায় মার্কিন ব্র্যান্ডগুলোর পছন্দের তালিকায় রয়েছে দেশটি। এছাড়াও প্রতিযোগিতায় আছে কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও মেক্সিকোর মতো দেশগুলো।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: