নেপালের পরিস্থিতি সাউথ এশিয়ায় ভারতের সমস্যা আরও বাড়িয়েছে: বিবিসি রিপোর্ট

ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘদিনের গভীর এবং ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে নেপাল ও ভারতের। সাম্প্রতিক সময় নেপাল ছিল ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশগুলোর একটি। তবে, সেখানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের জেরে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেছেন। মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কারনে জনরোষ সৃষ্টি হয়। এই বিক্ষোভে প্রায় ২০ জন মানুষ প্রাণ হারায়। সম্প্রতি বিবিসির একটি রিপোর্টে নেপালের পরিস্থিতি সাউথ এশিয়ায় কীভাবে ভারতের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে, সে বিষয়ে একটি ধারণা তুলে ধরা হয়েছে।
এই পরিস্থিতি অনেককেই স্মরণ করিয়ে দেয় ২০২২ সালের শ্রীলঙ্কা এবং ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানের ঘটনা। যদিও নেপালের সহিংসতা তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের চেয়ে কম ছিল। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার সেসময় আরো কঠোর এবং দমনমূলক নীতি গ্রহণ করে। বিশেষ করে স্বৈরাচারী হাসিনার নেতৃত্বে সাধারণ জনতাকে দমন করতে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। এতে হাসিনার নির্দেশে হাজারো মানুষকে হত্যা করা হয়, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে নেপালে দেশব্যাপী চলছে কারফিউ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে সেনাবাহিনী। এর আগে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট দখল করার পর বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।
এদিকে, সীমান্তবর্তী এলাকায় যে সমস্ত ঘটনা ঘটছে, সেগুলোর দিকে গভীর নজর রাখছে দিল্লি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্রুত এই পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় মন্তব্য করেছেন। তিনি এক্স -এ এক পোস্টে বলেন, নেপালে সংঘর্ষের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। অনেক তরুণের জীবন হারানো তাকে গভীরভাবে ব্যথিত করেছে।
সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে একটি জরুরি বৈঠক করেছেন। বৈঠকে নেপালের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর আলোচনা করা হয়। ভারতের জন্য এটি একটি উদ্বেগজনক বিষয়, কারণ নেপালের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত কৌশলগত। এর কারণে ভারত ও চীন উভয় দেশই নেপালে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। এই প্রতিযোগিতার কারণে অনেক সময় এই দুই দেশের বিরুদ্ধে নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ উঠেছে। ভারত নেপালের মূল ৩টি রাজনৈতিক দলের সাথেই গভীর সম্পর্ক বজায় রাখে।
এদিকে, আবার নেপালি গোরখারা একটি বিশেষ চুক্তির আওতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি, আনুমানিক ৩.৫ মিলিয়ন নেপালি নাগরিক ভারতে কর্মসংস্থানের জন্য অথবা স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। উভয় দেশের নাগরিকদের চলাচলের জন্য সাধারণভাবে ভিসা বা পাসপোর্টের প্রয়োজন হয় না। এছাড়াও, নেপালে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক ভারতীয় হিন্দু তীর্থযাত্রী ধর্মীয় স্থানে দর্শন করতে আসেন।
বর্তমানে নেপালের নতুন সরকার বা নেতৃত্ব কেমন হবে তা এখনো অনিশ্চিত। ভারতের সাথে স্বৈরাচারী হাসিনার গভীর সম্পর্ক থাকায় বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক কিছুটা টানাপোড়েনে রয়েছে, কারণ দিল্লি হত্যার আসামি হাসিনাকে তার আশ্রয়ে রেখেছে। ফলে, নেপালের পরিস্থিতি সম্পর্কে এখন সতর্ক থাকছে ভারত।
এর আগে ২০১৯ সালে ভারত একটি মানচিত্র প্রকাশের পর নেপাল তীব্র প্রতিবাদ জানায়। সেই মানচিত্রে পশ্চিম সীমান্তের কাছে অবস্থিত কিছু অঞ্চল ভারতের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছিল। এরপর নেপাল নিজেই একটি নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে, যেখানে ওই এলাকাগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে কূটনৈতিক উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের উচিত নেপালে আসতে যাওয়া নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সংলাপ করা। পাশাপাশি, কোন মতবিরোধ থাকলে মিটিয়ে ফেলা। যেহেতু, সাউথ এশিয়ার অধিকাংশ দেশের সাথে ভারতের তেমন একটা ভালো সম্পর্ক নেই। এদিকে, পাকিস্তানের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক শত্রুতাপূর্ণ, বাংলাদেশের সঙ্গে চলছে টানাপোড়েন আর অন্যদিকে মিয়ানমারে চলছে গৃহযুদ্ধ।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: