পাকিস্তানে সংবিধান সংশোধন
আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান! (ভিডিও)
স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার একপাশে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, আর অন্যপাশে পাক সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনির। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে তোলা এই ছবি নিয়ে আলোচনা কম হয়নি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে অসীম মুনিরের হাস্যজ্জোল সেই ছবিগুলোই বলে দিচ্ছিলো, পাকিস্তানের ক্ষমতার ভারসাম্যে কতটা প্রভাবশালী পাক সেনাবাহিনী। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সামরিক বাহিনী কখনো সরাসরি আবার কখনো পরোক্ষভাবে দেশটির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। পাক সেনাবাহিনী একাধিকবার বিভিন্ন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারের ক্ষমতা দখল করেছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতির অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সেনা সদর দপ্তরে নেওয়া হয়। যেখানে বেসামরিক প্রধানমন্ত্রীর কোনো এখতিয়ার থাকে না। রাজনৈতিক দলগুলোও সেনাবাহিনীর সাথে সমঝোতা করতে বাধ্য হয়, যার ফলে সেনাপ্রধানই পাকিস্তানের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর নেতা হিসেবে বিবেচনা করেন অনেকে। আর এবার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সেনাপ্রধানের ক্ষমতা আরও রাড়িয়ে দিতে যাচ্ছে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট।
পাকিস্তানের সিনেটে দেশটির সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী নিয়ে বিল উত্থাপন করা হয়েছে। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এই সংশোধনীর লক্ষ্য হলো শাসন কাঠামোর আধুনিকীকরণ। প্রস্তাবে বিচারিক কাঠামো ও সামরিক কমান্ড ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তনের ইঙ্গিত আছে।
তবে প্রস্তাবিত কয়েকটি সংশোধনীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে ২৪৩ অনুচ্ছেদ নিয়ে। এটির আওতায় এতদিন সশস্ত্র বাহিনীর ওপর বেসামরিক নিয়ন্ত্রণ ছিল। কিন্তু সংশোধনের পর সাংবিধানিকভাবে সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকবেন সেনাপ্রধান। তিনি সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ওপর সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারবেন। আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স’ নামে নতুন পদ সৃষ্টি হবে। এই পদের দায়িত্ব পালন করবেন সেনাপ্রধান।
মোট ৯৬ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চকক্ষে ৬৪ জন সিনেটর বিলটির পক্ষে ভোট দেন, ফলে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিলটি সহজেই গৃহীত হয়। এই ভোটে সরকারের জোটসঙ্গীদের পাশাপাশি বিরোধী শিবিরের দুই সদস্য ভিন্নমত দিয়ে সরকারের পক্ষে ভোট দেন, যা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করে। ভোটাভুটির আগে বিরোধী বেঞ্চে প্রবল বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়; তারা বিলের কপি ছিঁড়ে আইনমন্ত্রীর টেবিলের দিকে ছুড়ে দেন এবং ‘গণতন্ত্র হত্যার প্রতিবাদে’ স্লোগান তুলতে থাকেন। বিক্ষোভ শেষে বেশিরভাগ বিরোধী সদস্য সিনেট চেম্বার থেকে ওয়াকআউট করেন।
এই সাংবিধানিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতাও সীমিত করা হবে। সাংবিধানিক মামলাগুলোর শুনানি আর সুপ্রিম কোর্টে হবে না বরং একটি নতুন ফেডারেল সাংবিধানিক আদালতে এসব মামলার শুনানি হবে যেখানে সরকার বিচারকদের নিয়োগ করবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি আজীবনের জন্য ফৌজদারি দায়মুক্তি পাবেন।
দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপকহারে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে পাকিস্তানের সেনাভিনীর বিরুদ্ধে। কিন্তু এই সংস্কারের মাধ্যমে এবার তারা সাংবিধানিকভাবেও সমর্থন পাবেন যা পাল্টানো যাবে না। সমালোচকদের অনেকে সতর্ক করেবলছেন, এই পরিবর্তনগুলো পুরো দেশকে অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিবে।
বিভি/এমএফআর




মন্তব্য করুন: