• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

যে কারণে সব ধর্মের মানুষের কাছে পছন্দের শীর্ষে ‘আয়া সোফিয়া’

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ১৮ জুন ২০২২

আপডেট: ১২:০৯, ১৮ জুন ২০২২

ফন্ট সাইজ

ইতিহাস-ঐতিহ্য আর নান্দনিক সৌন্দর্য নিয়ে ১৬০০ বছর ধরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে আলোচিত মসজিদ আয়া সোফিয়া। দীর্ঘ এই ১৬শ বছরে কখনও গীর্জা, কখনও জাদুঘর আবার কখনও শাসকদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ইতিহাসের স্বাক্ষী এই আয়া সোফিয়া। সর্বশেষ এটিকে মসজিদে রূপান্তর করেছেন বর্তমান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাতেও স্থান করে নিয়েছে বিখ্যাত এই আয়া সোফিয়া মসজিদটি।

তুরস্কের বসফরাস প্রণালীর পশ্চিম তীরে ইউরোপ অংশে অবস্থিত ইস্তাম্বুলের ফাতিহ এলাকায় অবস্থিত আয়া সোফিয়া। বিশাল গম্বুজশোভিত ঐতিহাসিক এই মসজিদটি দূর থেকেও খুব সহজে নজর কাড়ে।

সুবিশাল এই স্থাপনাটি এক কক্ষ বিশিষ্ট। স্তরে স্তরে সাজানো সোনালী গম্বুজগুলোকে ধরে রেখেছে সুউচ্চ পিলার। এসব পিলারের উপর খোদায় করা বিভিন্ন শিল্পকর্ম আর গম্বুজকে ঘিরে ঝুলে থাকা চোখ ধাঁধানো ঝাড়বাতি মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদের।

মসজিদটির বিভিন্ন স্থানে খোদাই করে বসানো হয়েছে পবিত্র কোরআনের আয়াত। এর সামনের অংশে নারী-পুরুষদের জন্য রয়েছে পৃথক নামাজের জায়গা। আবার নামাজ শেষ হলে সব ধর্মের নারী-পুরুষ শিশুদের ইচ্ছেমতো আনন্দে মেতে উঠতে দেখা গেছে আয়া সোফিয়ায়। প্রতিদিন এই মসজিদের সৌন্দর্য নিজ চোখে উপভোগ করতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন হাজারও দর্শনার্থী।

ইতিহাস বলছে, বাইজেন্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ানের নির্দেশে ৫৩২ খ্রিষ্টাব্দ নির্মাণ শুরু হওয়া এই ইমারত নির্মাণের কাজ শেষ হয় ৫৩৭ খ্রিষ্টাব্দ। এরপর ৫৩৭ থেকে ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অর্থোডক্স গির্জা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল আয়া সোফিয়া। কিন্তু ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে চতুর্থ ক্রুসেডের সময় ক্যাথলিক খ্রিষ্টানেরা অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের রাজধানী কনস্ট্যান্টিনোপল অর্থাৎ বর্তমান ইস্তাম্বুলে আক্রমণ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সে বছর আয়া সোফিয়াকে অর্থোডক্স গির্জা থেকে ক্যাথলিক গির্জায় রূপান্তর করে। এরপর ১২০৪ থেকে ১২৬১ সাল পর্যন্ত ক্যাথলিক গির্জা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল এই মসজিদ।

১২৬১ সালে আয়া সোফিয়া ফের অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের দখলে চলে আসে। পরে ১২৬১ থেকে ১৪৫৩ সাল পর্যন্ত আয়া সোফিয়ার পরিচিতি ছিল অর্থোডক্স গির্জা হিসেবে। এরপর ১৪৫৩ সালে অটোমান সুলতান মেহমেত ইস্তাম্বুল দখল করার পর সে বছর আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করা হয়।

আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের বিষয়ে ইতিহাসে দুটি বিতর্ক রয়েছে। কারো মতে, তৎকালীন যুদ্ধনীতি অনুযায়ী অটোমান সুলতান মেহমেত দখল করে নিয়েছিলেন আয়া সোফিয়া। আবার কারো মতে সুলতান মেহমেত খ্রিষ্টান পাদরিদের কাছে থেকে আয়া সোফিয়া কিনে নিয়েছিলেন। পরে সুলতান মেহমেত আয়া সোফিয়াকে একটি ওয়াকফ সম্পত্তিতে রূপান্তর করেন এবং নিজের নামে ফাউন্ডেশন গঠন করে তার ওপর আয়া সোফিয়ার দায়িত্ব অর্পণ করেন। তবে সুলতান মেহমেতের পাদরিদের কাছে থেকে আয়া সোফিয়াকে কেনার বিষয়টি আল-জাজিরার অনুসন্ধানমূলক সংবাদে উঠে এসেছে। যদিও প্রথাগত অটোমান ইতিহাসবিদেরা এই বিষয়ে একমত নন।

১৪৫৩ সাল থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪৮২ বছর এটিকে মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করা হলেও অটোমানদের উৎখাতের পর আধুনিত তুরস্কের জনক মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক সরকার ১৯৩৫ সালে আয়া সোফিয়াকে জাদুঘরে রূপান্তর করে। এরপর ২০২০ সাল পর্যন্ত এটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে আয়া সোফিয়াকে ৯২১ বছর গির্জা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আবার এটি ৪৮২ বছর ব্যবহৃত হয়েছে মসজিদ হিসেবে। এরপর ৮৫ বছর আয়া সোফিয়ার পরিচয় জাদুঘর হিসেবে থাকলেও এখন আবার মসজিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

তবে বর্তমানে সব ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত এই মসজিদে নারী-পুরুষ সবার প্রবেশের অনুমতি রয়েছে।

বিভি/এসএইচ/এনএ

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2