নগর ভবনে জনসেবায় ফিরেছে গতি, চলছে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনও

গতি ফিরেছে নগর ভবনসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনের সকল আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে। সেবা প্রত্যাশীদের আগমনও বেড়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে সোমবার (২৩ জুন) সেবার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিও করতে দেখা গেছে আন্দোলনকারী ঢাকাবাসীকে।
তবে নগর ভবনে সকল বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী আসলেও এ্রই রিপোর্ট লেখা পযর্ন্ত (সোয়া ২টা) আসেননি প্রশাসক ও প্রকৌশলীরা। নগর ভবনের প্রধান ফটক এতো দিন তালাবদ্ধ থাকলেও আজ খোলা দেখা গেছে।
খিলগাঁও ও ধলপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সেবা প্রত্যাশীদের কেউ আসছেন জন্ম সনদের জন্য, কেউ আসছেন মৃত্যু সনদের জন্য। কেউবা আসছেন ওয়ারিশ সনদের জন্য। তারা দ্রুত সময়ের মধ্য কাজ সেরে চলে যাচ্ছেন।
গতকাল রবিবার দুপুরে নগর ভবনে সংবাদ সম্মেল করেন ঢাকাবাসীর ব্যানারে করা আন্দোলনের সমন্বয়ক সাবেক সচিব মশিউর রহমান। তিনি নাগরিক সেবা চালু রাখতে সংশ্লিষ্ট দফতরে কর্মরতদের কাজে ফেরার আহ্বান জানান। কিন্তু আজও নগর ভবনে প্রশাসক এবং প্রকৌশলীদের কার্যালয়ে দেখা যায়নি।
ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে গত ১৪ মে থেকে ঢাকাবাসীর ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে সকল ধরনের নাগরিক সেবা বন্ধ রাখেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে কোরবানির ঈদের আগে আগে জরুরি সেবাসমূহ চালুর ঘোষণা দেন ইশরাক হোসেন। তারই ধারাবাহিকতায় নগর ভবনে টানা তিন দিন বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। সেসময় থেকেই নাগরিক সেবা সচল রাখারও ঘোষণা দিয়ে আসছিলেন তিনি। একইসঙ্গে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা চলমান নাগরিক সেবা বাধাগ্রস্ত করে এর সকল দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাঁপিয়ে দেওয়ার অপতৎপরতা চালাচ্ছিলেন বলেও অভিযোগ করে আসছিলেন ইশরাক হোসেন।
এদিকে, সোমবারও (২৩ জুন) নগর ভবনে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারী ঢাকাবাসী। বেলা ১১টা থেকে নগর ভবনের মূল ফটকের সামনে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এর আগে সকাল থেকেই নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে নগরভবনে আসতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। নগর ভবনের সিড়িতে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। স্লোগানে স্লোগানে তারা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার পদত্যাগও দাবি করছেন।
সকাল থেকেই নগর ভবনে গিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। আন্দোলনকারীরা এসে বিভিন্ন অফিস কক্ষ খুলে দিতেও সহায়তা করছেন। সেবাপ্রতাশীদের সেবা ঠিক মতো হচ্ছে কি না, সে বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছেন, আবার অন্যদিকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করছে।
দীর্ঘদিন পর নগর ভবনে সেবার গতি ফেরায় কর্মচঞ্চল্যতা বেড়েছে। যারা এসেছেন তারা খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাজও করে চলে যেতে পেরেছেন।
শুক্রাবাদ থেকে আসা আয়েশা বেগম বলেন, তিনি হোল্ডিং ট্যাক্স জমা দিতে এসেছিলেন। খুব দ্রুত তার কাজ হয়ে গেছে। এতো দ্রুত সময়ে সেবা পেয়ে তিনি খুব খুশি।
মিরপুরের আরিফ তরফদার বলেন, ছেলেকে লাইসেন্স হস্তান্তরের জন্য এসেছিলাম। খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে দিয়েছে। আমরা খুশি।
বাসাবো থেকে আগত মানছুরা বলেন, নগর ভবনের কার্যক্রম টানা বন্ধ থাকায় বিপদে পড়ে গেছিলাম। বাবা অসুস্থ। একটা অনুদানের টাকা জমা হয়েছিলো। আজকে আবার আবেদন জমা দিয়ে আসলাম। স্যারেরা বললো কয়েদিনের মধ্যে টাকাটা পেয়ে যাবো। এখন কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি।
খিলগাঁওয়ের আঞ্চলিক কার্যালয়ে সকাল থেকেই সেবা প্রত্যাশীদের ভিড় দেখা গেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সেবা প্রত্যাশীরা এসে সকাল থেকেই ভিড় করছেন। আশপাশের এলাকা থেকেই এসেছেন বেশিরভাগ সেবাপ্রার্থী। সালেহা বেগম এসেছেন গোড়ান এলাকা থেকে সমাজ কল্যাণ বিভাগে কাজ করতে। অল্প সময়ের মধ্যে তার প্রয়োজনীয় সেবা নিয়ে বের হওয়ার সময় কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে তিনি জানান, অনেক দিন এসে সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। তবে আজ এমনটি হয়নি বলে জানান তিনি। খুব সহজেই সেবা পেয়ে অনেকটা সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। তার মতো তিলপাপাড়ার আব্দুল খালেক এসেছেন বিদ্যুত শাখায়। তিনিও তার সেবার গতিতে সন্তোষ করেন। বলছেন, গতকালের ঘোষণার পর থেকেই সেবার গতি বেড়েছে। সন্তোষজনক সেবা পেয়ে এমন অবস্থা বিরাজমান যেন থাকে সে বিষয়ে নগর কতৃপক্ষপের কাছে প্রত্যাশা করেন।
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: