দেড় বছরের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরলেন মাসুম-রিপন

ছবি: মাসুম মোল্লা ও রিপন শিকদার
দীর্ঘ দেড় বছর লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে জিম্মি ছিলেন মুন্সীগঞ্জের মাসুম মোল্লা ও গাজীপুরের রিপন শিকদার। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএম লিবিয়ার সমন্বিত উদ্যোগে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন তারা।
শনিবার (২১ জুন ২০২৫) ভোর ৫টায় টার্কিশ এয়ারওয়েজের একটি বিশেষ ফ্লাইটে আরও ১২৩ বাংলাদেশির সঙ্গে তাঁরা লিবিয়ার ত্রিপোলি থেকে ঢাকায় পৌঁছান। এসময় ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের মানব পাচার প্রতিরোধ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদেরকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি সহায়তা দেওয়া হয়।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান (মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) জানান, ‘ভুক্তভোগীদের পরিবার থেকে গত বছরের নভেম্বরে তাদের উদ্ধারের জন্যে ব্র্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সবার নিরলস প্রচেষ্টায় দুঃসহ বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান দুই বাংলাদেশি। শনিবার ভোরে টার্কিশ এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে তারা দেশে ফিরেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ইউরোপে পাঠানোরে প্রলোভন দেখিয়ে যাদের লিবিয়া নেওয়া হয় তাদের সবাইকে ভালো চাকুরির প্রলোভন দেখালেও তারা চাকুরি পায় না। উল্টো অধিকাংশকেই লিবিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দি রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এরপর তাদেরকে জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয় অর্থ। তবে এতোকিছুর পরেও ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপের স্বপ্নে লিবিয়া যাওয়ার এই প্রবণতা থামছে না। সমস্যা সমাধানে সাধারণ মানুষ ও বিদেশগামীদের সবার আগে সচেতন হতে হবে। এলাকার স্থানীয় দালাল ও মানবপাচার চক্রকে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সমন্বিত অভিযান চালাতে হবে। বিশেষ করে অর্থের লেনদেন খুঁজে বের করতে হবে। সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
বিমানবন্দরে বিদেশ-ফেরতদের জরুরি সহায়তা দিতে গত আট বছর ধরে কাজ করছে ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টার। সিভিলে এভিয়েশন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক, এপিবিএন, এভিয়েশন সিকিউরিটি (এভসেক)সহ সবার সহযোগিতায় গত আট বছরে ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে নানা ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। শুধু ২০২৪ সালেই ৪০ জন প্রবাসীকে বিশ্বের নানা দেশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার ও মানবপাচার বিরোধী লড়াইয়ে ভূমিকা রেখে যুক্তরাষ্ট্রের টিআইপি হিরো-২০২৪ পুরস্কারে ভূষিত আল-আমিন নয়ন ও মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসা রায়হান কবিরসহ একটি টিম এই কাজে যুক্ত আছেন। প্রবাসে সংকটে আছেন এমন যে কেউ ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারেন।
বিভি/এআই
মন্তব্য করুন: