• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

বারবার বাতিল কয়লার দরপত্র,  বিদ্যুৎকেন্দ্রে লোকসান গুনছে সরকার

প্রকাশিত: ০০:৫২, ২০ আগস্ট ২০২৫

ফন্ট সাইজ
বারবার বাতিল কয়লার দরপত্র,  বিদ্যুৎকেন্দ্রে লোকসান গুনছে সরকার

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মিত কয়লাভিত্তিক বৃহৎ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য দীর্ঘমেয়াদে কয়লা সরবরাহের দরপত্র বারবার বাতিল করায় বিরাট অংকের আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখী হচ্ছে সরকার। বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর নির্ধারিত সময় পার হলেও পুরনো ‘সিন্ডিকেটের’ বাধায় কয়লার সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারেছে না আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেড (আরএনপিএল) কর্তৃপক্ষ। 

সর্বশেষ চতুর্থ দফা দরপত্র বাতিল করে পুনরায় আহবানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ফলে নতুন করে আবারও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি কোম্পানি যোগ্য বিবেচিত হলেও দেশীয় শিল্পগোষ্ঠীকে কাজ দিতে বারবার দরপত্র বাতিল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। আর সিন্ডিকেটের কারণে সাশ্রয়ী মূল্যে কয়লা সরবরাহের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আরএনপিএলের ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বর্তমানে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। দুটি ইউনিট প্রস্তুত হলেও কয়লার কোম্পানি নির্বাচন করতে না পারায় পূর্ণ সক্ষমতায় কেন্দ্রটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে সরকার। কারণ মোট ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার চীনের ঋণ রয়েছে। 

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বাণিজ্যিক উৎপাদন দফায় দফায় পেছানো হচ্ছে। অথচ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঋণ পরিশোধ শুরু হবে। বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর আগেই বিপুল পরিমাণ ঋণ পরিশোধের বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই কেন্দ্র ব্যবহার না করলেও বড় আকারের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট পরিশোধ করতে হবে সরকারকে।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যমতে, বৃহৎ কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদী কয়লার সরবরাহকারী নিশ্চিত করতে চায় আরএনপিএল কর্তৃপক্ষ। এজন্য দফায় দফায় শর্ত শিথিল করে দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়ন সম্পন্ন হলেও ‘সিন্ডিকেটের’ কারণে বারবার আটকে দেওয়া যাচ্ছে। 

সর্বশেষ চতুর্থ দফার চূড়ান্ত পর্যায়ে দরপত্রে ত্রুটি ও অনিয়ম অভিযোগে তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটি দরপত্র বাতিল করে দ্রুত নতুন দরপত্র আহ্বানের সুপারিশ করে। ভবিষ্যতে কয়লা ক্রয়ে টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন, বিশেষ করে কয়লার ক্যালোরিফিক ভেল্যু (জিএআর), অ্যাশ ফিউশন টেম্পারেচার, কয়লার সাইজ দরপত্রে শর্তে এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে, যেন দরপত্র প্রক্রিয়ায় অবাধ, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক সুপারিশ করা হয়। আগামীতে কয়লাক্রয়ের চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছরের পরিবর্তে দুই বছর করার সুপারিশ করে।

বিদ্যুৎ খাতের একাধিক সূত্রের অভিযোগ, আরএনপিএলের দরপত্র অনুযায়ী শর্ত পূরণ করে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইয়াংথাই এনার্জি পিটিই লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি যোগ্য বিবেচিত হলেও স্থানীয় কোম্পানিগুলোর চাপে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর আগেও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে দফায় দফায় শর্ত শিথিল করা হয়েছিল। এরপরও সিন্ডিকেটের পছন্দের কোম্পানি না আসায় শর্ত শিথিলের কথা বলা হচ্ছে। যদিও সর্বশেষ মূল্যায়ন আর্থিক প্রতিবেদনে ইয়াংথাই এনার্জি প্রস্তাবিত দরকে সাশ্রয়ী বলে গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছিল।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে যৌথভাবে আরএনপিএল। এরমধ্যে ১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি রয়েছে। ১৪ বছর মেয়াদী এই ঋণচুক্তির মধ্যে চার বছর গ্রেস পিরিয়ড। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এই ঋণ চুক্তি হয়। চুক্তির শর্তে বলা হয়, প্রকল্প শেষ হওয়ার ছয় মাস পর থেকে ঋণ পরিশোধ শুরু হবে।

দেশের বিদ্যুৎখাতে কেন্দ্র প্রস্তুত হলেও জ্বালানি আমদানি ও সরবরাহ সংকটে বিপুল পরিমাণ আর্থিক লোকসান দিতে হয় সরকারকে। এতে একদিকে যেমন বিদ্যুৎখাতের ব্যয় বাড়ছে। অন্যদিকে এই লোকসান ভর্তুকি হিসেবে জনগণের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ বিভাগ এ বিষয়ে কাজ করছে। কয়লার দরপত্রের জন্য যা করণীয় সেটিই করা হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগ ও আরএনপিএল সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের তথ্যমতে, দরপত্রের চূড়ান্ত পর্যায়ে আসলেও কাজ পেতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দেনদরবার চালাচ্ছে ‘পুরাতন সিন্ডিকেট’। দরপত্র প্রক্রিয়া পদে পদে প্রভাবিত করে ব্যর্থ হওয়ায় শেষ পর্যায়ে এসে তা বাতিল ও পুনঃদরপত্রের জন্য জোর তদবির করেছে চক্রটি।

আরএনপিএল সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ মেয়াদে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহের জন্য ২০২২ সালের নভেম্বরে প্রথমবার দরপত্র আহবান করা হয়। তখন সাতটি কোম্পানিকে শর্ট লিস্টও করা হয়। তবে দরপত্রে কিছু পরিবর্তন আনার ফলে তা বাতিল করা হয়। এরপর গত বছরের ১৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহবান করা হয়। ওই দরপত্রে পাঁচটি কোম্পানির মধ্যে ইয়ংথাই কারিগরিভাবে যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই দরপত্র পরে বাতিল হয়ে যায়।

গত বছরের ৬ নভেম্বর তৃতীয় দফায় আহবান করা দরপত্রে দেশী-বিদেশী অন্তত ২৫টি শিডিউল কেনে। ওই দরপত্রে কোম্পানির আর্থিক যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, কয়লাখনি, কয়লার মান সংক্রান্ত শর্ত নিয়ে আরএনপিএলের রিভিউ মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। ওইবারও শুধু কাগজপত্র জমায় দেয় সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইয়াংথাই এনার্জি। তখন দরপত্রে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে কয়েক দফা শর্ত শিথিলসহ সর্বশেষ তৃতীয় দফায়ও দরপত্র বাতিল করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

ওই সময় দরপত্রে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে আবারো শর্ত শিথিল করার পাশাপাশি যৌথ কোম্পানি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করার নির্দেশনা দেয়া হয়। যদিও বাংলাদেশের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৮ অনুসারে ইয়াংথাই এনার্জির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের সুযোগ ছিল। এরপর মন্ত্রণালয় ও বিপিডিবির তত্ত্বাবধানে শর্ত শিথিলের পর চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। 

এরইমধ্যে ইন্দোনেশিয়ার সরকার কয়লা মূল্য নির্ধারনী ইনডেক্স ইন্দোনেশিয়ান কোল ইনডেক্স-৩ (আইসিআই-৩) পরিবর্তে এইচবিএ ইনডেক্স (হারগা বাতুবারা অ্যাক্যুয়ান) অনুসরণের সিদ্ধান্ত নেয়। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় ও আগ্রহী দরদাতাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে বিপিডিবি সঙ্গে আলোচনা করে এইচবিএ ইনডেক্স অনুসরণের সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য দরপত্র জমা দেয়ার সময়সীমা দুই সপ্তাহ বাড়িয়ে করা হয় ২০ মার্চ। যদিও দরপত্রে বিগত সময় আইসিআই-৩ ইনডেক্স বেশিরভাগ দেশ অনুসরণ করে।

চতুর্থ দফায় আহ্বান করা এ দরপত্রে সরবরাহকারীর কয়লা রির্জাভের পরিমাণ বার্ষিক সক্ষমতা বিষয়টি কমিয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ আগের দরপত্রে একজন সরবরাহকারীর কয়লা রিজার্ভের পরিমাণ ২৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন থেকে কমিয়ে ১৮ মিলিয়ন টন এবং বার্ষিক গড় উৎপাদন সক্ষমতা ১০ মিলিয়ন টন থেকে কমিয়ে ৭ মিলিয়ন টন করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, কয়লা আমদানিতে দরপত্র আহ্বানের শর্তে বেশিরভাগ কোম্পানির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল না। এমনকি দরপত্রের শর্ত শিথিল করার জন্য অংশ নেয়া বেশ কয়েকটি কোম্পানির পক্ষ থেকে চাপও দেয়া হয়। কিন্তু এসব শর্ত শিথিলের পরও কোম্পানি দরপত্রে পরিপূর্ণ কাগজপত্র জমা দিতে পারেনি।

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2