কুড়িগ্রাম হানাদারমুক্ত দিবস: পতাকা উত্তোলনে উদ্ভাসিত হয়েছিল স্বাধীনতার প্রথম আলো
৬ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম হানাদারমুক্ত দিবস। একাত্তরের এই দিনে সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে বাংলার বীর সন্তানরা পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে কুড়িগ্রামকে মুক্ত ঘোষণা করেন। সেদিন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইয়ের নেতৃত্বে ৩৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা কলেজ মোড় এলাকায় পানির ট্যাংকের শীর্ষে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কুড়িগ্রামবাসীর বহু প্রতীক্ষিত বিজয় নিশ্চিত হয়। স্বাধীনতার চূড়ান্ত বিজয় ১৬ ডিসেম্বর এলেও কুড়িগ্রামের আকাশে সেদিনই উদিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলার পতাকা।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পুরো কুড়িগ্রাম অঞ্চল ৬ ও ১১ নম্বর সেক্টরের আওতায় ছিল। কেবল ব্রহ্মপুত্র দ্বারা বিচ্ছিন্ন রৌমারী ছিল মুক্তাঞ্চল, যেখানে চলত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ। নভেম্বরের শুরু থেকেই মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের যৌথ আক্রমণে পাক বাহিনীর ঘাঁটিগুলো একে একে ভেঙে পড়ে। ভূরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, চিলমারী, উলিপুরসহ বিভিন্ন এলাকা মুক্ত হওয়ার পর কুড়িগ্রাম শহরকে কেন্দ্র করে হানাদাররা শেষ শক্ত ঘাঁটি তৈরি করে।
৫ ডিসেম্বর থেকে মিত্র বাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণে বেসামাল হয়ে পড়ে পাকসেনারা। কুড়িগ্রাম-টগরাইহাট-রাজারহাট হয়ে পিছু হটে তারা। এরপরই আসে সেই ঐতিহাসিক দিন—৬ ডিসেম্বর, কুড়িগ্রাম হানাদারমুক্ত হওয়ার দিন।
সেদিনের স্মৃতি মনে করে এখনও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বাতেন বলেন, “আমাদের কাছে নির্দেশ ছিল ৬ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামকে হানাদারমুক্ত করতে হবে। আমরা সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছি। তারপর সাধারণ মানুষ আমাদের সঙ্গে যে উল্লাসে মেতে উঠেছিল—সেই স্মৃতি ভুলবার নয়।” দিবস উপলক্ষ্যে কলেজ মোড়স্থ স্মৃতিস্তম্ভ সংলগ্ন মাঠে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ, র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
হানাদারমুক্ত কুড়িগ্রামের পতাকা উত্তোলনের নেতৃত্বদানকারী বীরপ্রতীক মো. আবদুল হাই সরকার স্মৃতিচারণ করে বলেন, “৬ নম্বর সাব-সেক্টরের কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। ৬ ডিসেম্বর মুক্তি অর্জনের পর বিকেল ৪টায় নতুন শহরের পানির ট্যাংকসহ বহু স্থাপনায় আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করি। হাজারো মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের অভ্যর্থনা জানাতে রাস্তায় নেমেছিল; সেই দিনটি ভোলার নয়।”
বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন এই স্বাধীনতা রক্ষা করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়—এটাই তাদের প্রত্যাশা।
বিভি/এজেড




মন্তব্য করুন: