বাংলাদেশে আলজেরিয়া দূতাবাসে আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস পালিত
বাংলাদেশে আলজেরিয়ার দূতাবাস আজ ঢাকাস্থ দূতাবাস প্রাঙ্গণে এক আনুষ্ঠানিক ও প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আরবি ভাষা আন্তর্জাতিক দিবস ২০২৫ উদযাপন করেছে। অনুষ্ঠানে কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ, প্রযুক্তিবিদ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী নেতা, ইসলামী চিন্তাবিদ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ স্কাউটসের সদস্যসহ নানা পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক পরিসরে আরবি ভাষার প্রসার ও প্রতিষ্ঠায় আলজেরিয়ার ঐতিহাসিক ও ধারাবাহিক ভূমিকা তুলে ধরা হয়। বহুপাক্ষিক ফোরামে—বিশেষত জাতিসংঘে—আরবি ভাষার ব্যবহারের পক্ষে আলজেরিয়া দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় সমর্থন দিয়ে আসছে। ১৯৭৪ সালে এক যুগান্তকারী মুহূর্তের সূচনা হয়, যখন তৎকালীন আলজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি হুয়ারি বুমেদিন ফিলিস্তিনি প্রশ্নে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এক বিশেষ অধিবেশনে আরবি ভাষায় ভাষণ প্রদান করেন। এ ঘটনাকে জাতিসংঘে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আরবি ভাষার মর্যাদা ও ব্যবহার সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় আলজেরিয়া বিভিন্ন কূটনৈতিক প্ল্যাটফর্মে আরবি ভাষার ব্যবহার ও প্রসারে সমর্থন জারি রেখেছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত মহামান্য আব্দেলৌহাব সাইদানী মূল বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি এবারের প্রতিপাদ্য—“আরবি ভাষা: নতুন যোগাযোগ প্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের যুগ—চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা”—এর আলোকে বক্তব্য রেখে আরবি ভাষার সভ্যতাগত গভীরতা এবং বিজ্ঞান, দর্শন, সংস্কৃতি ও কূটনীতিতে এর স্থায়ী অবদানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও দ্রুত প্রযুক্তিগত পরিবর্তনে সংজ্ঞায়িত এই সময়ে আরবি ভাষার ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্ভর করবে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে এর কার্যকর সমন্বয় সাধনের পাশাপাশি ভাষাগত সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণের সক্ষমতার ওপর।
তিনি আরও জানান, আরবি ভাষা শিক্ষাকে শক্তিশালী করা, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে ডিজিটালাইজেশন ও ভাষাগত গবেষণা উৎসাহিত করা, আরবি সাহিত্য, প্রকাশনা ও অনুবাদে সহায়তা প্রদান, একাডেমিক ফোরাম ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক সহযোগিতার সেতু হিসেবে বহুভাষিকতার পক্ষে সমর্থন—এসব ক্ষেত্রে আলজেরিয়া সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন একটি গুরুত্বপূর্ণ পাণ্ডিত্যপূর্ণ উপস্থাপনা প্রদান করেন। তিনি আরবি ভাষাকে সভ্যতা ও বিশ্বাসের ভাষা হিসেবে বর্ণনা করে এর ঐতিহাসিক যাত্রা ও সমসাময়িক প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে রাষ্ট্রপতি বুমেদিনের আরবি ভাষায় ভাষণকে জাতিসংঘের একটি সরকারি ভাষা হিসেবে আরবির স্বীকৃতি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এক অনন্য মাইলফলক হিসেবে স্মরণ করেন। একই সঙ্গে তিনি ডিজিটাল যোগাযোগ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অনলাইন শিক্ষার যুগে আরবি ভাষার সামনে থাকা চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন এবং আধুনিক বিশ্বে আরবির প্রাণবন্ততা বজায় রাখতে প্রযুক্তি, ডিজিটাল কনটেন্ট ও তরুণদের সম্পৃক্ততায় অধিক বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের একটি বিশেষ আকর্ষণ ছিল আলজেরিয়ার চারজন শিশু শিক্ষার্থীর বক্তব্য, যেখানে তারা আরবি ভাষার গুরুত্ব ও সৌন্দর্য তুলে ধরে উপস্থিত সকলকে গভীরভাবে মুগ্ধ করে।
এছাড়াও, আরবি ভাষা দিবস উপলক্ষে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়, যাতে ভাষাটির ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার এবং ডিজিটাল যুগে এর ক্রমবর্ধমান ভূমিকা উপস্থাপন করা হয়।
এই উদযাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশে আলজেরিয়ার দূতাবাস জ্ঞান, সংলাপ ও উদ্ভাবনের একটি জীবন্ত ও গতিশীল মাধ্যম হিসেবে আরবি ভাষার প্রসারে তাদের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে—যা ঐতিহ্যের শিকড়ে দৃঢ় থেকেও ভবিষ্যতের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সংযুক্ত।
বিভি/এজেড




মন্তব্য করুন: