• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

নির্ধারিত মূল্যের কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুণতে হচ্ছে যাত্রীদের

প্রকাশিত: ২১:৩২, ৯ নভেম্বর ২০২১

আপডেট: ২১:৫৯, ৯ নভেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ

ঢাকা-ফেনী রুটের জনপ্রিয় পরিবহন কোম্পানি স্টার লাইন। ঢাকা থেকে ফেনী শহরের দূরত্ব ১৪৮ কিলোমিটার। নতুন করে সরকার নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী এই রুটে ভাড়া দাঁড়ায় ২৬৬ টাকা। কিন্তু স্টার লাইন পরিবহন নিচ্ছে ৩২০ টাকা করে। যাত্রীদের অভিযোগ, করোনার লকডাউনের পর থেকে কোনো যৌক্তিকতা ছাড়াই জোর পূর্বক ২৮০ টাকা ভাড়া নিচ্ছিলো বাস কোম্পানিটি। সরকারের অনুমোদনের সুযোগে সেটি আরও বাড়িয়েছে স্টার লাইন।

মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) সকালে স্টার লাইনের কাউন্টারে বসে কথা হয় রবিউল ইসলাম-এর সংগে। ফেনীর টিকেট কেটেছেন তিনি। ভাড়া বেশি নেওয়ায় আক্ষেপ করে বলেন, ‘স্টার লাইন আগে থেকেই ভাড়া বেশি নেয়। নতুন করে আরও ৫০ টাকা ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। আমাদের তো না গিয়ে উপায় নেই। আমাদের উপর জুলুম করা হচ্ছে।’

তবে স্টার লাইন কর্তৃপক্ষের যুক্তির শেষ নেই। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও তাঁরা ভাড়া কম রাখছেন বলে দাবি করছেন। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক নাসির আহমেদ বলেন, ‘৫২ বিশিষ্ট আসনের জন্য কিলোমিটারে ১ টাকা ৮০ পয়সা, ৪০ আসন বিশিষ্ট গাড়ির জন্য ২ টাকা ৩৪ পয়সা। সেই হিসেবে ১০ টাকা টোলসহ ঢাকা-ফেনীর ভাড়া আসে ৩৪৮ টাকা। আমরা নিচ্ছি ৩২০টাকা। আমরা কম নিচ্ছি।’

তাঁর বক্তব্যের প্রমাণ জানতে চাইলে বলেন, ‘আজকে (৯ নভেম্বর) এইটা প্রকাশিত হবে।’  

সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দাবির প্রেক্ষিতে তেলে চলা বাসগুলোর ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। কিন্তু এই অজুহাতে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে রাজধানীতে চলা গণপরিবহনগুলোও। আছে যাত্রী হয়রানির বিস্তর অভিযোগও। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত দাউদ হোসেন বলেন, ‘অনাবিল বাসে ২০ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা চায়। সব বাসেই একই অবস্থা।’

আনোয়ারা বেগম নামে একজন বলেন, ‘৫ টাকার ভাড়া ১৫ টাকা নিচ্ছে। আমাদের বেতন তো আর বাড়ছে না।’

পরিবহন শ্রমিক সুমন মিয়া জানান তেলের দাম বাড়ার সংগে সংগেই মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। বলেন, ‘আমি বলাকায় কাজ করি। আমাদের আগে দিতে হতো দিনে ২ হাজার, এখন দেওয়া লাগবে ৩ হাজার। মানুষ তো আমাদের গ্যাসের গাড়িতে বাড়তি টাকা দিতে চায় না। এখন মালিকের টাকা উঠাতে গিয়ে কী আমি মারামারি করবো?’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবহন নেতারা বলছেন বাড়তি ভাড়া আদায় ঠেকাতে উদ্যোগ নিচ্ছেন তারা। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘কেউ যাতে বাড়তি ভাড়া না নেয়, তা নিশ্চিতে আমরা চিঠি দিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যেই সঠিক ভাড়া নিশ্চিতে টিম নামবে রাস্তায়। আমরা নিজেরাও মিটিংয়ে বসবো।’

এদিকে, ২৩ শতাংশ তেলের দাম বাড়ার সুযোগে এক ধাক্কায় ৩৫ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়েছেন লঞ্চ মালিকরা। একে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা বলছেন যাত্রীরা। যাত্রী অধিকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়ক ও নৌপথ কোথাও ভাড়া নির্ধারণে জনগণকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। একে সম্পূর্ণ জন-বিরোধী সিদ্ধান্তও বলছেন তাঁরা। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘জ্বালানীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে করোনায় নাজেহাল মানুষ যারা ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করছিলো, তাদেরকে আরেকবার দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। যে পরিমাণ তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া মালিকদের বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার তার থেকেও কয়েকগুণ বেশি ভাড়া বাসে বাসে আদায় করা হচ্ছে। সরকার বাড়িয়েছে ডিজেল চালিত বাস ভাড়া। কিন্তু বেড়ে গেছে সব ধরণের পরিবহনের।’

‘দেশব্যাপী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাঠে নামিয়ে এই নৈরাজ্য থামানো উচিৎ। না হলে সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।’ যোগ করেন যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

অযৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণ এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি বিআরটি’র কোনো কর্মকর্তাকে।

গত ৪ নভেম্বর জ্বালানি তেলের দাম ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। এর পরই অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট শুরু করে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। এক পর্যায়ে গত রবিবার বাস এবং লঞ্চের ভাড়াও পুনর্নির্ধারণ করে সরকার।

বিভি/এমএস

মন্তব্য করুন: