কিলোমিটারপ্রতি ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তা যাবে মাটির নিচ দিয়ে

ঢাকার যানজট নিয়ন্ত্রণে এবার ভূপৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক ২৫ হতে ৭০ মিটার নিচ দিয়ে রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যার প্রতি কিলোমিটারের জন্য সর্বনিম্ন নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার দুইশ’ কোটি টাকারও বেশি। সাবওয়েটি নির্মিত হলে ঢাকা শহরের প্রায় ৪০ লাখ কর্মজীবী মানুষ মাটির নীচ দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে এবং মাটির উপরিভাগ যানজট ও জনজট মুক্ত থাকবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তথ্য বলছে, ২৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ঢাকা সাবওয়ে নেটওয়ার্ক’ এর জন্য স্পেনের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টিপসা প্রাথমিকভাবে ১১টি রুট এলাইনমেন্ট প্রস্তাব করেছে। এই ১১টি রুটের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১০৫কিলোমিটার দৈর্ঘের ৪টি রুট ২০৩০ সালের মধ্যে নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার।

ম্পেনের প্রতিষ্ঠান টিপসার প্রস্তাব করা ৪টি রুট হলো, ঝিলমিল থেকে টঙ্গি জংশন পর্যন্ত, গাবতলী থেকে ভোলাব ইউনিয়ন পর্যন্ত, কেরানীগঞ্জ থেকে সোনাপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত।

প্রকল্পের তথ্য থেকে জানা যায়, টিপসা ঝিলমিল থেকে টঙ্গি জংশন পর্যন্ত ৩৪.৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ রুটের জন্য ২৪টি স্টেশন প্রস্তাব করেছে। যার প্রতি কিলোমিটারের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় হবে প্রায় ২ হাজার তিনশত ৮৮ কোটি টাকা। ১৪টি স্টেশনবিশিষ্ট ২২.৮৯ কিলোমিটার দীর্ঘ গাবতলী থেকে ভোলাব ইউনিয়ন রুটের প্রতি কিলোমিটারের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় প্রায় ২ হাজার একশত ৫৮ কোটি টাকা। ১৫টি স্টেশনবিশিষ্ট ২৫.২২ কিলোমিটার দীর্ঘ কেরানীগঞ্জ থেকে সোনাপুর ইউনিয়ন রুটের প্রতি কিলোমিটারের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় প্রায় ২ হাজার দুইশত ১৭ কোটি টাকা এবং ৩২টি স্টেশনবিশিষ্ট ৪৫.১১ কিলোমিটার দীর্ঘ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নারায়ণগঞ্জ রুটের প্রতি কিলোমিটারের জন্য প্রায় ২ হাজার তিনশত ১২ কোটি টাকা প্রস্তাব করেছে।

মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ঢাকা শহরে সাবওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্পের খসড়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের উপর মতামত গ্রহণের বিষয়ে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রকল্পের এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজধানীর যানজট এবং জনজট নিরসনে সাবওয়ে নির্মাণের কোন বিকল্প নেই।
 
এদিকে সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেনের উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি থেকে মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও দোতলা রাস্তা নির্মাণের লক্ষ্যে যৌথভাবে চীনের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্যানডন ও সিএসআই এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

জানানো হয়, এই চুক্তির আওতায় ৬.৫ কিলোমিটার দোতালা সড়ক নির্মাণসহ ১০ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করা হবে। প্রায় ১২শ’ কোটি টাকার চুক্তিপত্রে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পক্ষে পঞ্চবটি হতে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও দোতলা রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে লিউ জিন স্বাক্ষর করেন।

সেতু বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফ্রানসিসকো ডি আসিস বেনিতেজ সালাস, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ রওশন আরা মান্নান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা এমপিসহ সেতু বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।