ঝুলে আছে সোয়া তিন লাখ এনআইডি সংশোধনের আবেদন

দিন দিন দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের আবেদনের সংখ্যা বাড়ছেই। নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে বারবার তাগাদা ও নির্দেশনা দেওয়ার পরও কমছে না নাগরিকদের এই সংক্রান্ত ভোগান্তি। বর্তমানে এনআইডি সংশোধন সংক্রান্ত প্রায় সোয়া তিন লাখ আবেদন পেন্ডিং অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি ইসির এক সমন্বয় সভায় এমন তথ্য তুলে ধরা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, ‘ক’ ক্যাটাগরিতে ৯১ হাজার ৫৪২টি, ‘খ’ ক্যাটাগরিতে ৯৬ হাজার ৭৩৭টি এবং ‘গ’ ক্যাটাগরিতে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৮৯টি আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। তিন ক্যাটাগরিতে মোট অনিষ্পন্ন আবেদন রয়েছে ৩ লাখ ২৩ হাজার ২৬৮টি। তবে ‘ঘ’ ক্যাটাগরি সংক্রান্ত কোনো তথ্য ওই  সভায় উল্লেখ করা হয়নি।

ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের সভাপতিত্বে সমন্বয় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ূন কবীর জানান, এনআইডি সংশোধন কার্যক্রমের অগ্রগতি মোটামুটি ভালো। তবে এখনো অনেক আবেদন পেন্ডিং রয়েছে।

ইসি সূত্রে আরো জানায়, সভায় এনআইডি সংশোধন কার্যক্রমে সকল ক্যাটাগরির পেন্ডিং আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করার সিদ্ধান্ত হয়। সংশোধন কার্যক্রমে কোনোভাবেই সেবাপ্রার্থীরা যেন হয়রানীর শিক্কার না হন, সংশ্লিষ্টদের সে বিষয়টিও খেয়াল রাখতে বলা হয়।

এক নজরে ১০ অঞ্চলে আবেদন, নিষ্পন্ন ও অনিষ্পন্ন আবেদনের চিত্র:

বরিশাল অঞ্চল: এই অঞ্চলে ‘ক’ ক্যাটাগরিতে আবেদন ছিল ৬৭ হাজার ৩৫৭টি। এরমধ্যে নিষ্পন্ন হয়েছে ৬৬ হাজার ১৭৩টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ১ হাজার ১৮৪টি। ‘খ’ ক্যাটাগরিতে আবেদন হয়েছিল ১৮ হাজার ১৮টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ১৬ হাজার ৬৭১টি। আর অনিষ্পন্ন রয়েছে ১ হাজার ৩৪৭টি। ‘গ’ ক্যাটাগরিতে আবেদন হয়েছিল ২৬ হাজার ৭৬২টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ২৫ হাজার ৮৩৪টি। আর এই ক্যাটাগরিতে অনিষ্পন্ন আবেদন রয়েছে ৯২৮টি।

চট্টগ্রাম অঞ্চল: ‘ক’ ক্যাটাগরিতে আবেদন জমা পড়েছিল ১ লাখ ৯১২টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ৯৪ হাজার ২৪৯টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ৬ হাজার ৬৬৩টি। ‘খ’ ক্যাটগরিতে আবেদন জমা পড়েছিল ২১ হাজার ৪১৭টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ১২ হাজার ১৮টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ৯ হাজার ৩৯৯টি। ‘গ’ ক্যাটাগরিতে আবেদন হয়েছিল ১৯ হাজার ৮৬৬টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ৭ হাজার ৭২৫টি। আর অনিষ্পন্ন আবেদন রয়েছে ১২ হাজার ১৪১টি।  

কুমিল্লা অঞ্চল: ‘ক’ ক্যাটাগরিতে আবেদন ছিল ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৯টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬২২টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ২২ হাজার ৪৯৭টি। ‘খ’ ক্যাটাগরিতে আবেদন পড়েছে ৫২ হাজার ২১০টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ২৮ হাজার ৪৬৭টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ২৩ হাজার ৭৪৩টি। ‘গ’ ক্যাটাগরিতে আবেদন পড়েছে ৩২ হাজার ৮৬১টি। নিস্পন্ন হয়েছে ১৬ হাজার ১১২টি। আর অনিষ্পন্ন রয়েছে ১৬ হাজার ৭৪৯টি।

ঢাকা অঞ্চল: ‘ক’ ক্যাটাগরিতে আবেদন জমা পড়েছিল ২ লাখ ৭ হাজার ১১১টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৯৬২টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ২৩ হাজার ১৪৯টি। ‘খ’ ক্যাটাগিরতে আবেদন পড়েছে ৩৮ হাজার ৮৮৫টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ২০ হাজার ৭৬৩টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ১৮ হাজার ১২২টি। ‘গ’ ক্যাটাগরিতে আবেদন পড়েছিল ৪০ হাজার ৩০৪টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ৮ হাজার ৭৬৯টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ৩১ হাজার ৬২৫টি।

ফরিদপুর অঞ্চল: ‘ক’ ক্যাটাগরিতে আবেদন পড়েছিল ৭৩ হাজার ৪১৬টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ৭০ হাজার ৩৭টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ৩ হাজার ৩৭৯টি। ‘খ’ ক্যাটাগরিতে আবেদন জমা পড়েছে ১৪ হাজার ৮৭১টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ১৪ হাজার ৬১৪টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ২৬০টি। ‘গ’ ক্যাটাগরিতে আবেদন পড়েছিল ২২ হাজার ৫৮০টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ১৫ হাজার ৫২৯টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ৭ হাজার ৫১টি।

খুলনা অঞ্চল: ‘ক’ ক্যাটাগরিতে আবেদন জমা পড়েছে ৩৫ হাজার ৮০৭টি। নিষ্পন্ন হয়েছে হয়েছে ২৮ হাজার ৬৮২টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ৭ হাজার ১২৫টি। ‘খ’ ক্যাটাগরিতে আবেদন জমা পড়েছে ২৫ হাজার ২১৩টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ১৪ হাজার ৪৬৯টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ১০ হাজার ৭৪৪টি। ‘গ’ ক্যাটাগরিতে আবেদন জমা পড়েছিল ২১ হাজার ৫০৯টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ৭ হাজার ৬২০টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ১৩ হাজার ৮৮৯টি।

ময়মনসিংহ অঞ্চল: ‘ক’ ক্যাটাগরিতে আবেদন জমা পড়েছিল ৯৮ হাজার ৮৭৪টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ৯৩ হাজার ৮৯৬টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ৪ হাজার ৯৭৮টি। ‘খ’ ক্যাটাগরিতে আবেদন পড়েছিল ৩৬ হাজার ৫০৩টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ৩১ হাজার ১২০টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ৫ হাজার ৩৮৩টি। ‘গ’ ক্যাটাগরিতে আবেদন পড়েছিল ৩১ হাজার ৪৯৯টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ১১ হাজার ৬০৩টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ১৯ হাজার ৮৯৬টি।

রাজশাহী অঞ্চল: ‘ক’ ক্যাটাগরিতে আবেদন পড়েছিল ১ লাখ ২৩ হাজার ৭১০টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৬৯১টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ১০ হাজার ১৯টি।  ‘খ’ ক্যাটাগরিতে  জমা পড়েছিল ৩৩ হাজার ২১০টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ২০ হাজার ১৮৬টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ১৩ হাজার ২৪টি। ‘গ’ ক্যাটাগরিতে আবেদন জমা পড়েছিল ২৪ হাজার ৮৫০টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ৯ হাজার ৯০৮টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ১৪ হাজার ৯৪২টি।

রংপুর অঞ্চল: ‘ক’ ক্যাটাগরিতে আবেদন জমা পড়েছে ৪৪ হাজার ৯৩৩টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ৪০ হাজার ৯১১টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ৪ হাজার ২২টি। ‘খ’ ক্যাটাগরিতে জমা পড়েছিল ১৭ হাজার ৬৭৮টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ৯ হাজার ৫৭৬টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ৮ হাজার ১০২টি। ‘গ’ ক্যাটাগরিতে আবেদন পড়েছে ১৮ হাজার ৮৩৭টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ৮ হাজার ৩৫১টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ১০ হাজার ৪৮৬টি।

সিলেট অঞ্চল: ‘ক’ ক্যাটাগরিতে আবেদন জমা পড়েছিল ১ লাখ ৪ হাজার ৯০৫টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ৯৬ হাজার ৩৭৯টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ৮ হাজার ৫২৬টি। ‘খ’ ক্যাটাগরিতে আবেদন পড়েছে ১৮ হাজার ৮৫৫টি। অনিষ্পন্ন রয়েছে ৬ হাজার ৬১৩টি। ‘গ’ ক্যাটাগরিতে আবেদন পড়েছে ১১ হাজার ৩৩৩টি। নিষ্পন্ন হয়েছে ৪ হাজার ৫১টি। আর অনিষ্পন্ন  আবেদন রয়েছে ৭ হাজার ২৮২টি। 

ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর থেকে এনআইডি সেবা ফ্রি ছিল। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে হারানো এনআইডি তোলা ও সংশোধন সেবায় ফি নেওয়া শুরু করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

ইসি সূত্র জানায়, ২০০৭-২০০৮ সালের ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর ২০০৯, ২০১২, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৭ এবং সর্বশেষ ২০১৯-২০২০ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারতের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সর্বশেষ গত ২ মার্চ ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন পুরুষ, ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন নারী এবং ৪৫৪ জন হিজড়া ভোটার রয়েছেন।