• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় 

প্রশাসনের বাধা পেরিয়ে ফিরল কাশফুল: প্রকৃতির অদম্য জয়গান

নূর ইসলাম নিয়ন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় 

প্রকাশিত: ১৭:৪২, ৪ অক্টোবর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
প্রশাসনের বাধা পেরিয়ে ফিরল কাশফুল: প্রকৃতির অদম্য জয়গান

বাংলা ক্যালেন্ডারের তৃতীয় ঋতু শরৎকাল। গ্রীষ্মের দহন শেষে এ ঋতু নিয়ে আসে স্নিগ্ধতা ও নির্মল শুভ্রতা। এ সময় আকাশ হয় নীলাভ, ভেসে বেড়ায় তুলোর মতো সাদা মেঘ। আর সেই মেঘের সঙ্গী হয়ে মাঠজুড়ে দোলে শুভ্র কাশফুল। আকাশ, মেঘ আর কাশফুল—এই তিনের মিলনেই শরৎকালের প্রকৃতি যেন এক অনন্য কাব্য রচনা করে।

দক্ষিণ বঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর কোলঘেঁষা কর্ণকাঠি গ্রামের সবুজ-শ্যামল পরিবেশে গড়ে উঠেছে। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে যাত্রা শুরু করা এই বিশ্ববিদ্যালয় ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন সাজে সেজে ওঠে। গ্রীষ্মে কৃষ্ণচূড়া, জারুল ও সোনালু ফুলে রঙিন হয় প্রাঙ্গণ, বর্ষায় কদমের সুবাস ছড়ায়, শরতে দোলে কাশফুল, হেমন্তে ফোটে শিউলি, বসন্তে পলাশ আর শীতে গাঁদা। এমন বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির মাঝেই শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি উপভোগ করেন জীবনের রঙিনতা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন-১ এর পাশের মাঠে প্রতি বছরই শরতের আগমনে ফোটে কাশফুল। মাঠটি ব্যবহারোপযোগী রাখতে গত বছর প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে বালু ভরাট করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, যাতে আর কাশফুল না ফোটে। কিন্তু প্রকৃতিকে থামানো যায়নি মানুষের ইচ্ছেমতো। আবারও মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে কাশফুল, যেন প্রকৃতি নিজেই জানিয়ে দিল—তার সৌন্দর্যকে দমিয়ে রাখা যায় না।

আজও কীর্তনখোলা নদীর নির্মল হাওয়ায় নেচে ওঠে নরম-কোমল কাশফুল, সূর্যের আলোয় তা ঝিকমিক করে ওঠে আরও উজ্জ্বল রূপে। ঝরাপাতার খসখসানি, বাতাসের মৃদু সুর, ফুলের দোলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ ভরে ওঠে এক স্বপ্নময় আবেশে। 

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী জাকিয়া সুলতানা শিমু বলেন, শরৎকাল আমার প্রিয় ঋতু, কারণ এর সৌন্দর্য প্রকৃতিকে করে তোলে কোমল ও আকর্ষণীয়। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে এই ঋতু আরও প্রিয় হয়ে উঠেছে। শরতে ক্যাম্পাসজুড়ে কাশফুলের শুভ্রতা এক অপূর্ব সৌন্দর্য ছড়িয়ে দেয়। আমরা বন্ধুরা তখন শাড়ি পরে ছবি তুলি, আর কাশবনে সময় কাটাই। হালকা বাতাসে দুলতে থাকা কাশফুল আর নীল আকাশের এই দৃশ্য মনকে এনে দেয় গভীর প্রশান্তি—লাল ইটের ববি ক্যাম্পাস তখন হয়ে ওঠে সত্যিই মোহনীয়।

বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও উৎসবেও কাশফুলের রয়েছে বিশেষ উপস্থিতি। দুর্গাপূজার ঢাক বাজবার আগেই কাশফুলের শুভ্রতা জানিয়ে দেয় শরতের আগমন। 

জীবনানন্দ দাশ তাঁর সেদিন এ ধরণী' কবিতার একটি পঙ্কক্তি "বকের পাখার মতো শাদা লঘু মেঘে" ভেসে থাকার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এই বর্ণনা থেকেই কাশফুলের প্রতি কবির প্রকৃতির প্রতি গভীর মুগ্ধতা ও চিত্রকল্পের ব্যবহার বোঝা যায়।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও শরতের প্রভাতকে বর্ণনা করেছিলেন বাংলার শ্যামল অঙ্গের সঙ্গে। সেই কাব্য ও সঙ্গীতের প্রতিধ্বনি যেন মূর্ত হয়ে ওঠে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাশফুলে ভরা সবুজ প্রাঙ্গণে। এই শুভ্র কাশফুল শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, এটি নির্মলতা, পবিত্রতা ও অদম্য জীবনেরও প্রতীক। 

শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, নগরায়ণ ও অব্যবস্থাপনার কারণে হারিয়ে যেতে থাকা কাশফুল যেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে চিরকাল বেঁচে থাকে।বিকেলের আলো যখন কাশফুলের মাথায় ঝিকমিক করে, তখন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আর শুধু একটি শিক্ষাঙ্গন থাকে না। এটি হয়ে ওঠে শরতের এক জীবন্ত কাব্য—যেখানে প্রকৃতি, মানুষ ও উৎসব মিলেমিশে রচনা করে এক অদম্য শুভ্রতার মহাকাব্য।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2