• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫

এ শতাব্দীতেই বিলুপ্ত হতে পারে শীতকাল, বাড়বে গরম

প্রকাশিত: ১৫:৪৩, ২০ নভেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
এ শতাব্দীতেই বিলুপ্ত হতে পারে শীতকাল, বাড়বে গরম

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে আগামীতে ঘন ঘন তাপপ্রবাহ দেখা দেবে এবং বর্ষায় আরও বেশি বৃষ্টি ঝরবে বলে সরকারের এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। সম্ভাব্য ‘সবচেয়ে খারাপ’ পরিস্থিতি হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি শতাব্দীর মধ্যেই দিনের তাপমাত্রা সাড়ে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। তাপমাত্রা বাড়বে শীতকালেও। সেক্ষেত্রে ২১০০ সালের মধ্যে এ ঋতুর বিলুপ্তির আশঙ্কাও করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ জলবায়ু নামে বুধবার (১৯ নভেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়, যেখানে গ্রীষ্মের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাওয়াকে ‘বাস্তবসম্মত’ প্রক্ষেপণ বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রীষ্মে ঘন ঘন তাপপ্রবাহ দেখা দেবে, যার বেশিরভাগই ঘটবে বর্ষা মৌসুমের আগে, মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে। ঢাকা শহরের বিষয়ে বলা হয়েছে, আগামী বছরগুলোতে রাজধানীবাসীকে বছরে অন্তত দুটি তীব্র তাপপ্রবাহ সইতে হবে। এর মধ্যে একটি তাপপ্রবাহ দেখা দেবে বর্ষা মৌসুমের আগে। আরেকটি দেখা দেবে বর্ষার পরে, অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। নরওয়ের মেটিওরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের জলবায়ু বিভাগের প্রধান হ্যানস ওলাভ বলেন, এটাই আমাদের ভবিষ্যৎ, যা সবাইকে ভোগ করতে হবে। 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে ২০১১ সাল থেকে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর ও নরওয়ের মেটিওরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট। কাজ শুরুর পর এটি ছিল তাদের তৃতীয় প্রতিবেদন, যেখানে পাঁচটি ভিন্ন পরিস্থিতির বিষয়ে পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে শতাব্দীর বাকি সময়কে দুটি ভাগ করা হয়েছে। একটি ভাগের ব্যাপ্তি ২০৪১ থেকে ২০৭০ পর্যন্ত; আরেকটি বিস্তৃত ২০৭১ থেকে ২১০০ সাল পর্যন্ত। 

অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন বজলুর রশিদ, যিনি প্রতিবেদনটি তৈরির ক্ষেত্রে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ২০৭০ সালের মধ্যে বর্ষা মৌসুমের আগের তিন মাসে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় ২০ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২১০০ সালের মধ্যে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগের ৯০ দিনের মধ্যে ৭০ দিনই তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। 

এতে আরও বলা হয়, এ ছাড়া শৈত্যপ্রবাহ বেশিরভাগ সময় দেশের উত্তর, পশ্চিম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় দেখা দিতে পারে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলো থেকে শীত হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২১০০ সালের মধ্যে শীতকাল প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। ওই সময় উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোয় ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসের মধ্যে এক থেকে দুই দিন শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে।
 বজলুর রশিদ বলেন, গবেষণার সব পদ্ধতিতেই বৃষ্টি বৃদ্ধির আভাস পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়, তার ৭১ শতাংশই ঝরে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৭০ সালের মধ্যে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১১৮ মিলিমিটার বেড়ে যেতে পারে। বেশিরভাগ বৃষ্টি হবে উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায়। 

এতে আরও বলা হয়েছে, চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা গড়ে যতটা বাড়বে, তার চেয়ে বেশি বাড়বে বাংলাদেশের উপকূলে। সেক্ষেত্রে প্রতিবছর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে পারে ৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার পর্যন্ত, যেখানে বৈশ্বিক গড় বৃদ্ধির হার থাকতে পারে ২ দশমিক ১ মিলিমিটার। আর উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় এলাকার ১৮ শতাংশ এলাকা সমুদ্রে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

‘সবচেয়ে খারাপ’ পরিস্থিতি হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার কারণে ২১০০ সালের মধ্যে সুন্দরবনের ৯১৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা (২৩ শতাংশ) পানিবন্দি হয়ে পড়তে পারে।

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন: