হিমেল বাতাসে কাঁপছে কুড়িগ্রাম, চরজুড়ে হাড় কাঁপানো শীত
কুড়িগ্রাম জেলা জুড়ে শীতের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। শৈত্যপ্রবাহ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু না হলেও হিমেল বাতাস, ঘন কুয়াশা আর রাতভর বৃষ্টির মতো ঝরা শিশিরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে, আজ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস; বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ।
নদনদী বেষ্টিত চরাঞ্চলগুলোতে শীতের তীব্রতা যেন আরও কয়েক গুণ বেশি। কুড়িগ্রামের ১৬টি নদীর তীরে বিস্তৃত ৪৬৯টি চরের মধ্যে ২৬৯টিতে মানুষের বসবাস। প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ এই চরাঞ্চলে জীবনযাপন করেন, যাদের অধিকাংশই শীতপ্রবণ অঞ্চলে বসবাস করায় হিমেল বাতাসে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী দইখাওয়ার চর, রাউলিয়া, উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের চরগুজিমারি–দাগারকুটি, চিলমারীর কড়াই বরিশাল, অষ্টমীর চর, রৌমারীর সুখের বাতি এবং রাজারহাটের তিস্তা তীরবর্তী চর বিদ্যানন্দ, ধরলা নদীর তীরবর্তী গোরক মন্ডল, ধনী রাম, জগমোহনের চর সহ নানা চরাঞ্চলে তীব্র শীত জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নও এর বাইরে নয়। ব্রহ্মপুত্র নদ-বেষ্টিত এ ইউনিয়নে প্রায় ২০টি চর রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, কালিরআলগা, গোয়াইলপুরী, ঝুনকার চর, রলাকাটা, পোড়ার চর, ভগবতীপুরসহ এসব চরে বসবাসকারী প্রায় ১৬ হাজার মানুষ শীতে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা পড়েছেন মহাবিপাকে। তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত সরকারি সহায়তার অংশ হিসেবে একটি শীতবস্ত্রও বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে, শীতের তীব্রতায় দিনমজুর শ্রেণির মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে অনেকেই কাজে যেতে পারছেন না, ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা পড়েছেন নিদারুণ কষ্টে।
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, আগামী ১৫ ডিসেম্বরের পর কুড়িগ্রামে শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে। এ কয়েক দিন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির আশপাশে উঠানামা করবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। জেলা সদর হাসপাতালসহ নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সর্দি–কাশি, জ্বর ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন—শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিভি/এজেড




মন্তব্য করুন: