• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

তেল কোম্পানির প্রধানকে কপ২৮-এর সভাপতি করা যেন শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা

প্রকাশিত: ২০:০০, ১৩ জানুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ২০:৪৭, ১৩ জানুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
তেল কোম্পানির প্রধানকে কপ২৮-এর সভাপতি করা যেন শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা

পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ আবুধাবি জাতীয় তেল কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান আল জাবেরকে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের (কপ২৮) সভাপতি হিসেবে নিয়োগের প্রতিবাদ জানিয়েছে তরুণ জলবায়ু কর্মীরা। এক প্রতিক্রিয়ায় তরুণ জলবায়ু কর্মীদের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস তেল কোম্পানির প্রধানকে কপ জলবায়ু সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচনকে 'শিয়ালের কাছে মুরগী বর্গা দেওয়া’ প্রবাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এতে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক করপোরেটদের হাতে গণমানুষের জলবায়ু সুবিচারের অধিকার ছিনতাই হয়েছে বলেও সংগঠনটি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
 
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার প্রেসিডেন্সি আবুধাবি জাতীয় তেল কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান আল জাবেরকে কপ২৮ সম্মেলনের সভাপতি নিয়োগ করেন। যিনি দুবাইয়ে এ বছরের ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের তত্ত্বাবধান করবেন। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্প স্তরের থেকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত করা এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তির উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য বিশ্বকে কীভাবে অগ্রসর করা যায় তা নিয়ে দরকষাকষি করতে ১৯০টিরও বেশি দেশের রাজনৈতিক নেতারা এ সম্মেলনে একত্রিত হবেন।

ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান বলেন, তেল, গ্যাস, জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানির প্রতিনিধিরা কপ২৮ বা কোনো জলবায়ু সংলাপেরই নেতৃত্বে থাকতে পারেন না। থাকলে তা হবে স্বার্থের দ্বন্দ্ব। তেল কোম্পানির প্রধানকে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের সভাপতি করে শেয়ালের কাছেই মুরগী বর্গা দেওয়া হলো। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত করে কার্বন নিঃসরণ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

সোহানুর রহমান ২০২১ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে কপ২৬ সম্মেলনে পর্যবেক্ষক ছিলেন। গত বছরে মিশরের শার্ম এল শেখে অনুষ্ঠিত কপ২৭ সম্মেলনে সরকারের অফিসিয়াল যুব প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। জীবাশ্ম  জ্বালানির প্রসারের বিরুদ্ধে তিনি বহুবছর থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তৎপর রয়েছেন।
 
১৯ শতাব্দীর গোড়ার দিকে যে শহর থেকে শিল্প বিপ্লব শুরু হয়েছিল, সেই গ্লাসগো থেকেই জলবায়ু সম্মেলন গণমানুষের জলবায়ু অধিকার ছিনতাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৬) অংশ নেওয়াদের মধ্যে ৫০৩ জন জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের লবিস্ট  ছিলেন। মিশরে অনুষ্ঠিত কপ২৭ সম্মেলনে তেল এবং গ্যাস কোম্পানিগুলোর পক্ষেও প্রায় ৬০০ জনেরও বেশি লবিস্ট তৎপরতা চালিয়েছেন। এই ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি লবিস্ট অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ২০২১ সালের সম্মেলন থেকে ২০২২ সালের সম্মেলনে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এরা মুনাফার লোভে জেনেশুনে পৃথিবীর ক্ষতি করেছে ও দূষণকারী দেশের রাজনীতিকদের প্রভাবিত করছে, জলবায়ু সংক্রান্ত কার্যক্রম ও পদক্ষেপের অগ্রগতিতে বাধা দিচ্ছে।

সদ্য সমাপ্ত কপ২৭ সম্মেলনের অভিজ্ঞতা থেকে সোহানুর রহমান বলেন, মিশরের কপ ছিল নীরব কপ; যেখানে নাগরিক সমাজের কণ্ঠস্বর তোলা ও প্রতিবাদ জানানোর কোনো সুযোগ ছিল না। পৃথিবী বাঁচানোর সম্মেলন কপ এখন পরিণত হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের বাণিজ্য মেলায়। আর বৃহৎ তেল কোম্পানির প্রধানকে ২০২৩ সম্মেলনের সভাপতি নিয়োগ করে কপ সম্মেলনের কফিনে শেষ পেরেকটাও গেঁথে দিল পেট্রোলিয়াম নির্ভর রাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাত। তাই সম্মিলিতভাবে, জলবায়ু সংকটের পেছনে যারা প্রকৃত অপরাধী, সেই জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে মোকাবিলার সময় এসেছে।

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন: