• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

নগদ অর্থে যাকাত দেওয়া উত্তম

নাসির উদ্দিন

প্রকাশিত: ১৫:৩৪, ২২ মার্চ ২০২৫

ফন্ট সাইজ
নগদ অর্থে যাকাত দেওয়া উত্তম

শারীরিক ইবাদতের নেতা নামাজ। আর্থিক ইবাদতের নেতা যাকাত। তাই, নামাজের মতো সমান গুরুত্ব জাকাতেরও। ধনীদের সম্পদে গরীবের হক যাকাত। তাই ধনীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গরীবদের হক আদায় করার জন্য। তাই, যাকাত প্রদানেই কল্যাণ নিহিত। যারা অকল্যাণ মনে করছেন, এই সম্পদ তার শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, সামর্থ্য অনুযায়ী যাকাত আদায় করা ফরজ। 

শুধুমাত্র স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভই নয়, একে অপরের প্রতি সহানুভূতি বৃদ্ধি ও সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ গঠনে অনন্য সাধারণ ভূমিকা পালন করে যাকাত। যাকাত দিয়ে আপনি বাঁচাতে পারেন কারো জীবন, ফোটাতে পারেন তার প্রিয়জনের মুখে হাসি। হতে পারেন কারো বিপদের বন্ধু। একইসাথে লাভ করতে পারেন স্রষ্টার সান্নিধ্য। তবে, সবচেয়ে বড় বিষয় যেটি –যাকাত আপনাকে এনে দেবে এক অসাধারণ তৃপ্তি। একজন মানবতাবাদী হিসেবে আরেকজন অসহায় মানুষের দুঃসময়ের বন্ধু হয়ে নিজের কাছে নিজে যে প্রশান্তি পাবেন –তার কোন বিকল্প নেই। বান্দাকে স্রষ্টার নিকটে আসতে সহায়তা করে যাকাত । 

যাকাতদাতার সম্পদ কমে না বরং বৃদ্ধি পায় এবং তার অন্তর কৃপণতার কলুষতা থেকে পবিত্রতা লাভ করে। তাই এর নামকরণ করা হয়েছে যাকাত। গরীবদের হক যাকাত দয়া নয়, এটি তাদের প্রাপ্য অধিকার। তাই মৃত্যু আসার আগে আর্থিক হক আদায় করা মুমিনদের কাজ। কারণ মৃত্যু কখন আসবে তা কেউ জানে না। মরে আফসোস করার আগে তাই যাকাত আদায় করা মুসলমানের কাজ। মৃত্যুর পর সেই সুযোগ কেউ পাবেন না। 

আবু বক্কর (রা.) যখন খলিফা বলেন, তখন কিছু মানুষ যাকাত দিতে অস্বীকার করলেন। তারা বললেন, ইসলামে জাকাত নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল মহানবী (সা) এর সময়ে। রাসূল (সা.) এর সময় আমরা যাকাত দিতাম। তিনি মারা গেছেন। অতএব, এখন আমরা আর যাকাত দিবো না। তখন আবু বক্কর (রা.) বললেন, যারা নামাজ এবং জাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে আমি তাদের সাথে জিহাদ করবো। রাসূল (সা.) এর সময় যারা উটের একটি ছোট বাচ্চাও যাকাত দিতেন, তাদের তাই দিতে হবে। অর্থাৎ, তিনি জাকাতকে নামাজের মতো গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই নামাজের মতো জাকাত না দেওয়াও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 

সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মিটিয়ে যে সম্পদ উদ্ধৃত থাকবে, শুধুমাত্র তার উপরই যাকাত ফরয হবে। এ প্রসঙ্গে আল-কুরআনে উল্লেখ রয়েছে: লোকজন আপনার নিকট (মুহাম্মদের [সা.] নিকট) জানতে চায়, তারা আল্লাহর পথে কী ব্যয় করবে? বলুন, যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত। আল্লাহ এভাবেই তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট বিধান বলে দেন।

যাকাত বছরে একবার আদায় করতে হয়। ব্যক্তি নিজ নিজ সময় আনুযায়ী পূর্ণ বছর হিসেব করে যাকাত দিবেন। যাকাত সারা বছর দেওয়া যায় এবং অগ্রিমও দেওয়া যায়। হিসাব রাখবেন। বেশ-কম হলে তা বছর অনুযায়ী সমন্বয় করবেন, আগের-পরের বছরের সাথে। মানুষ রমজানে বেশি দেয় ৭০ গুণ বেশি সওয়াবের আশায়। তাই, রমজানে বেশি মানুষ যাকাত আদায় করেন। অন্য মাসে আদায় করলেও কোন অসুবিধা নেই। কারো প্রয়োজনে দিতে পারেন একই সওয়াব পাবেন। 

রাসূল (সা.) বলেছেন, যাকে আল্লাহ তা’য়ালা প্রচুর সম্পদ দান করেছেন, সে যদি তার যাকাত আদায় না করে তবে কিয়ামত দিবসে তার সঞ্চিত সম্পদ বিশাল আকার বিষধর সাপের আকৃতি ধারণ করবে, যার চোখের উপর দু’টি কালো চিহ্ন থাকবে। সে ব্যক্তিকে দংশন করতে থাকবে এবং বলবে, আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ। ‘স্থলভাগে বা সমুদ্রে সম্পদ নষ্ট হয় একমাত্র যাকাত না দেওয়ার কারণে।’ 

আল কুরআনের ১৮ সূরার ২৯ টি আয়াতে যাকাত শব্দটির বিবিধ ব্যবহার রয়েছে। যাকাত সম্পর্কে বলা হয়েছে, “অআক্বীমুছ ছালাতা অআতুয-যাকাতা (তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও) (বাকারা: ১১০)। “যারা যাকাত প্রদান করে না, আর তারাই পরকালে অবিশ্বাসী” (হা-মীম সাজদাহ: ৭)। “মানুষের ধন-সম্পদে প্রবৃদ্ধি সাধিত হবে বলে তোমরা সুদে যা দিয়ে থাক, আল্লাহর দৃষ্টিতে তা ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করে না। কিন্তু, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যে যাকাত তোমরা দিয়ে থাক তা-ই বৃদ্ধি পায়; প্রকৃতপক্ষে তারাই সমৃদ্ধশালী।” (সূরা রুম:৩৯)। “আমি তাদের প্রতিষ্ঠা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং ভাল কাজের আদেশ দেবে ও মন্দকাজ থেকে নিবৃত্ত করবে। সকল কাজের পরিণাম আল্লাহর হাতে। (সূরা হাজ্জ:৪১)। 

“যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না ওদের মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও যে, জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের ললাটে, পার্শ্বদেশে ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এতো তা-ই যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জিভূত করেছিলে। সুতরাং, যা তোমরা পুঞ্জিভূত করেছিলে তার স্বাদ গ্রহণ করো।” (তাওবা:৩৪-৩৫)। “দুর্ভোগ মুশরিকদের জন্য যারা যাকাত দেয় না এবং আখিরাতকেও অবিশ্বাস করে।” (হা-মীম আস-সাজদা:৬-৭)। “যদি তারা তাওবা করে সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় তবে তারা তোমাদের দীনি ভাই” (তাওবা: ১১)।  

আমরা অনেকে যাকাতের পণ্য বলে কিছু কম দামি কাপড়-চোপড় গরীব মানুষকে দান করি যা কোনমতেই কাম্য নয়। কারণ, যাকাতপ্রার্থী ব্যক্তির প্রয়োজনীয়তা আপনার বুঝার কথা নয়। তার জামা-কাপড়ের চাহিদা নাও থাকতে পারে। কম-বেশি নগদ অর্থ পেলে তিনি প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারেন। তাই, নগদ অর্থে যাকাত দেওয়া উত্তম। হাদীসে এসেছে, তোমরা যাকাতের মাধ্যমে তোমাদের মাল হেফাজত কর। সদকার মাধ্যমে রোগীর সেবা তালাশ কর। দোয়ার মাধ্যমে মুছিবত দূর কর। 

যাকাতমুক্ত সম্পদ সম্পর্কে মুহাম্মদ [সা.] বলেছেন, বাসস্থানের জন্য নির্মিত ঘরসমূহ, ঘরে ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, আরোহণের জন্য পশু, চাষাবাদ ও অন্যান্য আবশ্যকীয় কাজে ব্যবহৃত পশু ও দাস-দাসী, কাঁচা তরিতরকারিসমূহ এবং মৌসুমী ফলসমূহ যা বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না, অল্পদিনে নষ্ট হয়ে যায়, এমন ফসলে যাকাত নেই। 

যাদের যাকাত দেবেন: ১.ফকির, ২.মিসকীন, ৩.যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী, ৪.নওমুসলিম, ৫. ক্রীতদাস (মুক্তির উদ্দেশ্যে), ৬.ধনী সম্পদশালী ব্যক্তি যার সম্পদের তুলনায় ঋণ বেশি, ৭.আল্লাহর পথে জেহাদে রত ব্যক্তি, ৮. মুসাফির (যিনি ভ্রমণকালে অভাবে পতিত)।

যাকাত ফরজের শর্তাবলী: ১. মুসলমান হওয়া। ২. জ্ঞানবান হওয়া। পাগলের ধনের যাকাত দিতে হয় না। যদি তাহার মস্তিষ্ক বিকৃতি সারা বৎসর বিচ্ছিন্নভাবে থাকে। ৩. বালেগ হওয়া। অপ্রাপ্ত-বয়স্কের মালিকানা সত্ত্বে তাহার যত ধনই থাকুক না কেন উহার কোন যাকাত দিতে হয় না। ৪. স্বাধীন হওয়া। কারণ, ক্রীতদাসের উপর যাকাত ফরয নয়। ৫. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া। ৬. নিসাব পরিমাণ সম্পদের এক বছর পূর্ণ হওয়া । ৭. ঋণ মুক্ত হওয়া।

যাকাতযোগ্য ধন-সম্পদ পবিত্র ও হালাল হতে হবে। হারাম পথে উপার্জিত কিংবা হারাম মালের উপর যাকাত ধার্য্য করা যায় না। স্বর্ণ ৭.৫ (সাড়ে সাত) ভরি (তোলা), রূপা ৫২.৫ (সাড়ে বায়ান্ন) ভরি (তোলা)। অথবা, এর সমমূল্যের নগদ টাকা ও ব্যবসাপণ্য। তৎকালীন সময়ে সাড়ে সাত ভরি (তোলা) স্বর্ণ ও সাড়ে বায়ান ভরি (তোলা) রৌপ্যের মূল্যমাণ সমান ছিল। বর্তমানে স্বর্ণ ও রৌপ্যের মূল্যমাণে বিশাল ব্যবধান। এই ব্যবধানের কারণে যাকাতদাতাদের মনে যাকাত না দেওয়া ও কম দেওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়েছে। তাই, যাকাত দেওয়ার সময় বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত। সারা বছরের খরচাদি বাদে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অর্থাৎ প্রায় ৮৬/৮৭.৪৫ গ্রাম সাড়ে বায়ান্ন তোলা রোপ্য অর্থাৎ ৫৯৫ গ্রাম/৬১৩ গ্রাম বা মূল্যে সমপরিমাণ সম্পদ থাকে তাকে চান্দ্রবর্ষ অনুযায়ী শতকরা আড়াই টাকা হিসেবে হিসেব করে যতো টাকা হয় তার যাকাত দিতে হবে। অর্থাৎ, লাখ টাকায় আড়াই হাজার টাকা। 

মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, দাদা-দাদী, নানা-নানী, ছেলে-মেয়ে ও নাতী-নাতনীকে যাকাত দিতে পারবেন না। ধনী ও অমুসলিমকেও যাকাত দেওয়া যাবে না। বাকি সবাইকে যাকাত দিতে পারবেন। ভাই গরীব হলে দিতে পারবেন। চাচা, খালা, ফুফাকে দিতে পারবেন। আত্মীয় স্বজনকে দেওয়ার সময় তারা লজ্জিত হতে পারেন, সেই কারণে যাকাত বলার দরকার নেই, নিয়ত হলেই হলো। মুখে হাদিয়া থাকলো, অন্তরে থাকল যাকাত। তবে, শর্ত হলো যাকাতের উপযুক্ত হতে হবে।    

রাষ্ট্রে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য কমিয়ে আনা এবং দারিদ্র্য সমস্যা সমাধানে যাকাত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। আমরা সঠিক নিয়মে যাকাত দিবো। যাকাত দিতে উৎসাহিত করবো। গরীব-দুঃখী মানুষের কল্যাণে এগিয়ে যাবো, এটাই হোক আমাদের প্রত্যাশা। আল্লাহপাক আমাদের সকলকে যথাযথভাবে যাকাত আদায় করার তৌফিক দিন। আমিন। 

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2