বিচারালয়ে আইনজীবীদের ওপর হামলা ন্যাক্কারজনক: বিএসপিপি

ফাইল ছবি
ঢাকা কোর্টে আইনজীবীদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় পুলিশী হামলায় অর্ধশতাধিক আইনজীবী আহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ। বিএসপিপির আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গনি বলেন, বিচারালয়ে আইনজীবীদের উপর এমন ন্যাক্কারজনক হামলা সভ্য সমাজে কল্পনাও করা যায় না।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক যুক্ত বিবৃতিতে তারা এ কথা বলেন।
পেশাজীবী নেতৃদ্বয় আইনজীবীদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বিবৃতিতে বিএসপিপি নেতৃদ্বয় বলেন, ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগ, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ এবং স্বঘোষিত `শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে বিজ্ঞ আইনজীবীরা আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সামনে জড়ো হন। এরপর সরকারবিরোধী আইনজীবীদের মোর্চা ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফোরামের (ইউএলএফ) উদ্যোগে পদযাত্রা শুরু হয়। ঢাকা বার ভবন থেকে আইনজীবীদের পদযাত্রা প্রধান সড়কে প্রবেশ করলে সরকারের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ সদস্যরা আইনজীবীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। নারী আইনজীবীরাও পুলিশের লাঠিপেটা থেকে রেহাই পায়নি।
পেশাজীবীদের এই দুই নেতা বলেন, সরকার দেশ থেকে আইনের শাসন নির্বাসনে দিয়ে মগেরমুল্লুক কায়েম করেছে। দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া। অথচ পুলিশের হাতেই এখন মানুষের জীবন অনিরাপদ।
আমরা জানি পুলিশবাহিনীর মূল দর্শন ‘দুষ্টের দমন শিষ্টের লালন’। এই মূলমন্ত্র নিয়েই পৃথিবীতে পুলিশবাহিনী সৃষ্টি করা হয়েছে, যার সদস্যরা কেবল জনসাধারণের কল্যাণে নিবেদিত থাকবে। অথচ আমরা এখন দেখছি পুরো উল্টো চিত্র। পুলিশের সামনেই সরকারি দলের অস্ত্রধারীরা ঘুরে বেড়ায় পুলিশ তাদের ধরে না। আর বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের বিনা কারণে ধরে এনে হত্যা করছে। শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে গুলি করে বুক ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে। আইনজীবীরাও রেহাই পাচ্ছে না। দেশে অব্যাহত গুম, খুনের সঙ্গেও আজ রাষ্ট্রীয় এ বাহিনী জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
দেশকে পুরোপুরি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে উল্লেখ করে পেশাজীবী নেতৃদ্বয় বলেন, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে শাসক দল তার শাসন কাজ পুলিশবাহিনীর ওপর নির্ভর করে ইচ্ছামতো স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে পরিচালনা করে।এ ধরনের রাষ্ট্রে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশে বাধা দেয়া, ভিন্ন মতাদর্শের রাজনীতি সীমিত এবং সিক্রেট পুলিশ দ্বারা বিরোধী রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বাংলাদেশ আজ এর ব্যতিক্রম নয়।
জার্মানির হিটলার,চিলির ফ্যাসিস্ট অগাস্টো পিনোচেটের মতো আজ শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য পুলিশ ও র্যাবকে ব্যবহার করে এক ভয়ঙ্কর ও বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
হিটলার জার্মানির জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে নাজি পুলিশ গঠন করেছিল, তাদের আচরণ ছিল ভয়ংকর। কেউ তার কৃতকর্ম সম্পর্কে টুঁ শব্দটি উচ্চারণ করতে পারত না। বাংলাদেশেও আজ একই কায়দায় পুলিশী নির্যাতন চলছে। লেখলে জেল,সমালোচনা করলে জেল, সভা-সমাবেশে বাধা,মিছিলে গুলি করে হত্যা, রাতের আঁধারে গুম-ক্রসফায়ার, ফরমায়েশি সাজা, গায়েবি মামলা,দিনের ভোট আগের রাতে সম্পন্ন করে ক্ষমতা দখল, অন্যায়ের প্রতিবাদ মানেই চৌদ্দ শিখের ভাত।
বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান সরকারের অন্যায়, অবিচার ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারছে না। দেশের কোথাও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না। কেউ প্রতিবাদ করলে হামলা, মামলা ও গুমের স্বীকার হতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে দেশে এক ভয়ঙ্কর পরিবেশ বিরাজ করছে। সরকার দেশের মানুষের বাক স্বাধীনতা রোধ করে দেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। সুশাসনের পরিবর্তে আজ দানবীয় শাসন চলছে।
দেশের মানুষ আজ এমন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চায়। জনগণের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: