• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

সাদি মহম্মদের রবিরাগ বেঁচে থাক

জাকির হোসেন তপন

প্রকাশিত: ১৭:৩৬, ১৯ মার্চ ২০২৪

ফন্ট সাইজ
সাদি মহম্মদের রবিরাগ বেঁচে থাক

শান্তিনিকেতন থেকে গান শিখে দেশে এসে সাদি মহম্মদ সরকারি সংগীত মহাবিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসাবে কাজে যোগ দেন। পাশাপাশি বাসায় ছাত্র ছাত্রীদের গান শেখাতেন। ১৯৮৭ সালে (যতদূর মনে পড়ে) তাঁরই কিছু প্রিয় ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে গড়ে তোলেন রবীন্দ্র সংগীত ভিত্তিক গানের দল- রবিরাগ। সে সময়ে রবিরাগ খুব মানসম্পন্ন, জমকালো অনুষ্ঠান করত। সব পত্রিকায় সেসব অনুষ্ঠানের ছবি সহ সংবাদ ছাপা হ’ত গুরুত্বের সাথে। রবিরাগের সদস্যরা ছিলেন যেন একেকজন তারকা! আমি ৮৯ এর কোন একসময়ে রবিরাগে যুক্ত হই। সে সময়েই আসলে আমি অনেক গুণী মানুষের নিকট সান্নিধ্য লাভ করার সুযোগ পাই। ভালো গান গাইবার সুবাদে সবাই ভালবাসতেন, স্নেহ করতেন।

 

কত শিল্পী সাদি মহম্মদের সেই ছোট্ট জীর্ণ পুরাতন ঘরখানায় আসতেন। একসঙ্গে গানের অনুশীলন করতাম। ছিলেন শামা রহমান, সালমা আকবর, সাজেদ আকবর, মনসুরা বেগম, লিলি ইসলাম, অদিতি মহসীন, স্বপন দত্ত, নাঈমা আলী, শামা আলী, নাহার জামিল, আমিনা আহমেদ, হাবিব উদ্দিন ফারুক, নন্দিতা ইয়াসমিন, মাহবুবুল মুনমুন, গোলাম হায়দার, বাপ্পী (আর্টিস্ট), সোমা, এণাক্ষী, সন্ধ্যা ভট্টাচার্য, মাখন হাওলাদার, শাফিক, দুলাল শর্মা, রনজু, সুজন, নীলুফার বানু লিলি, ডেইজী আহমেদ, তপন ভট্টাচার্য, শহীদুর রহমান, চঞ্চল খান, চিত্রা সরকার, শাকিল হাশমি, নাজনীন সুলতানা, সাঈদা হোসেন পাপড়ি, শামীমা আলম চিনু, আয়শা ফরিদ, কুমকুম মির্জা, এ কে আজাদ, অনুপম কুমার, পারভীন ইয়াসমিন, নিরুপম, জনি ঘোষ সহ আরও অনেকে রবিরাগের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এর সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। 
ধীরে ধীরে রবিরাগ তার ঔজ্জ্বল্য হারাতে থাকে। পুরনো সদস্যরা অন্যান্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নতুন সদস্য আসে। রবিরাগ ছিল সাদি মহম্মদের খুব প্রিয় এক বিষয়/ সংগঠন। রবিরাগ এখনো সক্রিয় আছে। 
যারা এখন এর সঙ্গে যুক্ত আছেন তারা সাদি মহম্মদের স্মৃতি রক্ষার্থে সুচিন্তিত ও অর্থপূর্ণ কোন উদ্যোগ নিতে পারেন বলে আমি মনে করি…

লক্ষ মানুষকে ঘিরে বসবাস, অথচ কী প্রাণঘাতি নিঃসঙ্গতা…
আমি মিউজিক কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম সাদি মহম্মদের পরামর্শে। সম্পর্কে তিনি আমার চাচা। আম্মাকে বললেন- ভাবী, কোন চিন্তা না করে তপনকে আমার কলেজে দিয়ে দিন। তখন তিনি ছিলেন সেখানকার প্রভাষক। তিনি গান শেখাতেন (প্রাক্টিক্যাল), বন্যা আপা থিওরী ক্লাস নিতেন। সে সময়ে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল ইর্ষনীয়। শিক্ষার্থীরা তাঁকে মান্য করত, ভালবাসত। এর পেছনে প্রধান যে কারণ, সেটা ছিল মানুষের  সঙ্গে তাঁর ব্যবহার! শিক্ষকদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় তিনি ছিলেন সর্বাগ্রে। একবার কাউকে দেখলে তিনি দীর্ঘদিন ভুলতেন না। কথা বলতেন অমায়িক ভঙ্গীতে, তাতে যে কারো মন ভালো হতে বাধ্য।
আমি ক্যান্টনমেন্ট থেকে ক্লাস করতে আসতাম। মাঝেমাঝে তিনি আমাকে বলতেন- “দুপুরে খেয়েছ কিছু? আমার সাথে বাসায় চলো, খেয়ে আবার এসো।“ 
নিয়মিত যোগাযোগ ছিল না অনেকদিন ধরে। তবে তিনি সব সময়ই আমাদের আলোচনায় ছিলেন। 
একাকীত্ব, নিঃসঙ্গতা, হতাশা, অভিমান সহ আরও অনেকগুলো কারণ আমরা খুঁজে পেলাম এই মর্মান্তিক মৃত্যুর পেছনে। 

মন্তব্য করুন: