• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

শাফিন খানের দাফন সম্পন্ন, শোকাহত সাংবাদিক সমাজ ও সহকর্মীরা

জুয়েল আহমেদ, খুলনা থেকে ফিরে

প্রকাশিত: ১৫:১১, ২০ মে ২০২৫

ফন্ট সাইজ
শাফিন খানের দাফন সম্পন্ন, শোকাহত সাংবাদিক সমাজ ও সহকর্মীরা

খুলনার টুটপাড়া কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বাংলাভিশনের ন্যাশনাল ডেক্স ইনচার্জ শাফিন খান। জীবনের পূর্ণতায় পৌঁছানোর আগেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো এই সংবাদকর্মীর অকাল মৃত্যুতে স্তব্ধ সাংবাদিক সমাজ, সহকর্মী, স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। সরল ও বিনয়ী স্বভাবের এই মানুষটি পেশাগত দায়িত্বে ছিলেন আপসহীন, সহকর্মীদের কাছে ছিলেন এক অসাধারণ প্রেরণার উৎস। তার চলে যাওয়া সাংবাদিকতার অঙ্গনে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি করেছে।

শাফিন খান গেল ১৯ বছর ধরে বাংলাভিশনের সংবাদ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন একজন নির্ভরযোগ্য সংবাদ সম্পাদক হিসেবে। সংবাদ বাছাই, প্রতিবেদন পরিকল্পনা ও উপস্থাপনায় তার সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গি ও গভীর বিশ্লেষণ ছিল প্রশংসনীয়। জেলার সহকর্মীদের কাছে  তিনি ছিলেন একজন অভিভাবকতুল্য ব্যক্তিত্ব। কর্মক্ষেত্রে সবসময় সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন, শিখিয়েছেন কীভাবে সত্যনিষ্ঠ থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়।

শাফিন খানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে সাংবাদিক মহলে। সহকর্মীরা কেউ যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, এমন এক প্রাণবন্ত, সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষ হঠাৎ করে আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিতে পারেন। 

মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঢাকা থেকে খুলনায় তার মরদেহ পৌঁছালে সহকর্মী, স্বজন, বন্ধু ও আত্মীয়দের চোখের জলে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ তৈরি হয়। বুধবার (২০ মে) সকাল সাড়ে দশটায় সিটি কর্পোরেশনের উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তার জানাজায় অংশ নেন খুলনা ও ঢাকা, রংপুর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। জানাজার পর খুলনার টুটপাড়া কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। বিদায়ের সময় অনেকের চোখে অশ্রু, মুখে শুধু একটি বাক্য— “এত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার কথা ছিল না শাফিন খানের”।

শাফিন খানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বাংলাভিশন পরিবার। এক বিবৃতিতে তারা জানান, "আমরা গভীর শোক ও দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের সহকর্মী, ভাই ও অভিভাবকতুল্য বন্ধু শাফিন খান আর আমাদের মাঝে নেই। তার চলে যাওয়ায় আমাদের হৃদয়ে এক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে যা কখনো পূরণ হওয়ার নয়।"

বাংলাভিশনের চিফ রিপোর্টার জাহাঙ্গীর আকন্দ জানিয়েছেন, “শাফিন ছিলেন একজন নিঃস্বার্থ, নিষ্ঠাবান ও সহমর্মী সহকর্মী। তিনি কাজের প্রতি ছিলেন আন্তরিক এবং কঠোর পরিশ্রমী। তার মতো সহকর্মী পাওয়া আজকের দিনে অত্যন্ত দুর্লভ। সাংবাদিকতা পেশার প্রতি তার ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ আমাদের জন্য এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

বাংলাভিশনের বিশেষ প্রতিবেদক আহমেদ সরোয়ার জানান, শাফিন খানের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল— মানুষের কথা শোনার ধৈর্য, সহানুভূতিশীল মনোভাব এবং সংকটকালে পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা। অফিসের যেকোনো সমস্যা সমাধানে তার মতামত ও পরামর্শ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে বলেন, তিনি শুধু একজন সাংবাদিক ছিলেন না, ছিলেন একজন ভালো মানুষ, একজন পথপ্রদর্শক।

তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ শোক জানিয়ে লিখেছেন স্মৃতিচারণামূলক বার্তা। অনেকেই লিখেছেন "তোমার স্মিত হাসি, নিরহংকার স্বভাব আর অন্তরের বন্ধুত্ব কোনদিন ভুলব না।"

শাফিন খানের মৃত্যু শুধু একটি পরিবার কিংবা প্রতিষ্ঠান নয়, একটি পেশার জন্যও বড় ক্ষতি। এই সময় যখন গণমাধ্যম নানা সংকটে আছে, তখন এমন একজন সৎ, সাহসী ও বিবেকবান সাংবাদিকের প্রস্থান আরও গভীরভাবে ভাবায়। তার কর্ম ও আদর্শ নবীন সংবাদকর্মীদের জন্য পথ দেখাবে, অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকবে।

অকালপ্রয়াত এই সাংবাদিক রেখে গেছেন স্ত্রী, এক কন্যা। এক ছেলে ও অসংখ্য গুণগ্রাহী। তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সহকর্মীরা বলেছেন, বাংলাভিশন পরিবার এই দুঃসময়ে পাশে থাকবে এবং প্রয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

শাফিন খানের প্রয়াণে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা কখনো পূরণ হবার নয়। তবে তার সততা, পেশাদারিত্ব এবং মানবিক গুণাবলি তাকে স্মরণীয় করে রাখবে সাংবাদিক সমাজে। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তার সেই অঙ্গীকারই আমাদের পথচলায় শক্তি যোগাবে।

আজ তার চির বিদায়ের দিনে সহকর্মীদের কণ্ঠে একটি কথাই বারবার উচ্চারিত হয়েছে “ভালো থেকো শাফিন ভাই, শান্তিতে থেকো। আমরা আপনাকে ভুলব না।”

খুলনার সরদার জামে মসজিদের ইমাম সালমান বিন আমীন জানাজার নামাজ পড়ান। জানাজায় অংশ নেন খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, মহানগর জামায়াতে ইসলামের আমীর মাওলানা মাহফুজুর রহমান, সেক্রেটারী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলান, এনসিপির মুখ্য সংগঠক হামিম রাহাত, প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব রাফিউল ইসলাম টুটুল, বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব এহতেশামুল হক শাওন, সিনিয়র সাংবাদিক শেখ দিদারুল আলম, বাংলাভিশনের সিনিয়র নিউজরুম এডিটর নিশান আব্দুল্লাহ, খুলনা ব্যুরো চিফ আতিয়ার পারভেজ, রংপুর ব্যুরো চিফ জুয়েল আহমেদ, সাংবাদিক আব্দুর রাজ্জাক রানা, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি খোদা বক্স ডাব্লিউ, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান, বাগেরহাট প্রতিনিধি মাসুদুল হক, গ্লোবাল টিভির গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি আতিক বাবু, ক্যামেরা পার্সন শাহনেওয়াজ জনি।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: