• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান ইশরাকের

প্রকাশিত: ১৪:২৬, ২৫ জুন ২০২৫

আপডেট: ১৬:২৫, ২৫ জুন ২০২৫

ফন্ট সাইজ
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান ইশরাকের

সরকারের সংবিধান লংঘন ইস্যুকে আড়াল করতেই নানা কিছু ঘটানো হচ্ছে: ইশরাক হোসেন

মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে শপথ না পড়িয়ে সরকার সংবিধান লংঘন করেছে। আর সেই ইস্যুকে আড়াল করতেই সরকারের পক্ষ থেকে একের পর এক নানা ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।

বুধবার (২৫ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।

এ সময় তিনি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাকে সতর্ক করে বলেছেন আন্দোলনে অংশ নেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে প্রতিহিংসামূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলে আবারও কঠোর আন্দোলন করা হবে। যা নগর ভবনের গণ্ডি পেরিয়ে রাজপথে ছড়িয়ে পড়বে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে আসিফ মাহমুদের বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যের জন্য তাকে প্রকাশ্য ক্ষমা চাইতেও বলা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, 'কোনো ক্রমেই কারো প্ররোচনায় বা নিজ সিদ্ধান্তে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিষয়ে প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপের চিন্তা ভুলক্রমেও করবেন না। এটা একটা সতর্কবার্তা হিসেবে দিচ্ছি। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটলে নগরবাসী তা মেনে নেবে না এবং পুনরায় আন্দোলন শুরু হলে তা নগরভবনের গণ্ডি পেরিয়ে আবারও রাজপথে গড়াবে। সেটি উচিত হবে না।'

গত ২৭ মার্চ ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন নির্বাচনি ট্রাইবুনাল। ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এরপর সে গেজেট স্থগিত চেয়ে রিট করা হয়। আদালত সেই রিট খারিজও করে দেন। এরপর আপিল করলে  আপিল বিভাগ থেকে তাও খারিজ করে দেন। 

ইশরাক হোসেন বলেন, ২০২০ সালের মামলায় নির্বাচন ট্রাইবুনালের রায়ে প্রমান হয় যে তৎকালীন নির্বাচনের ফলাফল অবৈধভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এই ঘোষণার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের আমলের অন্তত এই নির্বাচনকে আইনিভাবে অবৈধ বলে প্রমাণ করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, একদম শুরু থেকেই এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে মেয়র পদে বসে নগর পরিচালনা করার পরিকল্পনা আমার ছিল না। আমাদের শীর্ষ নেতৃত্বের পরামর্শক্রমে অবৈধ মেয়র তাপসের বিরুদ্ধে পাওয়া রায়টি একটি স্থায়ী দলিল হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্যে, আইনের শাসনের চূড়ান্ত বিজয়ের একটি প্রমাণ হিসেবে রাখার জন্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপ এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান যা কেবলই একটি আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে পদে পদে বাধাগ্রস্ত করতে গিয়ে শেষ বেলায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে নিরপেক্ষ নয়, আমাদের সেই আশঙ্কাটি চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে। পরাজয় ঘটেছে এই সরকারের নিরপেক্ষতার পর্দার পেছনে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা অগণতান্ত্রিক শক্তির। ভেস্তে গিয়েছে জনগণকে ধোঁকা দিয়ে বিনা ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার সম্ভাব্য দেশি-বিদেশি চক্রান্ত। 

ইশরাক হোসেন বলেন, আমরা জনগণকে সুসংগঠিত করে ফ্যাসিবাদ পরবর্তী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের যাত্রাকে অবশ্যই সফল করব ইনশাল্লাহ। অর্থাৎ যেকোনো মূল্যে যেকোনো একটি সুষ্ঠু সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবই। এর বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করা হলে যেকোনো মুহূর্তে জীবন দিয়ে হলেও লড়াই করে জনগণের ভোটের অধিকার আদায় করে নেবো ইনশাল্লাহ।

এ সময় তিনি আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের জন্য সতর্ক করে বলেন, আসিফ বলেছে, বিএনপির এক নেতার ইন্ধনে ইশরাকের আন্দোলন হয়েছে। তার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে হাজার হাজার ঢাকার ভোটারদের চরম অপমান করা হয়েছে। আসিফ আরেকটা কথা বলেছে, ইশরাককে 'মিসগাইড' করা হয়েছে। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি ঔদ্ধতপূর্ণ আচরণ করেছেন। তিনি নিজেকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং আমাকে চরমভাবে হেয় করেছেন। তিনি বলেছেন, বিএনপির একটি অংশের সাথে সরকারের বোঝাপড়ার দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণে আমাকে ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বিএনপির মতো ঐতিহ্যবাহী পুরানো বৃহৎ রাজনৈতিক দলকে হেয় করেছেন এবং একটি অসত্য অভিযোগ তুলেছেন। তিনি নিজেকে বিশাল কোনো মহামানব হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। উনি হয়ত ভুলে গেছেন উনার জন্মের বহু আগেই বিএনপির জন্ম হয়েছে। আসিফ আরও বলেছেন, আমাকে তার নির্বাচনী এলাকা কুমিল্লার একটি উপজেলার জনৈক বিএনপি নেতা প্ররোচনা দিয়েছেন। এই আন্দোলনে অর্থ ও লজিসস্টিক দিয়েছেন এবং তার কাছে নাকি প্রমাণ আছে। এই প্রমাণ তিনি জাতির সামনে তুলে ধরবেন। অন্যথায় তাকে এসব ধরনের বিভ্রান্তমূলক বক্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।

আসিফ মাহমুদের আরও কিছু বক্তব্য উল্লেখ করে ইশরাক হোসেন বলেন, আসিফ বলেছেন আমার পক্ষ থেকে যারা নেগোশিয়েট করতে এসেছেন তারা আন্তরিকভাবে আমার পক্ষে নেগোশিয়েট করেন নাই। আমার বিষয়টি সম্পূর্ণ আইনি এবং এখানে নেগোশিয়েট করার কোন সুযোগ নাই। তাহলে কারা নেগোশিয়েট করেছে তা আমাকে জানাতে হবে। কারণ একমাত্র আমাদের দলীয় প্রধানের বাইরে অন্য কোন ব্যক্তিকে কোনো কথা বলার সম্মতি দেইনি।

তিনি বলেন, আসিফ বলেছেন ইশরাক হোসেন অত্যন্ত দম্ভ ভরে ও অহংকারের সাথে সরকার কর্তৃক প্রশাসক হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। বরং বিনয়ের সঙ্গে এটি প্রত্যাখ্যান করার কারণ হিসেবে বলতে হবে একজন বৈধ নির্বাচিত জন প্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদের জন্যে এই প্রস্তাব অপমানজনক।

প্রশ্ন রেখে ইশরাক হোসেন বলেন, আসিফ মাহমুদ বলেছেন, সরকার আওয়ামী লীগ আমলের কোনো নির্বাচনকে বৈধতা দেবে না, উল্লেখ করে সরকারের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে বলেন, 'এটা কোন প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন করা হবে এবং কবে? এখন পর্যন্ত তারা কোন কোন নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে পেরেছে? একটিও না। এর অর্থ এই দাঁড়ায় বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক বৈধতা বহাল রাখা গেজেটকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈধতা দিচ্ছে না বা মানছে না। সেটা সরকার কর্তৃক উচ্চ আদালত অবমাননার শামিল নয় কি? এই একই আদালত বাংলাদেশের সংবিধানের আর্টিকেল ১০৬ এর ধারা অনুযায়ী বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কি বৈধতা দেয়নি?

অনেক জায়গায় কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়া ছাড়া ওয়ার্ড সচিব হিসেবে এনসিপি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ শোনা গেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, এটা আইনত এবং সরকার পরিচালনার যেকোনো মানদণ্ডে অবৈধ। এরা কারা এবং কাদের স্বার্থ রক্ষা করছে, এই প্রশ্ন নগরবাসীর পক্ষ থেকে আমি করছি। এই অভিযোগ সত্য হলে এর পূর্ণাঙ্গ তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।

নগর ভবনের হামলার ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, হামালার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ হিসাবে সুপরিচিত কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে। এরা কেউ কেউ নিজেদের বিএনপি ঘরানার পরিচয় দিলেও তারা দলের কোনো পদে নেই। উপরন্ত তারা আওয়ামী আমলের মেয়রদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসাবে দুর্নীতি লুটপাট করেছে। তাদের মুল হোতা, গতকালকে আন্দোলনকারীদের হত্যা চেষ্টা করা গোলাম কিবরিয়া রুবেলের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে রয়েছে। আসিফ মাহমুদ দায়িত্ব নেওয়ার পর রুবেল তার লুটপাটের হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল বলে নগর ভবনের আনাচে কানাচে কথা হচ্ছে। তাই মরিয়া হয়ে রুবেল গং কে নগর ভবনে পুনর্বহাল করার জন্যে এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করা হয়েছে। 

প্রকৌশল বিভাগের কুখ্যাত রুবেল একদিনও আন্দোলনে ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু তিনি নিজেকে বিএনপি সমর্থক দাবি করেন। তদবির করে কাজ ভাগাভাগির মাধ্যমে অবৈধ অর্থনৈতিক সুবিধা করে দেয় এনসিপি ও রাজনৈতিক কিছু নেতাদের। শুরু থেকেই আন্দোলনকারীদের বিরোধিতা করেছে এবং গোপন সূত্রে জেনেছি আন্দোলনের এক পর্যায়ে কৃত্রিম গোলযোগ সৃষ্টি করে, সেই ডামাডোলের মধ্যে বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক ঘোষিত এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর মাধ্যমে আমাকেসহ আন্দোলনকারীদের কয়েকজনকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল বা চেষ্টায় ছিল। কথিত আছে সে এনসিপিতে যোগদান করেছে বা করবে। আসিফ মাহমুদকে তার বক্তব্য ও কথাবার্তার লাগাম টেনে বর্তমানে যে কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থা রয়েছে তা বিনষ্ট না করার আহবান জানান  এবং কোনো ক্রমেই কারো প্ররোচনায় বা নিজ সিদ্ধান্তে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিষয়ে প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপের চিন্তা ভুলক্রমে করবেন না। এটা একটা সতর্কবাণী হিসেবে দিচ্ছি।

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2