‘ইশরাক হোসেনকে মেয়র স্বীকৃতি দিয়েছে সরকারও, শপথ না পড়ানোর দায় মন্ত্রণালয়ের’

ছবি: ইশরাক হোসেন
ইশরাক হোসেনের মেয়র পদের বৈধতার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। এমনকি শপথ গ্রহণের জন্য প্রস্তুতিও নিয়েছিলো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ, সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য জানিয়েছেন খোদ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া আরও জানান, মন্ত্রণালয় শপথের জন্য ফাইল প্রস্তুত করেছিলো, তার (উপদেষ্টার) টেবিলেও ফাইল পৌঁছায় কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় মতামত দেয় যে, উচ্চ আদালতে রিট আবেদন বিচারাধীন থাকায় শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারেনি মন্ত্রণালয়।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সবশেষ বক্তব্য অনুযায়ী, ইশরাক হোসেনের মেয়র পদের শপথের ক্ষেত্রে একমাত্র প্রতিবন্ধকতা ছিলো, হাইকোর্টে ঐ রিট আবেদনের শুনানি ও আপিল বিভাগে আবেদন।
২৭ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘২২ মে রিটটি খারিজ হওয়ার পর স্থানীয় সরকার বিভাগ ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছিলো। এছাড়া ২২ মে’র রিট খারিজের বিরুদ্ধে ২৬ মে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দাখিল করা হয়েছে ফলে সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় ইশরাক হোসেনের শপথের বিষয়ে আদালতের রায়ের অপেক্ষায় আছে মন্ত্রণালয়।’
ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা লিভ টু আপিল পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেয় আপিল বিভাগ। ২০২৫ সালের ২৯ মে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। আদালত বলেছেন, যেসব প্রশ্নের অবতারণা হয়েছে, তা সাংবিধানিকভাবে ও সমভাবে নির্বাচন কমিশনের মৌলিক ম্যান্ডেটের (আইনগত বা বিচারগত) ভেতরে পড়ে।
এরপর সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সভায় ইশরাক হোসেনের গেজেট প্রকাশের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় ৪ জুন ২০২৫। এতে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল সানাউল্লাহ জানান‚ ‘গেজেট যেহেতু বাতিল করা হয় নাই, গেজেট যেহেতু বহাল আছে, তাই নির্বাচন কমিশনের কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।’
দেশের সবগুলো আদালতের রায় ও আদেশের ফলাফল হলো, নির্বাচন কমিশন ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে যেই গেজেট জারি করেছে তা বহাল আছে, ফলে ইশরাক হোসেন বৈধ মেয়র আইন ও সংবিধান অনুযায়ী ইশরাক হোসেনই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র।
এখন মূল বিষয়-
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, বিচারাধীন বিষয়ের কারণে ইশরাক হোসেনের শপথ পড়ানো যায়নি আর পরে মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
যেই রিট আবেদনের কারণে ইশরাক হোসেনের মেয়র পদের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করতে পারেনি মন্ত্রণালয়, সেই রিট আবেদনের ওপর শুনানী হয় ২০, ২১ ও ২২ মে এবং ২২ মে রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এরপর ২৩ ও ২৪ মে - শুক্রবার ও শনিবার ছুটি। ২৫ মে অফিস খোলা ছিল।
ইশরাক হোসেনের নামে গেজেট প্রকাশিত হয় ২৭ এপ্রিল ২০২৫, তাহলে ২৮ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত এই সময় কেন শপথ পড়ানোর ব্যবস্থা করেনি মন্ত্রণালয়? এই সময় তো কোন আইনগত জটিলতা ছিলো না বা বিচারাধীন বিষয় ছিলো না।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। সেই নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুরির মাধ্যমে ফলাফল পরিবতনের অভিযোগ করে তখনই নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেছিলেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। তখন মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রাখা হয়। ৫ আগস্ট ২০২৪ এর পর মামলা আবারো সচল করা হয়।
স্থানীয় সরকার সিটি কর্পোরেশন আইন অনুযায়ী, নির্বাচনে অনিয়ম কারচুপির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বাতিল ঘোষণা করেন এবং মামলার বাদী ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করে রায় দেন আদালত।
বিভি/এমআর
মন্তব্য করুন: