• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫

যেভাবে বিশ্বমঞ্চে জায়গা করে নিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া 

হিজল জোবায়ের

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ২ ডিসেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ

১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। শুধু তাই নয়, মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ কোনো দেশের নেতৃত্ব দানকারী দ্বিতীয় নারী হিসেবেও ইতিহাসে স্থান করে নেন তিনি। 

এসব মাইলফলক অর্জন কেবল দেশের রাজনীতিতেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও খালেদা জিয়ার একটি শক্তিশালী ভাবমূর্তি গড়ে দেয়। এক মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নির্বাচিত নারী রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তার উত্থান গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্ম দেয় বিশ্ব গণমাধ্যম ও কূটনৈতিক মহলে। তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলে দক্ষিণ এশিয়ায় সূচিত হয় নারী নেতৃত্ব ও ক্ষমতায়নেরএক নতুন অধ্যায়। 

প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দৃশ্যমান হতে শুরু করে তার প্রভাব। সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোকে একটি স্থিতিশীল পথে ফেরান তিনি, যা বৈশ্বিক মহলে ইতিবাচকভাবে বিবেচিত হয়। শিক্ষা বিস্তারে বিশেষ করে মেয়েদের জন্য যেসব উদ্যোগ তিনি গ্রহণ করেন, যেমন মেয়েদের শিক্ষাবৃত্তি, ফ্রি প্রাইমারি শিখা এবং গ্রামীণ অঞ্চলে শিক্ষার প্রসার, তা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে।

১৯৯২ সালে তিনি হোয়াইট হাউসে যান এবং তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে গঙ্গার পানি বণ্টন সমস্যা, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট ও বাংলাদেশে দুর্যোগ মোকাবেলাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়। ১৯৯১–১৯৯২ সালে মিয়ানমারের সামরিক দমন–পীড়নের কারণে প্রায় ২ লাখ ৫০ থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
 
সে সময়ই রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপন করেন খালেদা জিয়া এবং এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। এরপর বিভিন্ন মহলের চাপে ১৯৯২ থেকে পরবর্তী কয়েক বছরে ধাপে ধাপে ২ লাখ ২৯ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে বাধ্য হয় মিয়ানমার। 

১৯৯৩ সালে ঢাকায় সার্ক সম্মেলনের আয়োজন করে খালেদা জিয়া দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা-সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করেন। তার সরকার আঞ্চলিক সহযোগিতাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় এবং তিনি সংস্থাটির চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আরও বিস্তৃতভাবে অংশগ্রহণ শুরু করে, যার ধারাবাহিকতায় বিশ্বের অন্যতম প্রধান শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রদানকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ।

প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় বসে অর্থনৈতিক সংস্কার এবং বাণিজ্য উদারীকরণ নীতি বাস্তবায়ন করেন খালেদা জিয়া, যা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সহায়ক হয়। সালে তার সরকার জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন ট্যারিফস অ্যান্ড ট্রেড-গ্যাট-এ স্বাক্ষর করে। ১৯৯৫ সালে গ্যাট থেকেই সৃষ্টি হয় ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গ্যানাইজেশন। তারও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশ বাংলাদেশ। ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধিপায়।

ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ভারত ও চীনসহ আঞ্চলিকভাবে প্রধান শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষ নীতি গ্রহণ করেন খালেদা জিয়া। বাণিজ্য, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এসব দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে তোলেন তিনি।

বাংলাদেশের সার্বিক কূটনীতিকে নতুন গতি দেয়ার ক্ষেত্রেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন বেগম জিয়া। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সৌদি আরবসহ বিশ্বশক্তিগুলোর সঙ্গে তার একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখে। বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে তার প্রচেষ্টা দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে আরও গতিশীল করে। 

আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং নারীর ক্ষমতায়নে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৪ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের করা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ১০০ নারীর তালিকায় স্থান পান খালেদা জিয়া। এটি তাকে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, তার এই অর্জন শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতিফলন নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার নারী নেতৃত্বকে বিশ্ব মানচিত্রে দৃশ্যমান করার একটি বড় মাইলফলক।

এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক পরিসরে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে তার অবস্থান বিভিন্ন মহলে স্বীকৃত হয়। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকার স্বীকৃতি স্বরূপ, ২০১১ সালে নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের সেনেট তাকে ফাইটার ফর ডেমোক্রেসি উপাধিতে সম্মানিত করে। 

এসবের বাইরেও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সিভিল সোসাইটি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় তার লড়াইকে পুরস্কার ও সম্মাননার মাধ্যমে স্বীকৃতি দিয়েছে।

সব মিলিয়ে নারী নেতৃত্ব ও সক্ষমতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বেগম খালেদা জিয়া। নেতৃত্ব, কূটনৈতিক সক্রিয়তা এবং উন্নয়নমুখী দৃষ্টিভঙ্গি বরাবরই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। 

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: