• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ০১ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

‘হজের খরচ কমাতে সব দিক থেকে চেষ্টা করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়’

প্রকাশিত: ১৫:১৯, ২৯ মে ২০২৫

আপডেট: ১৫:২৩, ২৯ মে ২০২৫

ফন্ট সাইজ
‘হজের খরচ কমাতে সব দিক থেকে চেষ্টা করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়’

ধর্ম উপদেষ্টা আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন জানিয়েছেন, ‘হজের খরচ যৌক্তিকীকরণের বিষয়টি আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার ছিলো। হজের খরচ কমানোর বিষয়ে আমরা সর্বান্তকরণে চেষ্টা করেছি। তবে, বাস্তবতা হলো হজের খরচের যে খাতগুলো রয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশই সৌদি সরকার নির্ধারিত। বিমানভাড়া ও হোটেল ভাড়া-এই দুটি খাত ছাড়া উল্লেখ্যযোগ্য কোন খাতে খরচ কমানোর বিষয়ে আমাদের দর কষাকষির সুযোগ থাকে না। হোটেল ভাড়া প্রধানত হারাম শরীফ হতে হোটেলের দূরত্ব ও মানের তারতম্য অনুসারে নির্ধারিত হয়ে থাকে।’

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। ২০২৫ সনের হজ ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে দেশবাসিকে অবহিত করার জন্যই এই প্রেস ব্রিফিং আয়োজন করা হয়।

পরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের উদ্দেশে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, জুলাই বিপ্লবের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা ছিলো সরকার তথা ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে, হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সৌদি সরকারের নতুন নতুন নিয়ম-কানুন বা বিধিবিধানের কারণেও আমাদেরকে মাঝে মাঝে কিছু স‌ংকটের সম্মুখীন হতে হয়েছে। উপরন্তু, এ সরকারের সময়ে হজের খরচ কমানোসহ সার্বিক হজ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে-এরূপ জন আকাঙ্ক্ষা ছিলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও এধরণের নানা পোস্ট আমাদের চোখে পড়েছে, আপনারাও নিশ্চয় দেখেছেন।

হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার দিনগুলোতে (৮ জিলহজ্ব হতে ১২ জিলহজ্ব পর্যন্ত) মিনা ও আরাফায় তাঁবুতে অবস্থান ও সেখানে অবস্থানকালে সরবরাহকৃত খাবারের মূল্য তাবুর জোন ও প্যাকজভিত্তিক নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রে আমরা শুধু তাবুর জোন ও প্যাকেজ নির্বাচন করতে পারি; সেবামূল্য নিয়ে দর কষাকষির কোন সুযোগ নেই। এছাড়া, ভিসা ফি, স্বাস্থ্যবীমা, জমজমের পানি প্রভৃতির খরচও নির্ধারিত।

এদেশ হতে হজযাত্রায় বিমানভাড়া নিয়ে নানারূপ আলোচনা-সমালোচনা আছে। জনশ্রুতি হলো- বাংলাদেশ হতে হজে গমনাগমনের বিমানভাড়া অত্যধিক বেশি। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করেছি। বিমানভাড়া যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের জন্য হজ প্যাকেজ ঘোষণার পূর্বে বাংলাদেশ বিমান, সাউদিয়া ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনের সাথে কয়েকদফা মতবিনিময় বা সভা করেছি। তৎকালীন বিমান উপদেষ্টার সাথে আলোচনা করেছি। ফলস্বরূপ, আমরা বিমান ভাড়া গতবারের তুলনায় ২৬ হাজার ৯৮০ টাকা কমাতে সক্ষম হই। 

এদেশের সাধারণ মানুষের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় আমরা বাড়ি বা হোটেল ভাড়া করার ক্ষেত্রেও যতটা সম্ভব দর কষাকষি করেছি এবং আমরা অত্যন্ত যৌক্তিক মূল্যে বাড়ি ভাড়া করতে পেরেছি। এবছর সৌদি রিয়ালের মূল্য গত বছরের তুলনায় প্রায় ২ টাকা বেড়েছে। কিছু সার্ভিস চার্জও বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও আমরা গত বছরের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করতে পেরেছি।

হজ এজেন্সির মাধ্যমে হজযাত্রী প্রেরণের ক্ষেত্রে সৌদি হজ ও উমরাহ মন্ত্রণালয় হতে প্রতিবছর হজযাত্রীর ন্যূনতম সংখ্যা বা কোটা নির্ধারণ করে থাকে। গত ২০২৪ হজ মৌসুমে বাংলাদেশের জন্য এই ন্যূনতম কোটা ছিলো ২৫০ জন। কিন্তু, এ মৌসুমে সৌদি সরকার বাংলাদেশের হজ এজেন্সি প্রতি সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা ২০০০ জন নির্ধারণ করে। পরবর্তীতে সৌদি হজ ও উমরাহ মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে হজ এজেন্সি প্রতি সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা একহাজার নির্ধারণ করাতে সক্ষম হই। তবে, লিড এজেন্সি গঠন নিয়ে কিছুটা সংকট তৈরি হয়। জুলাই বিপ্লবের পরে হাবের কমিটি নিয়েও কিছু সমস্যা ছিলো। এরূপ পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন বিভাগ/সংস্থা এবং হজ এজেন্সিসমূহের সহযোগিতায় আমরা ৭০টি লিড এজেন্সি গঠন করতে সমর্থ হই।

এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি মধ্যে হজযাত্রীদের জন্য মিনা ও আরাফায় তাঁবু বরাদ্দ গ্রহণ এবং ক্যাটারিং সার্ভিস কোম্পানীর সাথে চুক্তি সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা ছিলো। এটিও আমার মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান, কঠোর মনিটরিং ও ফলো-আপ তৎপরতার কারণে সৌদি সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করা হয়। এরপর সৌদি সরকারের নির্দেশনা অনুসারে Nusuk Masar প্লাটফর্মে বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে। পরবর্তীতে এ বছর সরকারি-বেসরকারি উভয় মাধ্যমে নিবন্ধিত হজযাত্রীদের ভিসার বিষয়টিও সম্পন্ন হয়েছে।

এবছর হজের সফরকে সহজ, মসৃণ, নিরাপদ এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিরসনে তৈরি করা হয়েছে 'Labbaik' মোবাইল অ্যাপ। হজযাত্রী হারিয়ে গেলে বা গুরুতর অসুস্থ বা বিপদে পড়লে জরুরি মুহূর্তে এই মোবাইল অ্যাপ থেকে SoS বাটনে ক্লিক করলে সাপোর্ট টিম হাজীকে উদ্ধার/সহায়তা করবেন। এই অ্যাপ থেকে জানা যাবে নামাজের সময়সূচি, প্রতিদিনের করণীয়, দৈনিক হজ সিডিউল, হজযাত্রী ফ্লাইটের বিস্তারিত তথ্য, লোকেশন ট্রাকিং, বাংলাদেশ মেডিক্যাল সেন্টার ও সৌদি হাসপাতালের তথ্য, গাইডভিত্তিক গ্রুপ যোগাযোগ সুবিধা, হজ এজেন্সির তথ্যসহ একগুচ্ছ দরকারি সেবা।

এবছর হজযাত্রা নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে চালু করা হয়েছে হজ প্রিপেইড কার্ড। এই কার্ড ক্যাশের পরিপূরক। এ কার্ড নগদ টাকা বহনের ঝুঁকি লাঘব করেছে। বাংলাদেশি টাকা লোড করে ডলার/সৌদি রিয়াল পাওয়া যাবে। প্রত্যেক হজযাত্রী ১২০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা কার্ডে লোড করে নিতে পারবেন। সৌদি আরবে Master Card লোগোযুক্ত এটিএম বুথ থেকে নগদ সৌদি রিয়াল উত্তোলন করা যাবে। POS মেশিনে পেমেন্ট সুবিধাও রয়েছে এই হজ প্রিপেইড কার্ডে। হজ পরবর্তী সময়েও এ কার্ড ব্যবহার করা যাবে।

সরকারের পরামর্শে হজযাত্রীদের জন্য ‘গ্রামীণফোন’, ‘বাংলালিংক’ ও ‘রবি’ বিশেষ ফোন রোমিং প্যাকেজ চালু করেছে। হাজীগণ সৌদি আরবে মোবাইল সিম ক্রয় ছাড়াই বাংলাদেশে ব্যবহৃত নিজস্ব মোবাইল সিমের মাধ্যমে প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন।

এবছর হজ ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন দল তথা চিকিৎসক দল, প্রশাসনিক দল, কারিগরি দল, প্রশাসনিক সহায়তাকারী দল গঠনে আমরা জনবলের সংখ্যা যতটা সম্ভব যৌক্তিক করার চেষ্টা করেছি। গত বছর এসকল দলের মোট সদস্য ছিলো ৩৬৬ জন, এবছর সেই সংখ্যা আমরা কমিয়ে ২৯৩ জনে নামিয়ে এনেছি। 

সরকারি-বেসরকারি সকল হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে মক্কা-মদিনায় আমাদের ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীগণ নিয়োজিত আছেন। তাদের জন্য আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী পাঠিয়েছি। হজযাত্রীদের সেবায় মক্কা ও মদিনার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে হজকর্মী নিয়োজিত থাকবেন। হজযাত্রীদের যে কোন অভিযোগ/অনুযোগ খতিয়ে দেখে তাৎক্ষণিক সমাধানেরও চেষ্টা করা হবে।

গত ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী পরিবহন শুরু হয়। হজ ফ্লাইটের মধ্যবর্তী পর্যায়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সংখ্যা বেশি থাকায় এবং হজ এজেন্সির বাড়িভাড়ার সময়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় হজযাত্রী পরিবহনে কিছুটা শঙ্কা দেখা দেয়। সেটিও আমরা হজযাত্রী পরিবহনকারী ৩টি এয়ারলাইন্সের সাথে সমন্বয় করে অনেক আগেই সমাধান করেছি। ৩১ মে তারিখের মধ্যে হজযাত্রী পরিবহনের প্রাথমিক যে বাধ্যবাধকতা ছিলো সেখানে বিশেষ কারণে একদিন সময় বাড়াতে হয়েছে। ২৯ মে সকাল ১১ টা পর্যন্ত ৭৪ হাজার ৩১৬ জন হজযাত্রী ইতোমধ্যে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন। বাকি হজযাত্রীগণ ১ জুনের মধ্যেই সৌদি আরবে পৌছেঁ যাবেন ইনশাল্লাহ।

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন: