হংকং-এ ‘পবিত্র সীরাত-উন-নবী (সা.)’ শীর্ষক সেমিনারে শায়খ আহমাদুল্লাহ

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার, দক্ষিণ চীন সাগরের তীরে অবস্থিত হংকং-এ ‘পবিত্র সীরাত-উন-নবী (সা.)' শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে যোগদানের উদ্দেশ্যে ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ ৪ দিনের সফরে হংকং গমন করেন। ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব হংকং-এর আয়োজনে সেন্ট্রাল কাউলুন মসজিদ অ্যান্ড ইসলামিক সেন্টারে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন শায়খ আহমাদুল্লাহ।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব হংকং-এর সভাপতি আশফাকুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির কনস্যুলেট জেনারেল ড. শাহ মুহাম্মদ তানভীর মনসূর। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন মুফতি ইফতিখার হুসেন ও মাওলা মাসউদ।
শায়খ আহমাদুল্লাহ তাঁর বক্তব্যে মহানবী (সা.)-এর জীবনের বিভিন্ন দিক বিশদভাবে তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘সীরাত কেবল ইতিহাসের বর্ণনা নয়, বরং এটি মানবজাতির পূর্ণাঙ্গ পথনির্দেশ। মহানবীর প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি উক্তি এবং প্রতিটি সিদ্ধান্তে রয়েছে উম্মাহর অনুসরণীয় আদর্শ।’
শায়খ আহমাদুল্লাহ তাঁর বক্তব্যে সীরাত পাঠের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতাও তুলে ধরেন। বর্তমান সময়ে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং মুসলমানদের নড়বড়ে ঈমানকে সুদৃঢ় করার জন্য উপস্থিত সবাইকে সীরাত পাঠের পরামর্শ দেন।
বিশেষ করে, শায়খ আহমাদুল্লাহ সন্তানসন্ততিদেরকে সীরাত পাঠে অভ্যস্ত করার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইসলামের সঠিক আদর্শে গড়ে তুলতে শিশুদেরকে শৈশব থেকেই মহানবীর জীবন ও চরিত্রের সঙ্গে পরিচয় করানো অপরিহার্য। সীরাত পাঠের মাধ্যমে শিশুরা নৈতিকতা, সততা, ধৈর্য, ক্ষমা এবং অপরের প্রতি সহমর্মিতার মতো মহৎ গুণাবলি অর্জন করবে।’
অভিভাবকদের প্রতি তিনি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন—সন্তানদের সীরাত সম্পর্কিত বই পড়তে অনুপ্রাণিত করুন এবং তাদেরকে নববী আদর্শে গড়ে তুলুন।
অনেক বাবা-মা সন্তানদের অতিরিক্ত ক্যারিয়ারিস্ট করে গড়ে তুলতে গিয়ে বস্তুবাদী জীবনধারায় এমনভাবে নিমজ্জিত করে ফেলে যে, তারা নিজেদের মূল্যবোধ ও আত্মপরিচয় থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। সন্তানের ভালো ক্যারিয়ার চিন্তার পাশাপাশি তাদের আত্মপরিচয় ও ইসলামি আইডেন্টিটি যেন টিকে থাকে, সে বিষয়েও বাবা-মাকে বিশেষভাবে যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান শায়খ আহমাদুল্লাহ।
প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে শায়খ আহমাদুল্লাহ মূল্যবান নসীহা পেশ করেন। তিনি বলেন, ‘দেশের প্রতি প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। প্রবাসী হিসাবে নিজ দেশের ভাবমূর্তি ও একজন মুসলিম হিসাবে ইসলামের ভাবমূর্তি রক্ষা করা প্রত্যেক প্রবাসীর নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।’
সেই সাথে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, প্রবাস জীবনে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি যেন আমরা পরিবার ও সন্তানদের সঠিক তত্ত্বাবধানের ব্যাপারে অলসতা না করি। অনেক প্রবাসী শুধু অঢেল ধন-সম্পদ অর্জনের পিছনে পড়ে থাকে, অন্যদিকে নিজের পরিবার ও সন্তান বিপদগামী হয়ে পড়ে কিন্তু খোঁজ রাখে না। ফলশ্রুতিতে একটা সময় আফসোসের অন্ত থাকে না।
৮ সেপ্টেম্বর হংকং-এর প্রধান খতিব মুফতি মুহাম্মাদ আরশাদ ও দি ইসলামিক কাউন্সিল অব ইউরোপ-এর ফতোয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান শায়খ ড. হাইথাম আল-হাদ্দাদের সঙ্গে শায়খ আহমাদুল্লাহর বিশেষ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে একান্তে তাঁরা নিজেদের পারস্পরিক চিন্তা-চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলাপ করেন।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে প্রায় ছয় শতাধিক নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। আয়োজকদের ভাষ্যমতে এপর্ন্ত তাদের আয়োজিত অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষের উপস্থিতি ছিল এই অনুষ্ঠানে। বর্তমানে হংকং-এ নারী-পুরুষ মিলে সর্বমোট ২ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর পূর্ব হতে বাংলাদেশিরা বিভিন্ন কাজের উদ্দেশ্যে হংকং-এ আসা-যাওয়া শুরু করে।
৪ দিনের সফর শেষে শায়খ আহমাদুল্লাহ ৯ সেপ্টেম্বর রাত ১ টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
বিভি/ এসআই
মন্তব্য করুন: