নর্দমার জঞ্জাল থেকে জ্বালানি উৎপাদন
জলবায়ু পরিবর্তন ও বেড়ে চলা জঞ্জাল মানবজাতির বড় সমস্যা৷ কিন্তু সেই জঞ্জাল কাজে লাগিয়ে নির্মল জ্বালানি উৎপাদন করলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যায়৷ এমন উদ্ভাবন এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও ভবিষ্যতে এর প্রয়োগ বাড়তে পারে৷
ভবিষ্যতে ট্রেন, বাস, জাহাজ, বিমান চালাতে প্লাস্টিক জ্বালানি কাজে লাগানো যেতে পারে৷ প্লান্টের মধ্যে মল, নর্দমার কাদা দেখলে ঘৃণা জাগতে পারে৷ কিন্তু সেখানেই ভবিষ্যতের জন্য অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি তৈরি হচ্ছে৷ উদ্যোগপতি হিসেবে হারাল্ড মায়ারই এই প্রচেষ্টার মূল হোতা৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি উদ্ভাবকের সঙ্গে দেখা করে তাঁর কাছ থেকে পেটেন্ট কিনে নিয়ে ভাবলাম, আমি রূপকথার জগতে আছি৷ কিন্তু অন্তরের তাগিদ আমাকে ‘শিট টু পাওয়ার' প্রযুক্তি হাতেনাতে যাচাই করতে বাধ্য করলো৷ সেই দর্শনের ভিত্তিতে আমি অবিলম্বে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে প্রস্তুত হয়ে গেলাম৷ ইঞ্জিনিয়ারদের চাকুরি দিয়েছি৷ সরকারি ভরতুকি ছাড়াই আমি ৪০ লাখ ইউরো পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছি৷''
অস্ট্রিয়ার লেওবেনে আপাতত এক পরীক্ষামূলক প্লান্ট চালু করে বড় আকারে সেই আইডিয়া বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখা হচ্ছে৷ গোটা প্রক্রিয়া মোটামুটি এভাবে চলে৷ পয়ঃপ্রণালীর তরল বর্জ্য শুকিয়ে তাতে অক্সিজেন যোগ করে পোড়ানো হয়৷ প্রায় দেড় হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস মাত্রায় উত্তাপ সৃষ্টি হয়৷ সেই প্রবল উত্তাপে প্লাস্টিকের মৌলিক উপাদানগুলি আলাদা হয়ে যায়৷ তার মধ্যে হাইড্রোজেনও রয়েছে, যা পরিশোধন করা হয়৷
সেই প্রক্রিয়ার বর্জ্য পদার্থের মধ্যে অনেক পরিমাণ ফসফেট থাকে৷ সেইসঙ্গে উপজাত পদার্থ হিসেবে কার্বন-ডাই-অক্সাইডও নির্গত হয়৷ কঠিন পদার্থ হিসেবে স্ল্যাগ জমির সার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়৷ কার্বন-ডাই-অক্সাইড দিয়ে কার্বোনেটেড সফট ড্রিংক্স তৈরি করা যায়৷ কোম্পানির প্রসেস টেকনোলজি বিভাগের প্রধান নাদিয়া রোমদানে বলেন, ‘‘প্লাস্টিকের মধ্যে অনেক হাইড্রোজেন থাকে, যা সাধারণত ব্যবহার করা হয় না৷ হয় সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয় অথবা জঞ্জালের প্লান্টে পুড়িয়ে ফেলা হয়৷ অথচ আমরা সেটি কাজে লাগাতে পারি৷''
কিন্তু এমন উচ্চ তাপমাত্রা পেতে কি বিশাল পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার করা হয় না? নাদিয়া রোমদানে বলেন, ‘‘এই জ্বালানি তো নর্দমার বর্জ্য থেকেই সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ সেই স্লাজ শুকনা অবস্থায় খুব বেশি তাপমাত্রায় জ্বলতে পারে এবং সেই শক্তি উৎপাদন করে৷''
হাইড্রোজেন উৎপাদনের লক্ষ্যে আগুন জ্বালানো হলো৷ পরীক্ষামূলক প্লান্টে এখনো পর্যন্ত সব টেস্ট সফল হয়েছে৷ এবার একটানা প্রক্রিয়ায় সেই প্লান্টের কার্যকারিতা যাচাই করা হচ্ছে৷ হারাল্ড মায়ার জানালেন, ‘‘আপাতত আমরা বিনিয়োগকারীর সন্ধান করছি৷ আমি কোম্পানির সহযোগীর সঙ্গে মিলে এখন যে প্রমাণ দিয়েছি, তার ভিত্তিতে বিশ্বজুড়ে বড় আকারে এটা করা সম্ভব৷ এখনো পর্যন্ত আমিই একমাত্র বিনিয়োগকারী৷''
হারাল্ড মায়ারের মতে, আগামী কয়েক বছরে হাইড্রোজেনের চাহিদা দ্রুত বেড়ে যাবে৷ কারণ জলবায়ু বাঁচাতে পেট্রোলিয়ামের মতো জ্বালানির বিকল্প হিসেবে এই উৎসের উপর নির্ভর করা হচ্ছে৷ কিন্তু এখনো পর্যন্ত জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি হাইড্রোজেনের তুলনায় সস্তা৷ নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগ করলে দুইয়ের মূল্যই প্রায় এক হয়ে যাবে৷ মায়ার বলেন, ‘‘আমরা মাত্র আড়াই ইউরো মূল্যে স্থানীয় পর্যায়ে পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন উৎপাদন করছি৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে এত কম মূল্য সম্ভবই নয়৷''
কাচামাল হিসেবে প্লাস্টিকের প্রথম বড় প্লান্ট কে নির্মাণ করবে? এমনটা করলে জঞ্জালের স্তূপও কমে যাবে৷ এই উদ্ভাবন সম্পর্কে সব সংশয় দূর হলেই বিনিয়োগকারীদের মনে উৎসাহ জাগবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷




মন্তব্য করুন: