এক ইউনিয়নেই পাওয়া গেল সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর ৫ আলিশান বাড়ি (ভিডিও)
ঢাকার কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের কাউটাইল ঘাট এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে নিরিবিলি একটি বাগানবাড়ি। প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করেই চোখে পড়ে দামি দামি গাছের একটি জঙ্গল। দামি টাইলসে মোড়ানো রাস্তায় কিছুদূর গিয়ে জঙ্গলের শেষ প্রান্তে পাওয়া গেল একটি আলিশান দোতলা বিল্ডিং। বিল্ডিংয়ের নিচে আছে পানির ফোয়ারা, সুইমিংপুল। পাশে বুড়িগঙ্গার সঙ্গে আছে শান বাধানো ঘাটও। জঙ্গলের অন্য প্রান্তে কর্মচারিদের জন্যও আছে কিছু ঘর।
প্রথম দেখায় এটিকে রিসোর্ট মনে হলেও স্থানীয়রা জানালেন, এটি সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ও ঢাকা-৩ আসনের সাবেক সাংসদ নসরুল হামিদ বিপুর বাগানবাড়ি। তারা আরও জানান, ছুটির দিনে এখানে এসে রাতভর আমোদ-প্রমোদ করতেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। ঈদগাহের জমিতে গড়ে তোলা এই বাগান বাড়ির মূল ফটকেই রয়েছে মসজিদ। আমোদফূর্তিতে ব্যাঘাত এড়াতে ওই মসজিদও সরাতে তিনি মরিয়া ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
ঢাকা এবং দেশের বাইরে তো আছেই, শুধু নিজ নির্বাচনী এলাকা কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নে ঘুরে পাওয়া গেছে তার এমন অন্তত ৫টি আলিশান বাড়ি এবং একটি খামারের সন্ধান। যদিও শেখ হাসিনা পালানোর পর তার সবকটি বাড়িতেই ভাঙচুর চালিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে স্থানীয় জনতা।
কোন্ডা ইউনিয়নের দক্ষিণ পানগাঁও খেয়াঘাট ঘেঁষা উচু দেয়ালে ঘেরা ফার্ম হাউসটির আয়তন প্রায় ৭০ একর। যার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দেখা যায় না। মাছে ভরা লেক, আছে নৌকাও। ছিল সব ধরনের গবাদি পশু, এমনকি হরিণেরও খামার। যদিও ৫ আগস্ট গেট ভেঙে সবই লুট করে নিয়ে গেছে জনতা। এতদিন বিপুর প্রভাবের বিপরীতে দাঁড়াতে না পারলেও এখন জমির মালিকানা দাবি করে সাইনবোর্ড দিয়ে যাচ্ছেন মূল মালিকরা।
সাইনবোর্ডে দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করা হলে প্রতিবেদককে মালিক শাহানা পারভীনের ছেলে বলেন, জমিটা উনি প্রথমে কিনতে চেয়েছিলেন। আমরাও কথা বলেছিলাম। কিন্তু দামে মিলেনি। এর মধ্যে কেনা ছাড়াই তিনি বাউন্ডারি করে ফেলেছেন। এখন উনি চলে যাওয়ার পর আবার এখানে যেভাবে হরিলুট শুরু হয়েছে তাই নিজের জমি বাঁচাতে আমরা সাইনবোর্ড দিয়েছি। সাইনবোর্ড দেওয়া অপর ব্যক্তি হাজী ইলিয়াস আহমেদ খোকাও একইরকম অভিযোগ করেন।
এছাড়াও, একই ইউনিয়নের দোলেশ্বরেও আরেকটি বাগানবাড়ি করেছেন নসরুল হামিদ বিপু। অভিযোগ আছে, নানান প্রজাতির ফুল-ফলের বৃক্ষে সাজানো এই বাগানবাড়িও গড়ে তোলা হয়েছে বুড়িগঙ্গা নদী দখল করে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় এর বাউন্ডারি ওয়ালের ভেতরে থাকা বিআইডব্লিউটিএ’র দেওয়া নদীর পিলার দেখেই। স্থানীয়রা জানান, এই পিলার আগে বাড়ির অনেক ভেতরে ছিল। বিপু ক্ষমতা দেখিয়ে পিলারটিকে সরিয়ে বসাতে বাধ্য করেছিলেন।
এই বাগানবাড়িটির কাছেই রাস্তার দুই পাশে আছে আরও দুটি ডুপ্লেক্স বাড়ি। এই বাড়ি দুটি তার পৈত্রিক বাড়ি হিসেবেই পরিচিত। কেরানীগঞ্জে এলে এই দুই বাড়িতেই তিনি অবস্থান করতেন এবং রাজনৈতিক বৈঠক করতেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পুড়িয়ে দেওয়া এই বাড়ি দুটি দেখভাল করছেন হৃদয় ও আনসার নামে তার কর্মচারি। তারা জানান, ৫ তারিখ পর থেকে বিপু বা তার পরিবারের কেউই এখানে আসেননি। তবে, তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান প্রিয় প্রাঙ্গণের কর্মকর্তারা এসে ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদগুলো দেখে গেছেন।
এই বাড়ি থেকে স্বল্প দূরত্বের বসুন্ধরা রিভারভিউতেও পাওয়া গেছে তার আরেকটি বাগানবাড়ির সন্ধান। স্থানীয়রা জানান, এই বাড়িতে প্রতিমন্ত্রীর চেয়েও তার স্ত্রী আসতেন বেশি। এখানেই হতো নানান অনৈতিক লেনদেন। তবে, অন্য বাড়িগুলো পুড়িয়ে দেওয়ার পর খুব বেশি আলোচনায় না আসা এই বাড়িকে দেয়ালে আবদ্ধ করে দিয়েছেন নসরুল হামিদ বিপুর কর্মচারিরা।
অপরদিকে, কোন্ডা ইউনিয়নের বাইরেও তার বিরুদ্ধে বহু মানুষের জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পের জমিতো নিয়েছেনই, সাধারণ জনগণের বহু জমিও জোরপূর্বক ভরাট করে নিয়ে গেছেন নিজের মালিকানাধীন আবাসন কোম্পানি প্রিয় প্রাঙ্গণের নামে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নসরুল হামিদ বিপু পালালেও এখনো তার ভয়ে কাঁপছে জমি হারানো মানুষেরা। তাই, এখনো জমি হারানোর শোক প্রকাশের সাহস করেনি অনেকেই।
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: