তবে কি টেস্ট সিরিজে এখন দুটি দল গড়তে হবে বাংলাদেশকে

হতাশার অপর নাম বাংলাদেশের ক্রিকেট। দেশটির ক্রিকেট বোর্ডের লোগোতে বাঘের ছবি, তাই দলটিকে ডাকা হয় টাইগার্স! কিন্ত দুর্ভাগ্যজন ভাবে এই দলটিই মাঠের খেলায় বেশীভাগ ক্ষেত্রেই পারফরম করছে বিড়ালের মত। ম্যাচ শুরুর আগে জয়ের স্বপ্নের কথা বলা, কিন্তু মাঠে পারফরম্যন্সে তা প্রর্দশনে পুরোপুরি হতাশ করা; এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট।
হোম গ্রান্ড, পরিচিত কন্ডিশন, ফ্ল্যাট উইকেট যেন ব্যাটিং স্বর্গ; এমন উইকেটে যেখানে লংকান ব্যাটসম্যানরা রানের বন্যায় ভেসেছেন; সেখানে দুই ইনিংসেই বাংলাদেশ টপ অর্ডারের কি বিস্ময়কর ব্যাটিং বিপর্যয়? প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে পতন হয়েছিলো ৫ উইকেটের, দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩ রানে প্রথম ৪ উইকেট এবং ৭ রানে শেষ ৪ উইকেটের পতন! ব্যাটিং উইকেটে কি ইনডিসিপ্লিন ব্যাটিং!
সিরিজ জয়ের স্বপ্ন জাগিয়ে, এভাব আত্নসর্মপন, বিরাট হতাশার। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৫৫ ওভার ৩ বল খেলে ১৬৯ রানে অলআউট বাংলাদেশ। দলের কাছে কোন ফাইটিং স্পিরিটই দেখা গেলো না।
শ্রীলংকার বর্তমান দলটি মুরালিধরন, সাঙ্গাকারা, জয়বর্ধনে, রঙ্গনা হেরাথদের ছায়া মাত্র। ৪-৫ জন ক্রিকেটার ছাড়া দলের অন্যরা অনভিজ্ঞ। এমন দলের বিপক্ষে হোম সিরিজে এভাবে বিপযস্ত হওয়ায়, প্রশ্ন ওঠা স্বভাবিক; অ্যালেন ডোনাল্ড, জেমি সিডন্স, রঙ্গনা হেরাথদের মত বিশ্বের সেরা কোচিং স্টাফদের এনে, অনেক অর্থ ব্যয়ে; কথাটা এগোচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট? ক্রিকেটররাই বা অনেক সুযোগ সুবিধার বিনিময়ে কি দিচ্ছেন দেশকে, তা মূল্যায়নের সময় এসেছে?
প্রথম ইনিংসে ১৪১ রানে পিছিয়ে থাকলেও, চতুর্থ দিনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের আগে মনে হচ্ছিলো টেস্টটি নিষ্প্রাণ ড্র’ই হবে। কিন্তু বাংলাদেশের টপ অর্ডারের নেতিবাচক মানসিকতা এবং অর্মাজনীয় ব্যর্থতার কারণেই চতুর্থ দিনের শেষ বেলায় ঢাকা টেস্টে হঠ্যাৎ উত্তেজনা ফিরে আসে, আসলে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরাই সেই উত্তেজনা ফিরিয়ে এনেছেন?
চতুর্থ দিনেই ২৩ রানে ৪ উইকেটে হারিয়ে পরাজয়ের শংকায় পড়েছিলো বাংলাদেশ। শেষ দিনে দেখার বিষয় ছিলো, সেখান থেকে কতটা লড়াই করতে পারে দল। কিন্তু প্রথম ইনিংসের মত দ্বিতীয় ইনিংসে আর পারলেন না মুশফিক- লিটনরা। লিটন দ্বিতীয় ইনিংসে ৫২ করেছেন, সাকিবও ৫৮ করে সিরিজে নিজের প্রথম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন।
সাকিবের বিদায়ে ৭ রানে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে সহজ আত্নসমর্পণই করেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্টে শ্রীলংকারও অনুরূপ চতুর্থ দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে চাপে পড়েছিলো। কিন্তু পঞ্চম দিনে তাদের ক্রিকেটাররা দারুন ফাইটব্যাক করে টেস্ট ড্র করেছে।
কিন্তু ঢাকা টেস্টে হোম গ্রাউন্ডের সুবিধাটাই নিতে পারলোনা মুমিনুল-তামিম-সাকিবরা। অন্য টেস্ট দেশগুলো হোম গ্রাউন্ডের সুবিধা কি দারুণ ভাবেই না আদায় করে নেয়, কিন্তু বাংলাদেশ এক্ষেত্রে বিস্ময়কর ব্যতিক্রম!!
মিরাজের ইনজুরির কারণে মোসাদ্দেক সুযোগ পেয়েছিলেন এই টেস্টে। কিন্তু দুই ইনিংসে তার অবদান ৯ রান। তেমনি দুই টেস্টে ৩ ইনিংসে ১১ রান, অধিনায়কের ভারে হারিয়ে গেছেন ব্যাটসম্যান মুমিনুল। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও ব্যর্থ হয়েছেন মুমিনুল।
এই দলটির ১০ দিন খেলার মত মানিসিক শক্তি নেই। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পর শ্রীলংকা সিরিজেও এই নির্মম সত্য বাস্তব হয়ে উঠেছে। টেস্ট ক্রিকেটের চাপ, নিতেই পারছে না দল। চাপের মুখে বারবার অবিশ্বাস্য নিতি-স্বীকার টাইগারদের।
যেহেতু এই দলটির ১০ দিন খেলার সামর্থ নেই, তবে কি এখন দুটি টেস্ট দল গড়া উচিত? একটি দল প্রথম টেস্ট এবং অন্য দলটি খেলবে দ্বিতীয় টেস্ট? এছাড়া কি অন্য কোন সমাধান আছে? বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা এখন মাঠের বাইরে নানা কাজে ও ধান্দায় ব্যস্ত। তাদের মাথায় ক্রিকেট ও দেশের স্বার্থ কতটা কাজ করছে তাই এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন?
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: