• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

স্বামী-স্ত্রীর ঘরোয়া প্রতিষ্ঠান ‌‌বিডিকলিং এখন ৫০০ মানুষের কর্মস্থল (ভিডিও)

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

আপডেট: ১৬:৪৯, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ফন্ট সাইজ

কুমিল্লার একটি অসচ্ছ্বল পরিবারে জন্ম মনির হোসেনের। চাচার সহযোগিতায় ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার টেকনোলজিতে প্রথম স্থান অধিকার করে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেন ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট)। শিক্ষাজীবন শেষে চাকরিও শুরু করেন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে। বেতন ছিল লক্ষাধিক টাকা। কিন্তু পারিবারিক এক সমস্যায় ছাড়তে হয় চাকরি। তারপরই তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। 

মনিরের অভিজ্ঞতা ছিল টেলিকম সেক্টরে। কিন্তু দেশের বাস্তবতায় ধীরে ধীরে কমতে থাকে এই সেক্টরের চাহিদা। ফলে আর চাকরিও মিলছিল না তার। দীর্ঘ ৭ বছরের অভিজ্ঞতা হয়ে যায় মূল্যহীন। ওদিকে পরিবারের অব্যাহত অর্থনৈতিক চাপ আর ছোট ভাইকে নিয়ে ঢাকায় থাকার খরচ দুই নিয়ে দিশেহারা মনির। মেসের খরচ দেওয়ার মতো টাকাও ছিল না তার। বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নেন রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বর এলাকায় ভ্যানে করে আনারস বিক্রি করার। যেই সিদ্ধান্ত সেই কাজ, দুই ভাই আর এক বন্ধু মিলে শুরু করতে যান আনারসের ব্যবসা। কিন্তু তাদের ভ্যানই দিতে রাজি হয়নি কেউ। ফলে সেখানেও হোঁচট খান তিনি।

তারপর সিদ্ধান্ত নেন ওডেক্স নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ফ্রিল্যান্সে কাজ করার। কিন্তু নিজের কম্পিউটার না থাকায় ভেস্তে যেতে বসে এই পরিকল্পনাও। পরে বন্ধুর কাছ থেকে একটি পুরোনো ল্যাপটপ ধার করে কাজ শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে দেখতে থাকেন আলোর মুখ। মনিরের সংকটের সময় ছেড়ে যায় প্রথম স্ত্রীও। বিয়ে করেন প্রকৌশলী সাবিনা আক্তারকে। বাসার ড্রইং রুমে স্বামী-স্ত্রী মিলে শুরু করেন ডাটা এন্ট্রির কাজ। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে বিদেশি গ্রাহকদের চাহিদা, বিপরীতে আসতে থাকে ডলার। কাজের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকে জনবল। এভাবে একজন দুজন করে ৩০ জন কর্মী নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বিডিকলিং আইটি লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি। 

ইঞ্জিনিয়ার মনিরুল ইসলাম এখন সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আর তার স্ত্রী ইঞ্চিনিয়ার সাবিনা আক্তার চেয়ারম্যান। বর্তমানে রাজধানীর বনশ্রী এলাকার ৩টি ভবনে রয়েছে বিডিকলিং আইটি লিমিটেডের ৫টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ৫ শতাধিক কর্মী। এখন প্রতিষ্ঠানটি শুধু মাসে কর্মীদেরই বেতন দেয় ২ কোটি টাকার বেশি। মনিরের প্রতিষ্ঠান বিডিকলিং আইটি লিমিটেডের পরিকল্পনা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অন্তত ৫ হাজার মানুষকে কর্মসংস্থান দিবে তারা।

মনির হোসেনের স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ইঞ্চিনিয়ার সাবিনা আক্তার বলেন, আমাদের ড্রইং রুমে একটি টেবিল বসিয়ে সেখানে একটি ল্যাপটপ ছিল। বিয়ের পর আমার স্বামী আমাকে ডাটা এন্ট্রির কাজ দিতেন আমি সেই কাজ করতাম। এভাবে আমরা ড্রইংরুম থেকে প্রতিষ্ঠান শুরু করি। শুরুতে শুধু ডাটা এন্ট্রির কাজ করলেও এখন আমাদের প্রতিষ্ঠান ওয়েব ডিজাইন-ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপস তৈরি, ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিক্স ও বিভিন্ন অনলাইনভিত্তিক সলিউশনসহ অনেক কাজ করে। এভাবেই খুব অল্প সময়ে আমরা এখন ৫০০ সদস্যের পরিবার। আমাদের লক্ষ্য আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা ৫ হাজার কর্মীতে পৌঁছাবো ইনশাআল্লাহ।

বিডিকলিং কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি আইটি খাতে দক্ষ জনবল তৈরি করতে আলাদা বিডিকলিং একাডেমি নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন বলে জানান ইঞ্চিনিয়ার সাবিনা আক্তার।

সফলতার রহস্য জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার মনির হোসেন বাংলাভিশনকে বলেন, আমার যখন সামর্থ্যের ঘাটতি ছিল তখনও আমি অনেক বড় স্বপ্ন দেখতাম। এখনও আমি অনেক বড় স্বপ্ন দেখি। আমি স্বপ্ন দেখি আরও অনেক কিছু করার। আমি মনে করি এই স্বপ্ন এবং তা বাস্তবায়ন করার প্রবল ইচ্ছাই আমাকে এতদূর এনেছে।

তিনি বলেন, আমাদের গ্রাহক হলো উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মানুষ। আমরা চেষ্টা করি গ্রাহকের চাহিদাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে। আমরা গ্রাহকের সমস্যাকে নিজের করে নেই এবং সেভাবে সমাধান করি। ফলে সেই সব গ্রাহক আবারও আমাদের কাছে আসে। এভাবেই মার্কেটে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করেছে বিডিকলিং আইটি। তাছাড়া আমার কর্মীবাহিনী ছিল খুবই আন্তরিক ও মেধাবী। একইসঙ্গে মহান আল্লাহও সহায় ছিলেন বলে আমরা এতদূর পৌঁছেছি।

শিগগিরই আইটি ব্যবসার পাশাপাশি কৃষি, গার্মেন্টসসহ অন্যান্য সেবাখাতেও প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণের উদ্যোগের কথাও জানান তিনি।

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন: