সাংবাদিক মুজতবা খন্দকারের বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলায় ডিআরইউ’র নিন্দা
এনটিভির যুগ্ম প্রধান বার্তা সম্পাদক মুজতবা খন্দকার
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) স্থায়ী সদস্য ও এনটিভির যুগ্ম প্রধান বার্তা সম্পাদক মুজতবা খন্দকারের বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ডিআরইউ।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে এ নিন্দা ও মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান।
গত ৩ নভেম্বর শাহবাগ থানায় সাংবাদিক মুজতবা খন্দকারসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেহহরীন আমিন ভূইয়া। মামলা নং-৪।
মামলার এজহারে বলা হয়, সাংবাদিক ও একটিভিস্ট মুজতবা খন্দকার তার ফেসবুক একাউন্টে আমার ছবি অশালীনভাবে এডিট করে পোস্ট করেন। এবং আমাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ, অশালীন ও মানহানিকর মন্তব্য করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। সাংবাদিক মুজতবা খন্দকার সহ ৪জনের বিরুদ্ধে সাইবার সুরক্ষা আইনে আইনগত ব্যবস্থ নেয়ার দাবী জানান তিনি।
মুজতবা খন্দকার জানান, গত ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টার দিকে আমার ফেসবুকের পার্সোনাল আইডি সাইবার আক্রমনের শিকার হয়। এর ফলে আমার আইডিটি অটো লগ আউট হয়ে যায়। আমি আমার আইডির ওপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলি। পরে অনেকের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারি, শুধু আমার নয়, আমরা যারা অনলাইনে রাজনীতি, সমাজ, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার নিয়ে লেখালেখি করি, তাঁদের অনেকেরই আইডি আমার মত ডিজেবল হয়ে গেছে। আমি বিভিন্ন আইটি বিশেষজ্ঞদের সাথে যোগাযোগ করতে থাকি। রাত আনুমানিক সাড়ে দশটা অথবা পৌনে এগারোটার দিকে মার্কিন প্রবাসি একজন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞর সহায়তায় আমি আমার আইডি রিকভার করতে সক্ষম হই। পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা আমার আইডির নিয়ন্ত্রন (হ্যাক) আমার কাছে ছিলোনা। এর তিন থেকে চারদিন পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় সাইবার আইনে মামলা করেন বলে জানতে পারি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আমার ফেসবুক আইডি থেকে না কি তার এআই ছবি পোষ্ট করা হয়েছে। এ বিষয়ে একদম আমার কোনো ধারনা ছিলোনা। কারন, যখন আমার আইডি থেকে তার ছবি পোষ্ট করার কথা বলা হচ্ছে, ওই সময়ে আমার আইডি আমার নিয়ন্ত্রণে ছিলোনা। আইডি হ্যাক হবার পরের সময় আমার আইডি থেকে হ্যাকাররা কিছু একটা পোষ্ট করে থাকতে পারে, যেটা একান্তই আমার নিয়ন্ত্রনের বাইরে ছিলো। সঙ্গত কারনে সেটা আমার অজ্ঞাত ছিলো। এ ঘটনা উল্লেখ করে গত ৬ নভেম্বর তেজগাও থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। ডায়েরি নং ৪২২।
তিনি বলেন, আমি গত পনের বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নারি অধিকারসহ নানা বিষয় নিয়ে সক্রিয়। নারীর প্রতি সহিংসতা, বুলিং, অবমাননার বিষয়ে আমি সব সময় জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী। ইতিপূর্বে আমার বিরুদ্ধে কখনোই এ ধরনের কোন অভিযোগ কেউ করতে পারেনি। বরং ফ্যাসিষ্ট হাসিনার সতের বছর এবং সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনে আমার ভূমিকা ছিলো আপোষহীন। আইডি ফেরত পাবার পর, আমি পোষ্ট দিয়ে বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেই। আমার এই ডিসক্লেইমার দেবার পরেও আমার বিরুদ্ধে মামলা করা অনভিপ্রেত। আর যে শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, তাঁর সাথে আমার ব্যক্তিগতভাবে কোনো পরিচয় নেই। তিনি আমাকে চেনেন না। অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে যাচাই বাছাই ছাড়াই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলা হবে, এটা অবশ্যই দুঃখজনক।
ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ বলেন, সম্প্রতি সময়ে সাংবাদিকদের উপর সংঘবদ্ধ সাইবার হামলা ও হয়রানীর ঘটনা বেড়েছে, যা উদ্বেগজনক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব ঘটনার প্রকৃত বিচার হচ্ছে না। এজন্য সাইবার হামলা ও হয়রানীর ঘটনা বেড়ে চলেছে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বিগত সরকারের সময়ে সাইবার আইনটির অপব্যবহার হয়েছে। সাংবাদিক সমাজ শুরু থেকেই এই আইনটি বাতিলের দাবী জানিয়ে আসছে। মুজতবা খন্দকার একজন পেশাদা সাংবাদিক। মামলার এজাহারে যে সময় উল্লেখ করা হয়েছে সেই সময়ে মুজতবা খন্দকারের ফেসবুক আইডি হ্যাক হবার বিষয়ে তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহীনির উচিৎ ছিলো বিষয়টি সঠিক তদন্ত করে মামলা গ্রহণ করা। তা না করেই সরাসরি সাইবার আইনে মামলা গ্রহণ করা তাকে হয়রানীর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে প্রতিয়মান হয়। বর্তমান অন্তরর্তীকালীর সরকারের আমলে তদন্ত ছাড়াই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলা হওয়া উদ্বেগজনক। অবিলম্বে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে মামলাটি প্রত্যাহারে আইনশৃঙ্খলাবাহীনির প্রতি দাবী জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
বিভি/এজেড




মন্তব্য করুন: