• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

আবহাওয়াবার্তা নিয়ে ফেসবুকের ভুল তথ্যে ভুগছে কৃষক

প্রকাশিত: ১৬:১৮, ১৭ মে ২০২৩

আপডেট: ১৭:১৫, ১৭ মে ২০২৩

ফন্ট সাইজ
আবহাওয়াবার্তা নিয়ে ফেসবুকের ভুল তথ্যে ভুগছে কৃষক

প্রতীকী ছবি

তীব্র গতি নিয়ে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন মোখা। এর প্রভাবে উপকূলে হবে ২০ ফিট উচ্চতার জোয়ার। বিলীন হয়ে যাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপের একাংশ। গত কয়েকদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন বহু খবর দেখেছেন দেশবাসী। এসব খবর দেখে কেউ কেউ আতঙ্কে নিজের গাড়িসহ সম্পদ সরিয়ে এনেছেন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চল থেকে।  ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়ে ঘূর্ণিঝড় মোখা সেন্টমার্টিনকে বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত করেছে ঠিকই তবে নেট দুনিয়ায় ছড়ানো আতঙ্কের তুলনায় এটি খুবই সামান্য বলছেন সাধারণ মানুষ।

কেননা, কক্সবাজার-মিয়ানমার উপকূলের দিকে এগিয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজার উপকূলে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস, নেয়াখালী-চট্টগ্রামে ১০ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত, বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে ৮ থেকে ১২ ফুট এবং খুলনা বিভাগের উপকূলে ৭ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হবে বলে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অথচ সেন্টমার্টিনে তীব্র ঝোড়ো বাতাসের তাণ্ডব ছাড়া আর কোথাও ঘটেনি তেমন কিছুই।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব তথ্য ছড়িয়েছে সম্প্রতি ফেসবুকভিত্তিক গড়ে ওঠা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর তালিকায় সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (BWOT) এবং মোস্তফা কামাল পলাশ নামের কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক বিষয়ে পিএইচডি গবেষণারত একজন শিক্ষার্থীকে। শুধু যে ঘূর্ণিঝড় মোখার পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে এমন হয়েছে, তা নয়। বরং দেশের আইনে নিষিদ্ধ হলেও হঠাৎ আবির্ভূত এই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো এমন আতঙ্ক ছড়ানোর পূর্বাভাস দিয়ে আসছে বহুদিন ধরে।

চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে শক্তিশালী পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগ ও ভারতের উজানে ১০ দিনব্যাপী টানা শক্তিশালী কালবৈশাখী, তীব্র বজ্রপাত এবং শিলাবৃষ্টি হবে এবং তার প্রভাবে পাহাড়ি ঢল নেমে এসে হাওরের ধান নষ্ট করবে বলে পূর্বাভাস দেন মোস্তফা কামাল পলাশ। সেই পূর্বাভাসে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে হাওরের ধান কেটে নেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। 

এই ফেসবুক পোস্ট নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও ধান কাটতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন তিনি। পত্রিকায় এই সংবাদ প্রচার হলে তাৎক্ষণিক ধান কাটার নির্দেশও দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এলাকায় মাইকিং করে বন্যা আসছে জানিয়ে, দ্রুত ধান কাটতে বলা হয়। ঘোষণা শুনে পাঁকার আগেই ধান কেটে নেন অনেক কৃষক। কিন্তু আসেনি সেই বৃষ্টি বা বন্যা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক।

বিষয়টি নজরে এলে গত ৩০ এপ্রিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও আবহাওয়া অধিদফতরে চিঠি পাঠিয়ে প্রতিবাদ জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। পলাশের দেওয়া পূর্বাভাসের কোনো সত্যতা নেই উল্লেখ করে চিঠিতে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, পলাশের পূর্বাভাস অনুযায়ী তীব্র বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কথা থাকলেও এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি এলাকার গড় বৃষ্টিপাত ছিল ০ মিলিমিটার। যা তার পূর্বাভাস যে অসঙ্গতিপূর্ণ সেটি সুস্পষ্ট করছে।

এর আগে ২৮ মার্চ দেওয়া আরেক পূর্বাভাসে সেই মাসের ৩০ ও ৩১ তারিখ দেশের পশ্চিমাঞ্চলে টর্নেডো, বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড় হবে এবং এতে বহু মানুষের মৃত্যু হবে বলে পূর্বাভাস দেন তিনি। কিন্তু মিলেনি এই পূর্বাভাসের তথ্যও। বার বার এমন ভুল পূর্বাভাস ছড়িয়ে আতঙ্ক তৈরির অভিযোগ থাকলেও দিব্যি চলছিল এমন পূর্বাভাস দেওয়া। যা সরলমনে বিশ্বাস করে প্রতারিত হয়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের প্রতি মানুষের চরমবিশ্বাসহীনতা সৃষ্টির ঝুঁকি প্রকট হচ্ছে। যার মাধ্যমে পরবর্তী দুর্যোগকে আরও প্রকট আকারে নিয়ে যেতে পারে।

২০১৮ সালে প্রণীত বাংলাদেশের আবহাওয়া আইনের ধারা-৭ এর ২-এ বলা আছে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা আবহাওয়া সেবা সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ, পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারবে না। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এভাবে ভুল তথ্য ছড়ানো হলেও এ বিষয়ে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমন ভুল পূর্বাভাস দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং করে দেয় বলে জানিয়ে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেনেন্স) ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ মেজর (অব.) একেএম শাকিল নেওয়াজ বাংলাভিশনকে বলেন, বিভিন্ন দুর্যোগে আমরা দেখেছি কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়। এতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে পড়ে। এধরনের প্রপাগান্ডা বা ভুল তথ্যের মাধ্যমে আরেকটি দুর্যোগ সৃষ্টির অবস্থা তৈরির ঝুঁকি থাকে। 

তিনি বলেন, যে সাইক্লোনটা দু-একদিন আগে ঘটে গেল সেটা নিয়ে দেখলাম অতি উৎসাহী হয়ে নিজেকে জাহির করার জন্য বিদেশ থেকে এক লোক তথ্য দিচ্ছিল। আমি জানি না সে ওয়েদারের বিষয়ে কোয়ালিফাইড কিনা। অনেকে তাদের তথ্য দিয়ে প্রপাগেট করছিল। এবং জনগণকে ভীতির ভেতর রাখছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও দুর্যোগবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল বলেন, সাইক্লোনের পূর্বাভাস বলেন আর আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলেন এর জন্য আবহাওয়া অফিস দায়িত্বপ্রাপ্ত। আমরা দেখছি সেটি এখন সত্যতার একেবারে কাছাকাছি। সেজন্য আমাদের দেখা উচিত আমাদের জাতীয় সংস্থা আবহাওয়া অফিস তারা কি বলছে। আর ফেসবুকমাধ্যম নির্ভর বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে অনেক কিছু বলেন। এর মধ্যদিয়ে গুজব ছড়ানো হয়, আতঙ্ক ছড়ানো হয়, ভুল তথ্য ছড়ানো হয়। এই ভুল পূর্বাভাসের আলোকে যদি কেউ সিদ্ধান্ত নেয় সেটি সঠিক হবে না। এবং সেটি যে সঠিক নয়, সাইক্লোন মোখার সময় ফেসবুকে আমাদের দেশের বাইরের কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা লেখাপড়া করছেন তাদের মাধ্যমে আমাদের গণমাধ্যম নানান কথা প্রচার করেছে। আবার কেউ কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে সামাজিকমাধ্যমে তথ্য দিয়েছেন। যেগুলো বস্তুতঅর্থে এই সাইক্লোনের ভয়াবহতা সম্পর্কে ছিল এবং এর মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছিল। 

তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অফিসের পাশেই স্পারসো আছে। তারাও ঘূর্ণিঝড়ের ট্র্যাক যাচাই করে। তাদেরও মেন্ডেট নেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার। আবহাওয়ার ক্ষেত্রে এই দায়িত্ব আবহাওয়া অধিদফতরের বন্যার ক্ষেত্রে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের। এর বাইরে কেউ যদি তথ্য সরবরাহ করে সেটা অযৌক্তিক এবং ওয়েদার ও ক্লাইমেট সংক্রান্ত আইনের পরিপন্থি। 

তবে আবহাওয়া অফিসের কিছুটা দেরিতে তথ্য দেওয়া ও মানুষের মধ্যে দ্রুত পাওয়ার চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে বাইরের লোকজন তথ্য দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে জানিয়ে বিলুপ্ত হওয়া সংস্থা সার্ক মেট্রোলজিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা  ও সাউথ এশিয়ান মেট্রোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. মোহন কুমার দাশ বলেন, মানুষের এখন প্রচুর তথ্যক্ষুধা রয়েছে। যে কোনো ঘটনা এলে মানুষ তার তথ্য জানাতে চায়। একারণে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সাজিয়ে গুঁছিয়ে তথ্য উপস্থাপন করছেন। মানুষ সুন্দরভাবে উপস্থাপনকৃত তথ্য দেখলে কম্পেয়ার করতে পারে না। তখন সে তাৎক্ষণিক যা পায় তা বিশ্বাস করে নেয়। 

তিনি আরও বলেন, মোখা আমাদের শিক্ষা দিয়েছে প্যানিক ভালো না। প্যানিক মিসট্রাস্ট তৈরি করে। এটা বন্ধ করতে হলে আবহাওয়া অফিসকে এই আধুনিকতার দিকে যেতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। আর মানুষকে সচেতন করতে হলে এবং আধুনিকভাবে তথ্য তুলে ধরতে হলে ব্যাপক বিজ্ঞানী ও জনবল দরকার। সেখানে কোনো ঘাটতি থাকলে সেটা পূরণ করতে হবে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিস বিশ্বমানের আবহাওয়া তথ্যদাতা প্রতিষ্ঠান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এই আবহাওয়াবিদ।

অপরদিকে সরকার আবহাওয়া অফিসে যোগ্য জনবল তৈরিতে বিনিয়োগ করছে না বলে অভিযোগ করে জলবায়ু অর্থায়ন বিশেষজ্ঞ ও চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসাইন খান বলেন, সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়েছে কিন্তু জানমালের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দুর্যোগ বার্তা দেওয়ার জন্য আবহাওয়া অফিসের বরাদ্দ বাড়ায়নি। তার জনবল সংকট কাটাতে ব্যবস্থা নেয়নি। বিশেষ করে যারা বৈজ্ঞানিকভাবে তথ্যগুলো দিবে সেই জনবল নিয়োগ হয়নি গত দশ বছর ধরে। উল্টো নন টেকনিক্যাল লোকজন বাড়ানো হয়েছে। আমগাছেতো আর জাম আশা করে লাভ নেই!

তবে বার বার চেষ্টা করলেও আবহাওয়া অধিদফতরের সংকটের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আজিজুল ইসলাম। তবে পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে আবহাওয়া অফিসের কোনো দুর্বলতা ছিলো না বলে দাবি করে দায়িত্বপ্রাপ্ত আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, আমাদের একটি স্ট্যান্ডিং অর্ডার আছে। সেই অনুযায়ী ঘটনা অনুযায়ী ৮ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের পূর্বাভাস দিতে হয়। আমরা সময়ের অনেক আগে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছি। তাছাড়া ১২ দিন আগে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসেই বলেছি, মাসের মধ্যভাগে ঘূর্ণিঝড় আসছে। এখানে আবহাওয়া অফিসের কোনো দুর্বলতা নেই।

এদিকে আইন লঙ্ঘন করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া এবং ভুল পূর্বাভাস দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক বিষয়ে পিএইচডি গবেষণারত শিক্ষার্থী মোস্তফা কামাল পলাশের কাছে মেসেঞ্জারে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। 

নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাব না দিয়ে প্রতিবেদকের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করে তিনি লিখেন, ‘ভয়ে আমি ইয়ে করে দিয়েছি’ এবং ‘হলুদ সাংবাদিকের আবার ইথিকস আছে নাকি?’

যদিও ভিডিও প্রতিবেদন তৈরির পর তিনি একটি লিখিত জবাব পাঠিয়েছেন। তা পাঠকদের জন্য নিচে হুবহু প্রকাশ করা হলো।

‘আমি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছি, যা দেশের মানুষের করের টাকায় চলে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর-এর পরে জাতিসংঘ আমাকে বৃত্তি দিয়ে ইতালিতে গিয়ে আবহাওয়া বিজ্ঞান বিষয়ে ২ নম্বর মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জনের জন্য। এর পরে কানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবহাওয়া বিজ্ঞানের উপর ৩ নম্বর মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করি।

আমি কখনও চেষ্টা করি নাই বা করার ইচ্ছেও নাই বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান হিসাবে নিজেকে পরিচিত করিয়ে দিতে। আবহাওয়া সম্পর্কিত বিভিন্ন অ্যাপ যেমন উইন্ডি বাংলাদেশের মানুষের সকলের মোবাইলে। এই অ্যাপ থেকে প্রাপ্ত পূর্বাভাস দেশের সকল মানুষ নিজেদের সামাজিক গণমাধ্যমে শেয়ার করে নিজেদের ইচ্ছেমত ব্যাখ্যা করতেছে। একই কাজ করতেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সংবাদের সময় সরাসরি উইন্ডি অ্যাপ থেকে আবহাওয়া পূর্বাভাস দেখাচ্ছে দেশের মানুষকে। সংবাদের সময় উইন্ডির সেই সকল পূর্বাভাস এমন সাংবাদিকরা উপস্হানপন করতেছে দেশের মানুষের সামনে যে সাংবাদিকরা জীবনে কোনদিন আব হাওয়া পূর্বাভাস বিষয়ে লেখাপড়া করে নি। আমি লক্ষ করেছি ভুল ভাবে পূর্বাভাস ব্যাখ্যা করেছে।  

২০১৭ সালে সিলেট বিভাগে হাওড় এলাকায় পাহাড়ি ঢলে পুরো বোরোধান তলিয়ে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যায় হাওড় এলাকার কৃষকরা। আমি যেহেতু নিজে সিলেটের শাহজাল বিশ্ববিদ্যায়লে পড়াশুনা করেছি তাই আমি খুব ভালো করেই জানি যে বোরো ধানই সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর একমাত্র ধান। আমার নিজের বাবাও একজন কৃষক। ২০২২ সালেও সিলেটে প্রলয়ঙ্করী বন্যায় প্রায় ১৫০ জন মানুষ মারা যায়। প্রতিবছর বাংলাদেশ গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষ মারা যাচ্ছে গত ১০ বছর ধরে কালবৈশাখী ঝড়ের সময় বজ্রপাতের কারণে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর কোন বজ্রপাত পূর্বাভাস দেয় না। আমার নিজের পিএচইডি গবেষণার বিষয় কালবৈশাখী ঝড়। এই গবেষণা করতে গিয়ে আমি দেখতে পাই যে জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর রাডার থেকে প্রতি ১০ মিনিট পর-পর পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে ১ থেকে ৬ ঘন্টা পূর্বেই কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাত সম্বন্ধে বাংলাদেশের মানুষকে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। আমি জানতে পেরেছি যে বাংলাদেশ সরকার উদ্যোগ নিয়েছেন একটি মোবাইল ভিত্তিক বজ্রপাত সতর্কতা ব্যবস্হা চালুর করার জন্য। কিন্তু সেই প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হতে আরও সময় লাগবে। প্রতিদিন দেশের কোন না কোন জেলায় বজ্রপাতে মানুষ মারা যাচ্ছে। ফলে আমি আমার দেশ প্রেম ও সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে দেশের মানুষদের সাময়িক ভাবে নিজের অবসর সময়ে কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাত সম্বন্ধে নিজের ফেসবুকে ব্যাক্তিগত পর্যবেক্ষন শেয়ার করি। বানিজ্যিক ভাবে কোন তথ্য বা সেবা প্রদান করি না। ফেসবুকে তথ্য প্রদানের মাধ্যমে আর্থিক ভাবে কোন ভাবেই লাভবান হই না।    

আমি যেহেতু আবহাওয়া বিজ্ঞান বিষয়ে যে বিষয়ে ৩ টি মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করে বর্তমানে পিইচডি করতেছি তাই দেশের মানুষের ব্যাপক প্রাণহানি ঘটাতে পারে আবহাওয়া সম্পর্কিত এমন কোন কোন ঘটনার সময় পূর্ব থেকে সতর্ক করে দেই।  আমার ফেসবুক টাইমলাইনে আমি নিজস্ব মতামত প্রদানের অধিকার রাখি বলে মনে করি। যেকোনো দুর্যোগের ব্যাপারেই বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত দিয়ে থাকেন গণমাধ্যমে।  

অতীতে আমি বহুবার সঠিক পূর্বাভাস দিয়েছি, যার মাধ্যমে কৃষকের ফসল রক্ষা এবং জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাংলাদেশের মানুষের জীবন রক্ষা পেয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর স্থল ভাগে আঘাত করার পূর্বাভাস দিয়েছিল ২৫ শে অক্টোবর ভোর থেকে; যা ছিলও সম্পূর্ণ রূপে ভুল পূর্বাভাস। এই ভুল পূর্বাভাসের কারণে শত-শত মানুষের মৃত্যু হতে পারতো। আমি আমার আবহাওয়া বিজ্ঞান বিষয়ক অর্জিত জ্ঞানের আলোকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক জারিকৃত ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর পূর্বাভাসের গুরুতর এই ভুল ধরতে পেরে বাংলাদেশের গনমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে সরকারের কর্তৃপক্ষের কাছে সঠিক তথ্য পৌছাই যার কারণে ২৪ শে অক্টোবর বিকেল বেলা দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পূর্বাভাস সংশোধন করে। 

আমি যেহেতু প্রবাসে অবস্থান করছি, তাই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল ও দেশে স্থাপিত রাডার বা পর্যবেক্ষণের উপর অনেকাংশে নির্ভর করতে হয় কারণ বাংলাদেশ আব হাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যভাণ্ডারে আমার প্রবেশের সুযোগ নেই; ফলে কোন-কোন সময় কিছু পূর্বাভাস পুরোপুরি সত্য হয় না। পৃথিবীর কোন আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থার পূর্বাভাসই শতভাগ সঠিক হয় না। হওয়ার সুযোগও খুবই কম। 

সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে দেওয়া আমার পোস্টগুলোর একমাত্র উদ্দেশ্য হলও বাংলাদেশের মানুষের জান ও মাল রক্ষা করা। আমি আবহাওয়া বিজ্ঞান বিষয়ে অর্জিত আমার সর্বোচ্চ জ্ঞান দিয়ে তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের মানুষকে আবহাওয়া সম্পর্কিত প্রাণ ঘাতী ঘটনা গুলো সম্পর্কে সচেতন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি, কাউকে বিভ্রান্ত করার জন্য নয়। আমি যেহেতু একজন ব্যক্তি, কোনও প্রতিষ্ঠান নই, তাই আমার সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।  নিজের অর্জিত জ্ঞান ব্যবহার করে দেশের মানুষের প্রাণ ও সম্পদ রক্ষার চেষ্টা করাকে আমি অন্যায় মনে করি না। এবং আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য প্রচার কোন ভাবেই "বাংলাদেশের আবহাওয়া আইন-২০১৮" ভঙ্গ করে না। 

আমার ফেসবুক ওয়ালের মাধ্যমে আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য প্রচার যদি "বাংলাদেশের আবহাওয়া আইন-২০১৮" ভঙ্গ করে তবে একই আইন প্রতিদিনই ভঙ্গ করতেছে বাংলাদেশের সকল বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল। এমনকি আপনি যে  টেলিভিশন চ্যানেলে কর্মরত সেই বাংলা ভীষণও। কারণ ঘূর্ণিঝড় মোখার সময় বাংলাদেশের সকল বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল উন্ডি আপ থেকে ঘূর্ণিঝড় মোখার পূর্বাভাস প্রচার করেছে। বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিভিন্ন আবহাওয়া পূর্বাভাস আ্যপ ব্যবহার করে আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রচার করতেছে।’

(বি:দ্র: উপরের লেখাটি মোস্তফা কামাল পলাশের ফেসবুক থেকে হুবহু তুলে দেয়া। তাই এর ভাষাগত ও ভুল বানানের দায় শুধুমাত্রই তার)

বিভি/কেএস

মন্তব্য করুন: