• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিএনপি’র সমন্বয়হীতার কারণেই জোট ছাড়ছে শরিকরা

প্রকাশিত: ১৬:৪৮, ১০ অক্টোবর ২০২১

আপডেট: ১৬:৫৬, ১০ অক্টোবর ২০২১

ফন্ট সাইজ
বিএনপি’র সমন্বয়হীতার কারণেই জোট ছাড়ছে শরিকরা

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে দীর্ঘদিন ধরেই চরম অস্থিরতা চলছে। সঠিক মূল্যায়ন না পাওয়ায় বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শরিক দলের অনেক নেতা। অবহেলার অভিযোগ তুলে এই পর্যন্ত জোট ছেড়েছে সাতটি শরিক দল। সবশেষ পহেলা অক্টোবর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়লো জোটের একমাত্র নিবন্ধিত ইসলামী দল- খেলাফত মজলিস। এরপর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে, একের পর এক শরিক দলগুলো কেন বেরিয়ে যাচ্ছে। 

জোট নেতাদের অনেকে এজন্য বিএনপিকেই দায়ী করছেন। তাঁরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে শরিকদের সংগে প্রধান দল বিএনপি তেমন কোনও যোগাযোগ রাখছে না। দল হিসেবে যথাযথ মূল্যায়ন করছে না। রাজনীতির অনেক সিদ্ধান্তও নিচ্ছে এককভাবে; যা জোটের সম্পর্ককে অনেকটা কাগুজে সম্পর্কে পরিণত করেছে। যদিও বিএনপি নেতাদের দাবি, সরকার জোট ভাঙার চেষ্টা করছে। তাদের চাপেই ইতিমধ্যে কয়েকটি দল জোট ছেড়েছে। 

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, বেশ কয়েকটি কারণে ২০ দলীয় জোটের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, ২০ দলকে গুরুত্বহীন করে ২০১৮’র ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে আরেকটি জোট গঠন এবং ওই প্ল্যাটফর্মকে প্রাধান্য দেওয়া। মূলতঃ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে ২০ দলের সংগে বিএনপি’র গাঁটছড়া নড়বড়ে হতে শুরু করে। যা প্রকাশ্যে আসে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জোটের আসন-বণ্টন নিয়ে। তখন বিএনপি এই সমস্যা কৌশলে সামাল দিলেও নির্বাচনে ভরাডুবির পর দূরত্ব আরও বাড়তে থাকে। নির্বাচনের পর ঐক্যফ্রন্টের দু’জন এবং বিএনপি’র চারজন সংসদ সদস্য শপথ নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আন্দালিব রহমান পার্থ’র নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি। পরে ২০১৯-এর ৬ মে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির-বিজেপি’র জোটত্যাগের মধ্য দিয়ে এই প্ল্যাটফর্মের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট প্রকাশ্যে রূপ নেয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জোবাইদা নাসরিন মনে করেন, নির্বাচন যতোই ঘনিয়ে আসবে বিএনপি-জোট ভাঙার জন্য বিভিন্ন মহল তৎপর হয়ে উঠবে। বিশেষ করে সরকারের অব্যাহত চাপের কারণেই খেলাফত মজলিস বের হয়ে গেছে। দুই জোটের মধ্যে বিএনপি ব্যালেন্স তৈরি করতে না পারায় এই সুযোগটি সরকার নিয়েছে।

আরও পড়ুন:
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র হলেন উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট টিকবে নাঃ মঞ্জু

চলতি সপ্তাহে তৃতীয় ধাপের তফসিল, বাড়বে ইউপি`র সংখ্যা

তিনি বলেন, বিএনপি’র জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে আগামী নির্বাচনী প্রচার এবং জোটের ভাঙন ঠেকানো। অর্থাৎ দু’টো রাজনৈতিক দলের মধ্যে ভারসাম্য আনাই চ্যালেঞ্জ। বিএনপি যদি রাজনৈতিক মঞ্চে নিজের মতো করে ফিরে আসতে চায় তাহলে দু’টো রাজনৈতিক জোটকে সমান গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

১৯৯৯-এর ৬ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জামায়াতের তৎকালীন আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম এবং ইসলামী ঐক্যজোটের তখনকার চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হককে সংগে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠনের ঘোষণা দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর ২০১২’র ১৮ এপ্রিল কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অডিটোরিয়ামে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। পর্যায়ক্রমে কাজী জাফর আহমেদের জাতীয় পার্টি ও সাম্যবাদী দল যোগ দিলে তা ২০ দলীয় জোটে পরিণত হয়। 

২০১৪-তে এসে জোটের ছন্দপতন ঘটে। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যায় শেখ শওকত হোসেন নিলু’র নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি। প্রয়াত নীলু ওই সময় অভিযোগ করেছিলেন, বিএনপি ২০ দলীয় জোটের শরিকদের উপর সব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়। ওই সময় অবশ্য এনপিপি’র একটি অংশ জোটে থেকে যায়। ২০১৬’র জানুয়ারিতে জোট ছেড়ে যায় প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনী’র ইসলামী ঐক্যজোট। ২০১৮’র ১৬ অক্টোবর জেবেল রহমান গানি’র নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ ও খন্দকার গোলাম মোর্তুজার নেতৃত্বাধীন এনডিপি জোট থেকে বেরিয়ে যায়। তবে একই নামে এসব সংগঠনের একটি অংশ থেকে যায় ২০ দলীয় জোটে। ২০২১-এ কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক প্রভাবশালী ইসলামী দল জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম এবং খেলাফত মজলিসও জোট থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। তাদের অভিযোগ ছিলো- শরিকদের সঠিক মূল্যায়ন না করার।

প্রতিষ্ঠাকালীন যে চারটি দল নিয়ে জোটবদ্ধ রাজনীতির শুরু হয়েছিলো তাদের মধ্যে জামায়াত ছাড়া সবাই বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করেছে। অনেক আগেই জোট ছেড়েছে এরশাদের জাতীয় পার্টি, শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক-এর খেলাফত মজলিস ও মুফতি আমিনী’র ইসলামী ঐক্যজোট।

আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর থেকে ২০ দলীয় জোট স্থবির হয়ে পড়েছিলো। এরপর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হলে ২০ দলীয় জোটের শরিকদের মূল্যায়ন অনেকাংশে কমে গেছে। এছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের সংগে সংলাপে ঐক্যফ্রন্ট শরিকরা থাকলেও ২০ দলীয় জোটের কোনও শরিককে নেওয়া হয়নি। অথচ ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর নেতারাই আন্দোলনে ছিলেন। মামলাও হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। আবার যেই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে, সেই নির্বাচনে এমপি হয়ে সংসদে যাওয়ার বিষয়েও শরিকদের রাখা হয়েছে আড়ালে। সব মিলিয়ে দুই জোটের মধ্যে বিএনপি সমন্বয় করতে পারেনি।

এলডিপি’র সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বলেন, জোটে যেহেতু একে অন্যের সংগে দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছে, অনেকের মধ্যে হতাশা কাজ করছে এবং ভবিষ্যৎ ভালো দেখছেন না। তাই ঘনঘন বৈঠক হলে সবাই সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে পারতেন এবং সমাধান পাওয়া যেতো।

জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ২০ দলীয় ঐক্যজোট ভেঙে গেলে সেটা বিএনপি’র জন্যই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হবে। বড় পার্টি সব সময় বড় ভাইয়ের চরিত্র প্লে করে, দলসুলভ মনোভাব দেখায় না। 

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মনে করেন, যথাযথ মূল্যায়ন না পাওয়ায় দলগুলো চলে যাচ্ছে-ব্যাপারটা এমন নয়। সবচেয়ে বড় কারণ সরকারের পক্ষ থেকে দলগুলোর প্রতি চাপ। এছাড়া দলগুলোর মধ্যে বিরোধ রয়েছে। একটি অংশ চলে গেলেও আরেকটি অংশ বিএনপির সংগে রয়েছে। তিনি বলেন, ইসলামী দলগুলোর নেতারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মসজিদের ইমাম কিংবা মাদ্রাসার শিক্ষক। তাঁরা পেশা ধরে রাখার জন্য অনেক সময় বাধ্যও হন এমন সিদ্ধান্ত নিতে।

বিভি/এনএম

মন্তব্য করুন: