চলচ্চিত্রে ৭ মার্চের ভাষণ

৭ মার্চকে বাঙালি জাতি স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের দিন হিসাবে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’-এর অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আপোষহীন বজ্রকণ্ঠ নিঃসৃত ভাষণ বাঙালিকে পথ দেখিয়েছে। এই ভাষণকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে পাঠ্যপুস্তকে। দিবসে দেখানো হয় বড় পর্দায়। দেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সিনেমা নির্মিত হয়েছে। কোনো কোনো সিনেমায় সংযোজিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ।
গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এবং ভাষণের বিভিন্ন অংশ সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছে।
‘আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোকদের উপর হত্যা করা হয়, তোমাদের প্রতি আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে’ অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী চলচ্চিত্রের ১ ঘণ্টা ৩ মিনিট ২০ সেকেন্ডে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চ ভাষণের এ দৃশ্য সংযোজিত হয়েছে। এছাড়া ১ ঘণ্টা ৮ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পুনরায় ৭ মার্চ ভাষণের অংশবিশেষ সংযোজন করা হয়েছে।
‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।’
এছাড়াও অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী চলচ্চিত্রের কিছু কিছু জায়গায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ছটা সংযোজিত করা হয়েছে। সিনেমার শুরুতে শিল্পী ও কলাকুশলীদের নামের পরে কোমরে কলসি, চুল ছেড়ে দেয়া এক নারীকে দেখানো হয়। ব্যাকগ্রাউন্ডে স্লোগান ভেসে আসে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ। জয় বাংলা, জয় বাংলা। চলচ্চিত্রের ৬ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে গিয়ে এ স্লোগান প্রদর্শন করা হয়। তিন মিনিট পর ৯ মিনিট ৫ সেকেন্ড বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে স্লোগান ভেসে আসে ‘জয় বাংলা জয় বাংলা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ।
[caption id="attachment_77200" align="aligncenter" width="773"] "ওরা ১১ জন" সিনমায় সংযোজিত বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্ক্রিনশর্ট[/caption]
ওরা এগারোজন চলচ্চিত্রের ১৪ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের সময় মিছিলের দৃশ্য সংযোজিত হয়েছে। শোনা যায়, ‘জয় বাংলা, জয় বাংলা,’ ‘তোমার নেতা আমার নেতা, শেখ মুজিব শেখ মুজিব। এছাড়া চলচ্চিত্রের ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডে গিয়ে ‘জয় বাংলা; তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব শেখ মুজিব; স্লোগানগুলির সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে।
৩৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের শাহ ওয়ালিদ আকরাম ও প্রিয়াঙ্কা আচার্যের প্রামাণ্যচিত্র ‘সেই কণ্ঠস্বর’-এ সংযোজিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। সেই সাথে যারা বঙ্গবন্ধুর সাহচর্যে ছিলেন তাদের ও মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে প্রামাণ্যচিত্রটিতে।
সূচন্দা, নূতন, হাসান ইমাম অভিনীত চাষী নজরুল ইসলামের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় সংগ্রাম চলচ্চিত্রের শুরু হয় মিছিল ও স্লোগান দিয়ে। ‘জয় বাংলা। জয় বাংলা। তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ। তোমার নেতা আমার নেতা, শেখ মুজিব শেখ মুজিব। তোমার নেতা আমার নেতা, শেখ মুজিব শেখ মুজিব। চলচ্চিত্রটিতে ২ ও ১২ মিনিটে জয় বাংলা উচ্চারিত হয়। সব কথার শেষ কথা বাংলার স্বাধীনতা। জয় বাংলা জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয় বড় পর্দা।
আলমগীর কুমকুম এর পরিচালনায় রাজ্জাক, কবরী অভিনীত আমার জন্মভূমি চলচ্চিত্রের ১ ঘণ্টা ২৪ মিনিটে সেকেন্ডের সময় মিছিল দেখানো হয়েছে। মিছিলের স্লোগানে বলা হয় ‘জয় বাংলা জয় বাংলা। তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব শেখ মুজিব।’
১৯৯৪ সালে হুমায়ুন আহম্মেদ পরিচালিত আগুনের পরশমণি সিনেমার শুরুতেই আবুল হায়াত হাতে রেডিও নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত স্বাধীনতার ভাষণটি শোনেন। শাহ আলম কিরণের পরিচালনায় ৭১-এর মা জননী সিনমার শুরুতেই যুক্ত করা হয়েছে ৭ মার্চের ভাষণ। মুশফিকুর রহমান গুলজারের পরিচালনায় লাল সবুজের সুর সিনেমার প্রথম দুই মিনিট পরই যুক্ত করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। মোরশেদুল ইসলামের পরিচালনায় আমার বন্ধু রাশেদের সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ।
[caption id="attachment_77203" align="aligncenter" width="686"] মাসুদ পথিক, চলচিত্র পরিচালক[/caption]
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার প্রাপ্ত পরিচালক মাসুদ পথিক বলেন, সম্প্রতি তিনি তার একটি স্বল্পদৈর্ঘে ৭ মার্চের ভাষণ সংযুক্ত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী জাতীয় চলচিত্র-তথ্যচিত্র উপকমিটির এই সদস্য জানান, জাতির জনকের জন্মশত বার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধু ও ৭ মার্চের ভাষণকে ঘিরে অনেক কাজ চলমান রয়েছে।