• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

মধুপুরে মন্দায় আনারসের বাজার

আতাউর রহমান আজাদ, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ১৭:৩১, ২৬ আগস্ট ২০২৩

ফন্ট সাইজ
মধুপুরে মন্দায় আনারসের বাজার

বাজারে মৌসুমী ফলের প্রভাব, ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগের কারণে ভোক্তাদের আনারস কেনায় অনাগ্রহ ও স্থানীয় সিন্ডিকেটের কারণে আনরসের দাম কমে গেছে। বিগত তিন মৌসুমের চেয়ে এবার আনারসের দাম কমে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা।

স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়িরা জানান, করোনাকালে ভেষজ ওষুধ মনে করে ভোক্তারা প্রচুর পরিমাণে আনারস কিনেছেন। দামও ছিল চড়া। প্রতিটি আনারস ৬০-৭০টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। চলতি সময়ে বাজার একেবারেই মন্দা। পাইকারি বাজারে প্রতিটি আনারস সাইজ ভেদে এখন ১০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পরবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সরেজমিনে জানা যায়, মধুপুরের ৮টি ইউনিয়নের বিশাল এলাকা জুড়ে উৎপাদিত আনারস পাইকারি কেনা-বেচা হয় জলছত্র কৃষি মার্কেট ও গারোবাজারে। এই দুইটি বাজারে প্রতিদিন কোটি টাকার আনারস বিক্রি হয়ে থাকে। বাজারে ঘুরে দেখা যায় সাইকেল, রিকশা, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, ভ্যান বোঝাই করে আনারস বাজারে নিয়ে আসছেন কৃষকরা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ব্যবসায়িরা আনারস কিনছেন। অনেক কৃষক আনারস বিক্রির জন্য ক্রেতার অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছেন। শ্রমিকরা পাইকারদের কেনা আনার ট্রাকে বোঝাই করছেন।

মধুপুরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, মধুপুরের অন্যতম অর্থকরী ফসল হলো আনারস। এই অঞ্চলে হানিকুইন, জায়ান্ট কিউ এবং এমডি-২ জাতের আনারস আবাদ হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে এই উপজেলার ৬ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। তম্মধ্যে ৪ হাজার ৮৮ হেক্টরে জায়ান্ট কিউ, ২ হাজার ৭৪০ হেক্টরে  হানিকুইন এবং এমডি-২ জাতের আনারস আবাদ হয়েছে ১২ হেক্টর জমিতে। এবার আনারসের উৎপাদন ভালো হলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় দাম একটু কম।

গারোবাজারের আনারস চাষি রাজিবুল হাসান রিয়াজ জানান, তিন বিঘা জমিতে বর্গা চাষি ১৯ হাজার আনার চারা রোপন করেছিলেন। আড়াই লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করে বছর শেষে লস গুনতে হয়েছে। এই বাগানের উৎপাদিত আনারস বিক্রি করে সাড়ে ছয় হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।

গারোবাজারে ছাতা মাথায় আনারস বিক্রি করতে দেখা যায় ষাটোর্ধ্ব শামছুল হককে। তার বাড়ি মধুপুর উপজেলার মুরাইদ গ্রামে। তিনি জানান, আনারসের জমি চাষ করা, চারা ক্রয়, নিড়ানি, সার দেওয়া, আনারস ভেঙ্গে সংগ্রহ করা, বাজারে নেওয়া পর্যন্ত প্রতিটি আনারস উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে ১৪-১৫ টাকা। ওই দামে বিক্রিও করতে পারছেন না তিনি।

মহিষমারা গ্রামের মজিবর রহমান মুক্তি বলেন, চলতি মৌসুমে আনারসের দাম গত বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। মৌসুমী ফলের প্রভাব, ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারে ভোক্তাদের আনারস ক্রয়ে অনাগ্রহের কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর যে আনারসের দাম ছিল ৩৫-৪০ টাকা সেই আনারস এবার বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। ফলে লাভের মুখ দেখা দায় হয়ে পড়েছে কৃষকদের।

খুলনার বাগেরহাট এলাকার ব্যবসায়ি তপন সাহা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মধুপুর থেকে আনারস কিনে নিয়ে ব্যবসা করি। চলতি মৌসুমে আনারসের দাম একটু কম। ২৫-৩০ টাকা দরে দুই হাজার আনারস কিনেছি। চাহিদা একটু কম থাকায় বেশি পরিমাণ কিনতে সাহস পাইনি।

কৃষক ছানোয়ার হোসেন বলেন, আনারসে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগের ফলে অনেকেই আনারস কিনতে ভয় পায়। বর্তমানে অনেকে বিষমুক্ত রাসায়নিক মুক্ত আনারস চাষ শুরু করলেও ভোক্তা কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে আনারস চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আনারসের আবাদও কমে যাবে।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, মৌসুমী ফলের আধিক্যের কারণে আনারসের চাহিদা একটু কম ছিল। বর্তমানে আবার চাহিদা ও দাম দুই বাড়তে শুরু করেছে। আর একটু বাড়লেই কৃষকরা লাভের মুখ দেখতে পাবেন।


 

বিভি/রিসি

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2