বাহারি টিউলিপে রঙ্গিন তেঁতুলিয়া(ভিডিও)
নেদারল্যান্ড, কাশ্মীর, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক নয় ভিনদেশী ফুল ‘টিউলিপ’ ফুটেছে শীত প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। উৎপাদিত হচ্ছে বাহারি রঙ্গের এই ফুল। একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে গত বছর স্থানীয় ৮ জন কৃষকের ৪০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামুলক এই ফুল চাষ করা হয়। গত বছরের সাফল্য দেখে এ বছর ২০ জন নারী উদ্দ্যোক্তা তাদের ১০ শতক করে দুই একর আবাদী জমিতে গড়ে তোলেন টিউলিপ বাগান। গত বছর ছয়টি প্রজাতির ১২ কালারের টিউলিপ চাষ করা হলেও এবার ১০ প্রজাতির ফুল চাষ করা হয়েছে।
এই ফুলের বীজ নেদাল্যান্ড থেকে আনা হয়েছে। এই ফুলের চারা রোপনের ১৮ দিনের মধ্যে কলি বের হয় এবং ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে ফুল ফুটে। সব মিলিয়ে ৭৫ থেকে ৮০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এবার এক কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করা হচ্ছে। টিউলিপ বাগান বেশ সাড়া জাগিয়েছে। লাল, সাদা, হলুদ, কমলাসহ ভিন্ন ভিন্ন রং এর টিউলিপ ফুল দেখে মুগ্ধ পর্যটকরা। দেশ বিদেশের অনেক পর্যটক ফুল দেখতে যান, কেনেনও কেউ কেউ।
পল্লী কর্মসংস্থান ফাউন্ডেশনের সহযোগীতায় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইকোসোসাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ( ইএসডিও) এর তত্ত্ববধানে নেদারল্যান্ড থেকে আনা ১ লক্ষ বাল্ব ক্ষুদ্র চাষি পর্যায়ে দুই একর জমিতে রোপন করা হয়। ১০ টি প্রজাতির ১০ টি কালারের টিউলিপ চাষ করা হয়। টিউলিপ ফুল চাষের ক্ষেত্রে দিনের বেলা ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং রাতে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়। আর এই পরিমান তাপমাত্রা পঞ্চগড়ে শীত কালে দীর্ঘদিন বিরাজ করে।
তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়ায় মঙ্গলবার(৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে টিউলিপ বাগানটি দর্শক ও পর্যটকদের জন্য উম্মক্ত করে দেয়া হয়। আগে থেকে অপেক্ষায় থাকা র্দশক ও পর্যটকরা সেখানে টিউলিপ দেখতে ভিড় করেন। বানিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে তোলা টিউলিপ বাগান থেকে অনেকে ফুল কিনেন।
টিউলিপ ফুলচাষ প্রকল্পের সমন্বয়কারি আইনুল হক বলেন, গত বছর এই টিউলিপ ফুল বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। দেশ বিদেশের অনেক পর্যটক ফুল দেখতে এসেছিলেন। এবার একটু বড় পরিসরে বানিজ্যিকভাবে ২০ জন প্রান্তিক কৃষকের ১০ শতক করে দুই একর জমিতে ১০ প্রজাতির টিউলিপ ফুলের চারা রোপন করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বড় পরিসরে টিউলিপ চাষ উত্তরবঙ্গের তেঁতুলিয়ায় প্রথম। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর নিচে থাকা আবহাওয়া এই ফুল চাষের উপযোগি। সেক্ষেত্রে উত্তরের এই উপজেলায় দীর্ঘ্য সময় শীত থাকে। এরকম শীতপ্রবণ এলাকায় টিউলিপ ফুল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
ইকো সোস্যাল ডেভলেভমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) এর পরিচালক (প্রশাসন) ড.সেলিমা আখতার বলেন, সাধারণ ফসলে আমরা যে খাদ্য উৎপাদন করি, সেই ক্ষেতেই আমরা টিউলিপ ফুল চাষ করছি। এটা স্বল্প সময়ে চাষযোগ্য একটি কৃষিপন্য। এই ফুলের চারা রোপনের ১৮ দিনের মধ্যে কলি বের হয় এবং ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে ফুল ফুটে। তাই সেই জমিতে কিন্তু কৃষকরা অন্য কৃষিপন্যও সঠিক সময়ে উৎপাদন করে থাকেন। একজন মানুষের খাদ্য চাহিদার পাশাপাশি মনে খোড়াকও দরকার। ফুল একটি মনের খোড়াক বলে আমরা মনে করি। এছাড়া দেশে ফুলের বাজারও প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই ফুল বাজারজাত করে কৃষকরা অতি দ্রুত লাভবান হচ্ছেন।
মন্তব্য করুন: