‘জুয়ার টাকা ও বিয়ে নিয়ে আপসেট ছিলেন অভিনেত্রী হোমায়রা হিমু’

ছবি: অভিনেত্রী হোমায়রা নুসরাত হিমু (বায়ে) ও কথিত প্রেমিক উরফি (ডানে)
অনলাইনে জুয়া খেলার অ্যাপ ‘বিগো লাইভ’-এ গত দুই থেকে তিন বছর ধরে প্রায় ২১ লাখ টাকা খুইয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন অভিনেত্রী হোমায়রা নুসরাত হিমু। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রেমিক মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রুফি ওরফে উরফি’র সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও মনোমালিন্য হতো। রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসায় অভিনেত্রী হোমায়রা নুসরাত হিমুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় কথিত প্রেমিক উরফি র্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দেন।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কাওরান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় হিমুর খালা বাদী হয়ে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় রুফি ওরফে উরফিকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী রুফিকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান খন্দকার আল মঈন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে খন্দকার আল মঈন জানান, ২০১৪ সালে হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে রুফির বিয়ে হয়েছিলো। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে পারিবারিক সমস্যার কারণে তাদের বিচ্ছেদ হয়। আত্মীয়তার সুবাদে রুফির সঙ্গে হিমুর পরিচয় হয়। খালাতো বোনের সঙ্গে রুফির বিচ্ছেদ হলেও তার সঙ্গে হিমুর নিয়মিত যোগাযোগ ছিলো।
র্যাবকে রুফি জানান, বিচ্ছেদের পরে তিনি আরেকজনকে বিয়ে করলেও হিমুর সঙ্গে বিভিন্নভাবে নিয়মিত যোগাযোগ ছিলো। প্রায় চার মাস আগে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে তিনি হিমুকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়মিত তার বাসায় যাতায়াত শুরু করেন।
রুফি জানান, বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি হিমুর উত্তরার বাসায় যান। পরে অনলাইন জুয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হিমুর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। একপর্যায় হিমু ভাঙচুর করেন। বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে রুমের বাইরে থেকে একটি মই এনে রুমে ঢুকে পড়েন হিমু। রুমের সিলিং ফ্যানে আগে থেকেই বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবেন বলে হিমু জানান।
আগেও কয়েকবার আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে এবারও হিমুর কথায় পাত্তা দেননি, দাবি করেন রুফি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তিনি দেখতে পান হিমু সত্যি সত্যি গলায় ফাঁস নিয়েছেন। তখন হিমুকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এসময় তিনি পাশের রুমে থাকা হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনেন। পরে মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বঁটি এনে রশি কেটে তাকে নিচে নামান।
রুফি, বাসার দারোয়ান ও মিহির মিলে হিমুকে বাসা থেকে রাজধানীর উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
র্যাব জানায়, রুফি ‘ও’ লেভেল শেষ করে টেক্সটাইল কেমিক্যালের ব্যবসা করতেন। ঘটনার দিন হিমুকে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করার পরে তিনি হিমুর ব্যবহৃত দুটি আইফোন ও গাড়ি নিয়ে দ্রুত হাসপাতাল থেকে চলে যান। পরে হিমুর গাড়ি তার উত্তরার বাসার পার্কিংয়ে রেখে দেন তিনি। এরপর মোবাইল ফোন দুটি বিক্রির উদ্দেশ্যে রাজধানীর বংশাল এলাকায় পালিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়। তবে কেনো হিমুর ফোন বিক্রির চেষ্টা করেছিলেন তা জানাননি রুফি।
বিভি/এমআর
মন্তব্য করুন: