• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর কাছে জিম্মি ছিল হাতিয়ার ৭ লাখ মানুষ

প্রকাশিত: ১৮:৩০, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ২১:০৮, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ফন্ট সাইজ

হাতিয়া দ্বীপ থেকে নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ডে যেতে নৌ পথের দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। কিন্তু এইটুকু পথ যেতে স্পিটবোটে ভাড়া নেওয়া হতো জনপ্রতি ৫শ টাকা। স্পিডবোটের বিকল্প হিসেবে আছে কয়েকটি ট্রলার। এখানেও ভাড়া নেওয়া হতো প্রয়োজনের তুলনায় দ্বিগুন। অথচ এই পথে স্বল্প ভাড়ায় নিরাপদ যাতায়াতের জন্য ছিল সরকারি সি ট্রাক। মানুষকে জিম্মি করে ব্যবসা করতে যা বন্ধ করে দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই পথসহ হাতিয়ার সকল নৌ পথে জনপ্রতি ভাড়ার অর্ধেকই দিয়ে দিতে হতো তাকে।

দ্বীপ হাতিয়ার অবস্থান একেবারে বঙ্গোপাগরের বুকে। তাই ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভাঙাগড়া এখানে লেগেই থাকে। কোথাও নদী ভাঙনে সব হারায় মানুষ। কোথাও জেগে ওঠে নতুন চর। কিন্তু ভূমিহীনদের বিপরীতে নতুন সেই চর অবৈধভাবে দখল করে নিতো মোহাম্মদ আলীর লাঠিয়াল বাহিনী। চর দখল ছাড়াও ভূমিহীনদের জন্য সরকারি বরাদ্দের শত শত একর জমিও নিজেদের নামে করে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতা ও তার অনুসারীরা। হাতিয়া অঞ্চলে সমুদ্রে মাছ ধরতেও চাঁদা দিতে হতো মোহাম্মদ আলী বাহিনীকে।

স্থানীয়রা বলছেন, দ্বীপ হাতিয়ায় একচ্ছ্বত্র আধিপত্য ছিল মোহাম্মদ আলীর। এখানকার রাজনীতির রন্দ্রে রন্দ্রে যেমন ছিল তার নিয়ন্ত্রণ তেমনি মানুষের জীবনযাত্রা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যও চলতো না তার আশির্বাদ ছাড়া। মোহাম্মদ আলীকে জমা-খরচ না দিয়ে এই দ্বীপে বাঁচার সুযোগ ছিল না কোনো মানুষেরই। হাতিয়ায় তার প্রভাব এতই ছিল যে, কথিত আছে- তার কথা ছাড়া সমুদ্রের ঢেউও নাকি আসার সাহস করতো না হাতিয়ার দিকে।

মোহাম্মদ আলী ১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম সংসদে প্রবেশ করেন জাতীয় পার্টির হাত ধরে। ৮৮’র নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন। এক পর্যায়ে জাতীয় পার্টি ছেড়ে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। কিন্তু ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন না দিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জিতে আসেন মোহাম্মদ আলী। কিন্তু ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে হারিয়ে বিজয়ী হন বিএনপি নেতা মোহাম্মদ ফজলুল আজিম। এই মেয়াদে ফজলুল আজিম এমপি হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবে দ্বীপে আধিপত্যবাদ ধরে রাখেন মোহাম্মদ আলী। নির্বাচিত সংসদ সদস্যকেও এলাকায় প্রবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। মূলত বন উজাড় করে জায়গা বিক্রি, নদীতে মাছের নৌকাপ্রতি চাঁদা আদায়, চরের কৃষকদের ফসল লুট আর চাঁদার ভাগের টাকা অল্প সময়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ বানিয়ে দেয় মোহাম্মদ আলীকে। এই টাকার বিনিময়ে পালিত লাঠিয়াল বাহিনী আর আওয়ামী লীগের পদই ছিল তার ত্রাসের রাজত্বের প্রধান শক্তি। 

শেখ হাসিনা নিয়ন্ত্রিত একতরফা ভোটের দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউসকে নৌকা প্রতীকে বানান সংসদ সদস্য। কাগজে কলমে আয়েশা ফেরদাউস এমপি হলেও মূলত হাতিয়া শাসন করেছেন মোহাম্মদ আলীই। সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়ে এমপি হন মোহাম্মদ আলী নিজেই, ফিরে পান ক্ষমতার মসনদ। স্ত্রী-সন্তানকে পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী বানিয়ে ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ছেলেকেও বানান হাতিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান। আরও পোক্ত করতে থাকেন নিজের সিংহাসন। তবে এই মাফিয়ার গডমাদার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পতন হতে থাকে মোহাম্মদ আলীর ত্রাসের রাজত্বে। তবে দেশের সব এমপি-মন্ত্রিরা পালালেও ত্রাস সৃষ্টি করে শেষ পর্যন্ত হাতিয়া দখলে রাখতে চেয়েছিলেন মোহাম্মদ আলী। তাকে ধরার সাহস করছিলো না পুলিশেরও। তবে গণপ্রতিবাদের মুখে এক পর্যায়ে তাকে আটক করতে বাধ্য হয় নৌবাহিনী। তাতেও শান্তি ফেরেনি হাতিয়ায়, মোহাম্মদ আলী জেলে থাকলেও গত ৫ ফেব্রুয়ারি হাতিয়াতে জনতার ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে তার রেখে যাওয়া সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে।

শিগগিরই তার দখল করা সব সম্পত্তি জনতাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে এবং সকল অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হবে এমনটাই চাওয়া হাতিয়াবাসীর।

বিভি/এআই

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2