ঘোড়ায় চড়ে কবর খুড়তে যাওয়া সেই মনু মিয়া আর নেই

বিনা পারিশ্রমিকে ৩ হাজারের বেশি কবর খনন করা সেই মনু মিয়া ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহে রাজিউন)। শনিবার (২৮ জুন) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্দি ইউনিয়নের আলগা পাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এর আগে দীর্ঘদিন তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মনু মিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জয়সিদ্দি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম।
জানা যায়, দুই ভাই ও তিন বোনের সংসারে মনু মিয়া ছিলেন তৃতীয়। কবর খোঁড়ার কাজে বাহন হিসেবে এ পর্যন্ত তিনি ১৪টি ঘোড়াও কিনেছেন। আর এ জন্য বিক্রি করতে হয়েছে তার পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি। সম্পত্তি বন্ধক দিয়েই চলছিল নিঃসন্তান মনু মিয়ার সংসার ও কবর খোঁড়ার কাজ। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কবর খোঁড়ার কাজ করতে খুন্তি-কোদাল বস্তায় ভরে ঘোড়ায় চড়ে তিনি পৌঁছে যেতেন। কবর খোঁড়ার সেই নিখুঁত কারিগর আজ তার নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
স্থানীয়রা জানান, একজন সুদক্ষ গোরখোদক হিসেবে মনু মিয়ার সুনাম রয়েছে দুর্গম হাওর উপজেলা ইটনা, মিঠামইন, শাল্লা, আজমিরীগঞ্জসহ পাশের এলাকায়। এছাড়া রাজধানীর বনানী কবরস্থানসহ দেশের নানা প্রান্তে তার সুনাম রয়েছে। শুধু কবর খনন করেই ক্ষান্ত হন না মনু মিয়া। এ পর্যন্ত যাদের কবর খুঁড়েছেন তাদের মৃত্যুর দিন তারিখ সব লিখে রেখেছিলেন নিজের ডায়েরিতে। দূরের যাত্রায় দ্রুত পৌঁছাতে নিজের ধানী জমি বিক্রি করে বেশ কয়েক বছর আগে কিনেছেন ঘোড়াটি। সেই ঘোড়ার পিঠে তিনি তুলে নেন তার যাবতীয় হাতিয়ার-যন্ত্র। সেই ঘোড়ায় সওয়ার হয়েই শেষ ঠিকানা সাজাতে মনু মিয়া ছুটে চলতেন গ্রাম থেকে গ্রামে। তবে সে ঘোড়াটিও মারা যায় এ বছর ১৬ মে।
জয়সিদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বাহাউদ্দিন ঠাকুর বলেন, ঘোড়ার মৃত্যুর পর থেকেই মনু মিয়া শারীরিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়েন। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে এলেও আর আগের মতো হয়ে ওঠেননি। তার মৃত্যুতে আমরা একজন দয়ার সাগর, নিঃস্বার্থ মানুষকে হারালাম। এমন মানুষের অভাব কখনো পূরণ হওয়ার না। আল্লাহ উনাকে বেহেশতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুক আমিন।
উল্লেখ্য, কবর খুঁড়ে তিনি পার করে দিয়েছেন তার ৬৭ বছরের জীবনের সুদীর্ঘ ৪৯টি বছর। কোনো ধরনের পারিশ্রমিক কিংবা বখশিস না নিয়ে এ পর্যন্ত খনন করেছেন ৩ হাজার ৫৭টি কবর।
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: