হট্টগোলে ভেস্তে গেছে ওএমএস ডিলার নিয়োগে উন্মুক্ত লটারি

কুষ্টিয়ায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচীর অংশ হিসেবে খোলাবাজারে বিক্রয় (ওএমএস) ডিলারশীপ নিয়োগের বাছায় পদ্ধতির উন্মুক্ত লটারী ভেস্তে গেছে। নির্বাচন নিয়ে ডিসি অফিসে হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সম্মেলন কক্ষে
ডিলার নির্বাচনে অনুষ্ঠিত উন্মুক্ত লটারি চলাকালীন সময়ে সেখানে সমবেত আবেদনকারীদের মধ্যে সৃষ্ট হট্টগোলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠায় একপক্ষ সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। এমন অস্থির পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসক উন্মুক্ত লটারির কার্যক্রম স্থগিত করে সভাস্থল থেকে বেড়িয়ে যান। এসময় সেখানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, আবেদনকারী, সাংবাদিকহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া পৌর এলাকাধীন ২১টি ওয়ার্ডে পূর্বের ডিলারদের কার্যাদেশ শেষ হয়ে যাওয়ায় চলতি অর্থ বছরে নতুন করে ডিলার নিযুক্তে আগ্রহীদের আবেদন আহ্বান করা হয়। সেখানে ২শ ১৮ জন আগ্রহী আবেদন করেন। এসময় আবেদন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে যাচাই-বাছাইয়ের পরে ১শ ১টি আবেদন বাতিল করা হয়। এর মধ্যে ১৫ নং ওয়ার্ড থেকে যথাযথ শর্ত পূরনসহ সঠিকভাবে আবেদন না পাওয়ায় সেটি স্থগিত রাখা হয়। অবশিষ্ট ২০ টি ওয়ার্ডের জন্য ১শ ১৬টি আবেদন থেকে মনোনীত করার লক্ষ্যে উন্মুক্ত লটারি কার্যক্রম গ্রহন করা হয়। বিষয়টি আগে থেকেই জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে ফোন কল অথবা খুর্দে বার্তার মাধ্যমে সময় এবং স্থান জানিয়ে দেয়া হয়।
নির্ধারিত সময়ে শুরু হওয়া লটারির কার্যক্রমের মধ্যেই ২নং ওয়ার্ডের লটারির জন্য বাছাইকৃত ৬ জনের ঘোষনা করতেই জেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আব্দুল হাকিম মাসুদ অভিযোগ করেন ২ নং ওয়ার্ডের ৬ জনের মধ্যে ৪ জনই আওয়ামী লীগের লোক; এখানে এরা থাকলে আমরা এই লটারি মানি না’।
একই ভাবে শহর ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান পলাশ অভিযোগ করেন, ‘এখানে বাছায় প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি। একটা সুক্ষ কারচুপির মাধ্যমে নিজেরদের পছন্দের আবেদনকারীদের বাছায় করে রাখা হয়েছে’। এখানে ফ্যাসিবাদি আওয়ামী লীগের দোসরদের ঢোকানো হয়েছে আমরা এই কার্যক্রম মানি না’।
এরপরই গোটা হলরুমে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী সমর্থকরা চিৎকার চেচামেচি হট্টগোল শুরু করেন এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে সম্মেলন কক্ষ থেকে বেড়িয়ে যাওয়া শুরু করে। এসময় জেলা প্রশাসক মো: তৌফিকুর রহমান মাইক্রোফোনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে তিনি নিজেই সম্মেলন কক্ষ ত্যাগ করেন।
তবে আবেদনকারীদের মধ্যে কারা আওয়ামী লীগ বা দোসর আছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে আন্দোলনকারীরা কোন সদুত্তোর দেয়নি। তারা সঠিক বাছায়ের মাধ্যমে পুনরায় লটারির দাবি জানান।
তবে কয়েকজন আবেদনকারী নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে জানান,‘যেভাবে স্বচ্ছ লটারি প্রক্রিয়ায় ডিলার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ছিলো তাতে হয়তো রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের নিজ ইচ্ছা মতো ডিলারশীপ ছিনিয়ে নেয়ায় ছেদ ঘটতে পারে সে কারনেই তারা হট্টগোল করে আজকে এই লটারী কার্যক্রম ভেস্তে দিলো।
লটারি কার্যক্রমে উপস্থিত থাকা শহর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোকসেদুল হক কল্লোল বলেন, আমার বাড়ি ৩ নং ওয়ার্ডে। ২ ও ৩ নং ওয়ার্ড পাশাপাশি। এখানে আওয়ামী লীগের কেউ যদি থেকে থাকতো তাহলে অবশ্যই আমি তাদের চিনতাম। কই আমার চোখে তো কাউকে দেখি না’। আমরা পুনরায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উন্মুক্ত লটারির মাধ্যমে ডিলার নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো.তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘স্বচ্ছতার সাথে নিয়মানুযায়ী উন্মুক্ত লটারির মাধ্যমে ওএমএস ডিলার নির্বাচন করা হচ্ছিলো। আবেদনকারীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেউ ছিলো এমন কোন তথ্য আমাদের জানা নেই। আগে থেকেও কেউ সুনির্দিষ্ট কোন সত্যসহ অভিযোগ করেনি’। যারা এসব বলছে তাদের অভিযোগ সঠিক নয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অবহিত করা হয়েছে পরবর্তী নির্দেশনা পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: